এ মাটির আদি সন্তান কৃষকের আনন্দে শামিল হতে মাগুরার কাতলী থেকে থেকে এসেছেন সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ লাঠিয়াল দলের বাহিনীটি।
শুক্রবার ফাল্গুনের পড়ন্ত বিকেলে তারা ঐতিহ্যবাহি লাঠিখেলা প্রদর্শন করেন যশোর সদরের গহেরপুরস্থ খাজুরা এমএন মিত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে। লাঠিতে তুলে আনা জাদুর পরশে এতদঞ্চলের কৃষক, তাদের স্কুল-কলেজপড়–য়া ছেলেমেয়ে, বধূরাও ভিড় করেন প্রদর্শণের পাশ ঘিরে।
ঘুম থেকে উঠে মাঠে গিয়ে যে মানুষ তোলে সোনার ফসল; আনন্দ-উল্লাসের ফুরসৎ নেই যাদের একবিন্দু ও বিকেলটি তাদের কাছে তাই হয়ে ওঠে সোনারোদময় ঝকঝকে।
লাঠিয়ালদের ক্রীড়ানৈপূণ্য উপভোগে তাদের করতালি আর হাস্যোজ্জ্বল মুখের অভিব্যক্তিই বলে দেয় কতটা আনন্দ পেয়েছেন তারা।
এক অন্যরকম এক আনন্দে ভেসেছেন।
স্কুল মাঠের বিশাল এলাকাজুড়ে শুরু হয়েছে তিনদিনব্যাপী গ্রামীণ জীবনযাত্রা ও কৃষি প্রযুক্তি তথ্য, বীজমেলা।
মেলা চলবে ২৮ ফাল্গুন অর্থাৎ রোববার পর্যন্ত। প্রাণের স্পন্দন বিকশিত হওয়ার এই সুযোগ- তাই দূরে থাকতে পারেননি কেউই। তাইতো, মিশে গেছেন মেলা উপলক্ষে বের করা বিশাল শোভাযাত্রার ঢেউয়ে।
সঙ্গী করেছেন তাদের বাহন গরুরগাড়ি, পাওয়ার টিলার...।
আরেকটি আনন্দবার্তা তারা সাথে পেয়েছেন দেশের বিখ্যাত কৃষিবিজ্ঞানীদের। উদ্বেলিত হওয়ার কারণও এটা।
প্রায় ৩০টি স্টল দেয়া হয়েছে এই মেলায়। শিশুদের জন্য রাখা হয়েছে চরকি, নাগরদোলা, বিক্রি হচ্ছে বাঁশ-কাঠের তৈরি প্রয়োজনীয় উপকরণ।
আছে মুড়ি-মুড়কি, পাপরভাজা, পেঁয়াজু-ফুচকা, পাপরও।
বেশিরভাগ স্টলই করা হয়েছে কৃষি সংক্রান্ত। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মহেশ্বরচান্দা থেকে এসেছেন কৃষক মকবুল হোসেন, হেলালউদ্দিন। তাদের স্টলে রাখা হয়েছে কেঁচো সারের উপকরণ, কেঁচোসার, প্রাকৃতিক বালাইনাশক।
মকবুল হোসেন জানান, কেঁচোসার হচ্ছে জমির উৎকৃষ্ট খাদ্য।
রাসায়নিক সার, কীটনাশক আর হাইব্রিড বীজ ব্যবহারে জমির উর্বরতা অনেক হ্রাস পেয়েছে। সেক্ষেত্রে কেঁচোসার কেবল সারই নয়, বরং এটি ব্যবহার করলে জমিতে সেচ কম দিতে হয়। এমনকী, ফসলের রোগবালাইও হয় অনেক কম।
তিনি জানান, দেশের মধ্যে যেমন চাহিদা রয়েছে এ সারের তেমনি বিদেশেও। খুব শিগগির তারা এ সার সৌদিআরবে পাঠাতে যাচ্ছেন।
বর্তমানে কেঁচো প্রতি কেজি দু’হাজার টাকা এবং সার তিনি বিক্রি করছেন ১৫ টাকা কেজি দরে।
তাছাড়া, তারা প্রযুক্তি সরবরাহ করছেন প্রাকৃতিক বালাইনাশকেরও।
তিনি বলেন, বিষকাঠালি, ভাটিবট, নিমপাতা আর চুলার সাদা ছাই বালাইনাশক হিসেবে কৃষকদের মাঝে বেশ সাড়া জাগিয়েছে। এগুলো পরিবেশবান্ধবও বটে।
কবুতর উড়িয়ে আনন্দঘণ পরিবেশে এ মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন এমরিটাস বৈজ্ঞানিক ড. কাজী এম বদরুদ্দোজা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য খালেদুর রহমান টিটো।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথিবৃন্দ বলেন, বক্তৃতা নয়, কৃষক ভাইদের আনন্দে শরিক হতে এসেছেন তারা। যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অন্নের ব্যবস্থা করছেন-তাদের বিনম্র চিত্তে শ্রদ্ধা জানাতে।
অতিথিরা বলেন, বিভিন্ন সময় শহুরেরা নানা আয়োজনে তাদের দৈনন্দিন জীবনকে উপভোগ করেন। কিন্তু গ্রামের কৃষকরা সে সুযোগ পান না।
তাদের বিনোদনের জন্য এ মেলা অনেক গুরুত্ব বহন করে। কারণ, এ মেলার মাধ্যমে তারা বিনোদনের পাশাপাশি জ্ঞান অর্জন ও তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করবেন। কার্যত তারা বিনোদনের মধ্যেও দেশের উন্নয়নে কাজ করছেন।
আলোচনাসভা শেষে সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। এমন নানা অনুষ্ঠান রাখা হয়েছে আগামী দুদিনের জন্যও।
স্থানীয় লেবুতলা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মাস্টার ওয়াজেদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে কৃষি সমপ্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ হাসানুল হক, ড. এম গুল হোসেন, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. সাইদুল ইসলাম, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. রফিকুল ইসলাম মণ্ডল, হাঙ্গার প্রকল্পের বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. বদরুল আলম মজুমদার, কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. ফ্রেডরসি, যশোর অঞ্চলের দরদীমুখ কৃষক সংগঠক আইয়ুব হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
তিনদিনব্যাপী এ মেলার আয়োজন করেছে বিল ক্যাম্পেইন গ্র“প, উলাসী সৃজনী সংঘ আর যশোরের গাইদঘাট কৃষি প্রযুক্তি বাস্তবায়ন কেন্দ্র। সিএসআরএল, অক্সফাম প্রভৃতি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এতে সহায়তা করছে। #
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।