আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভাবতে কষ্ট হয় যারা তার স্বামীকে হত্যা করেছে, তার ছেলেকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে, তারা আজও বহাল তবিয়তে আইনের ধরা-ছোয়ার বাইরেই আছে, আমরা কি আদৌ কোন সভ্য দেশে বসবাস করছি ?লার হুমকি

weather Prothom Alo ঢাকা, শনিবার, ৩ মার্চ ২০১২, ২০ ফাল্গুন ১৪১৮, ৯ রবিউস সানি ১৪৩৩ শ নি বা রের বিশেষ প্রতিবেদন সবার প্রিয় ঝরণা দিদি পলাশ বড়ুয়া, দীঘিনালা (খাগড়াছড়ি) | তারিখ: ০৩-০৩-২০১২ খাগড়াছড়ির দীঘিনালার আলীনগর গ্রামের নারীদের সেলাই প্রশিক্ষণে কাপড় কাটার নিয়ম এঁকে দেখাচ্ছেন ঝর খাগড়াছড়ির দীঘিনালার আলীনগর গ্রামের নারীদের সেলাই প্রশিক্ষণে কাপড় কাটার নিয়ম এঁকে দেখাচ্ছেন ঝরণা রানী ছবি: প্রথম আলো খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার নিভৃত পল্লি আলীনগর। একদিকে দারিদ্র্যের কশাঘাত, অন্যদিকে অশিক্ষা-কুসংস্কারের বৃত্তে বন্দী ছিল গ্রামটি। গত কয়েক বছরে কিছুটা হলেও গ্রামটিতে পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। গ্রামটি আলোকিত করতে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন এক নারী। তাঁর নাম ঝরণা রানী রায়।

সবাই তাঁকে ঝরণা দিদি নামেই চেনে। শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত শিশুদের বিনা পয়সায় পড়ানো, নারীদের সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়া থেকে শুরু করে পরিবার পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেন তিনি। যশোরের অভয়নগর উপজেলার ভাটবিটা গ্রামে জন্ম ঝরণার। ঘটনাক্রমে আলীনগর গ্রামের ছোট্ট একটি ঘরই তাঁর ঠিকানা। শুরুর কথা: দুই মেয়ে ও এক ছেলের সংসার ছিল ঝরণার।

২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল। যশোরের অভয়নগরে নিজের বাড়িতে তাঁর চোখের সামনেই স্বামী মনি শংকর রায়কে গুলি করে সন্ত্রাসীরা। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ মে মনি শংকর মারা যান। এ ঘটনায় মামলা হয়। ঝরণা হন প্রধান সাক্ষী।

সন্ত্রাসীরা হুমকি দেয়, সাক্ষ্য দিলে একমাত্র ছেলেকে মেরে ফেলা হবে। স্বামী হত্যার বিচার চাইতে গিয়ে ছেলেকে হারাতে চাইলেন না ঝরণা। তাই সাক্ষ্য না দিয়ে এক ছেলে ও এক মেয়েকে রেখে ২০০৬ সালে দীঘিনালার আলীনগরে চলে আসেন। তাঁর দীঘিনালায় আসার কারণ, এই উপজেলার কবাখালী গ্রামে ঝরণার বড় মেয়ের বিয়ে হয়। আলীনগর থেকে কবাখালীর দূরত্ব প্রায় ছয় কিলোমিটার।

স্বামীকে হারানো এবং স্বামীর ভিটা ছেড়ে দূরে থাকার দুঃখ ভুলে থাকতে আলীনগরের মানুষগুলোকে আপন করে নিতে কাজ শুরু করেন। এর অংশ হিসেবে ২০০৭ সালে শুরু করেন ঝরণা ধারা বিদ্যানিকেতনের কাজ। আলীনগরে এক দিন: সম্প্রতি ঝরণা দিদির সম্পর্কে জানতে আলীনগরে ঢুকতেই স্থানীয় কয়েকজনের প্রশ্ন, আপনি নিশ্চয়ই ঝরণা দিদির কাছে এসেছেন? তাদের কাছে পথ চিনে গিয়ে ঝরণাকে পাওয়া গেল ওই বিদ্যানিকেতনে। বিদ্যানিকেতন বলতে ছোট্ট একটি টিনের ঘর। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি ঘরের ভেতর নিয়ে গেলেন।

ঘরে কোনো আসবাব চোখে পড়ল না। কথা বলার এক ফাঁকে ঝরণা হাঁক দিলেন, ‘এই রহিমা, মণিষা, নাছিমা ছেলেমেয়েদের পড়তে পাঠাও। ’ কিছুক্ষণের মধ্যে ছেলেমেয়েরা চটের বস্তা আর বই নিয়ে হাজির। চটের বস্তাই ওদের পাঠশালার একমাত্র আসবাব! শুরু হলো পড়াশোনা। পাশাপাশি আবৃত্তি ও গান।

কবাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র সুমন মিয়া, সুরুজ মিয়া, মাইনুর ইসলাম, রামিছা আক্তার ও কুলছুম আক্তারের মতো অনেকেই এই পাঠশালায় পড়ে। তারা জানাল, এখানে পড়ার কারণে তাদের আলাদা করে প্রাইভেট পড়তে হয় না। সোমানা আক্তার পড়ার এক ফাঁকে আবৃত্তি করে শোনাল, ‘ওখানে কে রে?/ আমি খোকা। / মাথায় কী রে?/ আমের ঝাঁকা। / খাসনে কেন?/ দাঁতে পোকা।

