স্বপ্নবিক্রেতা 0: কাশির জীবাণুর অণুপ্রবেশঃ
পরীক্ষার আগের দিন প্রস্তুতির ব্রান্ড নিঊ স্টার্টিং করতে আউলায় যাওয়া আমার এই টার্মের নতুন একটা অভ্যেশ। তবে দি জার্নি বিগিনস উইথ দ্য হোপ অব এ+ এবং তারপর হতেই গ্রেড ভার্সাস টাইম গ্রাফ আকিলে তাহা ডাউনওয়ার্ড ইনক্রিজিং স্লোপ পাওয়া যেত। যা ঋনাত্মক অঞ্চলে প্রবেশের সুযোগ না থাকিলেও জিরোগ্রেডের সমুহ সম্ভাবনা তখনো জিয়ে থাকে। যাই হোক, আউলা ২৩৩এ রাইয়ান ও তার প্রতিবেশী রুমমেট মাহদি এর কাছে পড়া বুঝে, তাদের চোথা, বই,এমনকি তাদের খাতা-কলমও ব্যবহার করে যাচ্ছিলাম। তথা পরের ধনে পোদ্দারি করে যেতে লাগলাম।
তবে অনেকেই আমাকে ভুল বুঝতে পারেন ভেবে জানিয়ে রাখছি, আমি এইসব ইম্যাটেরিয়াল বিষয় ছাড়া অন্যসময়ে পরের ধনে পোদ্দারি করি না। পড়ার পাশাপাশি আসিফের রুমমেট আসিবকেও হালকা ডিস্টার্ব করে যেতাম তার গুরুত্বপুর্ণ সময় নষ্ট করে। সেসব থাক। দুপুর ২টায় শুরু করলাম রাম-স্টাডি, এভাবে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত। এরি মাঝে কোন গোপন মুহুর্তে হঠাৎ ঠান্ডা লাগিয়া উঠিল।
মুজতবা আলীকে গাইলাইলাম। বেটা বেচে থাকার জন্য দোয়া করেছে বলে এখনো সর্দি-কাশি বেচে আছে। কাশি জিনিসটা বড়ই ভয়ানক। চিকনি চামেলী, ওলালার মতই বুক মোচর দিয়া ভেলকি শুরু করে। কাশির সময় আর চিকনী চামেলীর নাচ দুইটার সময়ই নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না।
দুইটায় অনিয়মিত ছন্দিত স্পন্দন। পার্থক্য একটাই, কাশি থামাতে চাই, শিলার জওয়ানি থামাতে মন চায় না। গাইজরা শিলার জওয়ানি, মুন্নির বদনামি দেখতে দেখতে লুলময় হয়ে পড়ে, কাশি তবে মাঝে মাঝে কফময়। কফ বিসর্জনেই কাশিদাতার চুড়ান্ত লক্ষ্য। যাক, কাশি নিয়ে বিশদ আলোচনায় গেলাম না।
কারো ব্যক্তিগত খায়েশ থাকলে আমার কাছে আইসো আরো ভালমত বুঝিয়ে দিব। সবকথা বলে, আমার সুশীল ভাবমুর্তি ক্ষুণ্ন করিতে আমি অপারগ।
১: পরীক্ষার আগের মধ্যরাত
রাত ২টায় অবশেষে কাশি শুরু