’ অষ্টম শ্রেণী পাস ঝরণা দিদি জানালেন, তিনি ২০০৭ সালে খোলা আকাশের নিচে শিশুদের পড়ানো শুরু করেন। প্রথম দিকে শিশুরা পাঠশালায় আসতে চাইত না। এখন সময়মতো সবাই হাজির হয়। দীঘিনালা সেনা জোন থেকে একটি টিনের ঘর তুলে দেওয়া হয়েছে। সেখানেই শিশুদের পড়ানো হচ্ছে।

বিদ্যানিকেতনে বয়স্ক নিরক্ষর ব্যক্তিদেরও পড়ানো হয়। গ্রামের ইউছুফ আলী ও বাচ্চু মিয়া জানালেন, শিশু-বয়স্ক সবাই ঝরণা দিদির পাঠশালায় পড়তে পারেন। এ জন্য কাউকে কোনো টাকা-পয়সা দিতে হয় না। জানা গেল, বিনা পারিশ্রমিকে ঝরণা দিদি এ পর্যন্ত শতাধিক ছেলেমেয়েকে গান শিখিয়েছেন। এবার কবাখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রতি বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদের গান শেখানোর উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।

পরে ঝরণা দিদি দেখালেন, তাঁর ‘বহত ঝরণা ধারা’ সেলাই প্রশিক্ষণকেন্দ্র। দেখা গেল, সেলাইয়ের সরঞ্জাম নিয়ে ১৫ থেকে ২০ জন নারী বসে আছেন। দিদিকে দেখে তাঁদের অপেক্ষার পালা শেষ হলো। দিদি সেলাই শেখানোর কাজ শুরু করলেন। বিনা পয়সায় তাঁদের প্রশিক্ষণ দেন।

তিনি জানালেন, এই সেলাই শেখানোর কাজও শুরু করেন ২০০৭ সালে। একসময় মহিলা অধিদপ্তরের অধীনে নেওয়া সেলাই প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতা থেকে নারীদের সেলাই শেখানোর উদ্যোগ নেন। ঝরণা দিদি এ পর্যন্ত কমপক্ষে ২৩৬ জন নারীকে সেলাই ও নকশিকাঁথা তৈরি করা শিখিয়েছেন। ‘আমি পড়ালেখার পাশাপাশি সেলাই শিখছি। নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই।

’ বলছিল সেলাই শিখতে আসা চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী নাজমিন আক্তার। আলীনগরের কোহিনুর আক্তার বললেন, ‘দিদির কাছে সেলাই শিখে এখন মাসে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা আয় করছি। ’ কবাখালী মুসলিমপাড়া গ্রামের আকলিমা আক্তার, সেলিনা আক্তার ও হেডম্যানপাড়ার খায়রুন নাহার জানালেন, ঝরণা দিদি অনেক যত্ন করে তাঁদের সেলাইয়ের কাজ শিখিয়েছেন। আলীনগর গ্রামের লোকজনকে সচেতন করতেও কাজ করছেন ঝরণা। বাল্যবিবাহ, জন্মনিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার জন্য গ্রামে মাঝেমধ্যে উঠান বৈঠক হয়।

গ্রামের নূরুন্নাহার, রহিমা বেগম ও সালমা বেগম জানালেন, তাঁরা ঝরণা দিদির কাছ থেকেই টিকা নেওয়া, জন্মনিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন বিষয় জেনেছেন। এসব ব্যাপারে সচেতন হয়েছেন। কী বলেন তিনি: ‘এই গ্রামের সবাই আমার স্বজনের মতো। আমার স্বপ্ন, গ্রামের প্রতিটি শিশু শিক্ষার পাশাপাশি গান ও আবৃত্তিতে পারদর্শী হবে, প্রতিটি নারী তার অধিকার পাবে। ’ ঝরণা জানালেন, সেনাবাহিনী বিদ্যানিকেতনের জন্য একটি ঘর নির্মাণ করে দিয়েছে।

আর সবজির চাষ করে অন্যান্য ব্যয় নির্বাহের জন্য একটি বেসরকারি সংস্থা তাঁকে যৎসামান্য সহায়তা দিচ্ছে। এ দিয়েই তিনি এ খরচগুলো চালাচ্ছেন। মানুষের কথা: ‘ঝরণা রানীর সামাজিক কাজ দেখে অবাক হতে হয়। মানুষ টাকার জন্য কত কিছুই না করছে, অথচ উনি বিনা পারিশ্রমিকে সমাজ বদলে দেওয়ার সংগ্রাম করছেন। ’ বলছিলেন দীঘিনালা উপজেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম।

ঝরণার বড় মেয়ে লিলি রায় বলেন, ‘ছোটকাল থেকেই দেখছি মা সংসার সামলে গ্রামের মেয়েদের সেলাই শেখাতেন, পড়াতেন। মায়ের জন্য আমরা গর্বিত। ’ স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আবুল বাশার বলেন, ঝরণা রানী সমাজ বদলে দিতে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করছেন। তিনি যেন এই এলাকার অভিভাবক। ঝরণা রানীর কাজের এলাকা পরিদর্শন করে সরকারিভাবে কোনো সাহায্য করা যায় কি না, তা বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এনামুল করিম।

Nanak Kanti Sen ২০১২.০৩.০৩ ০৬:১৮ সবই ঠিক অাছে কিন্তু তার স্বামীকে যারা হত্যা করলো, ছেলেকে মেরে ফেলার হুমকি যারা দিল, তারা কিন্তু এদেশে এখনো বহাল তবিয়তে বেচে অাছে। এটা দেখে মনে প্রশ্ন জাগে অামরা কি কোন সভ্য দেশে বাস করছি ? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.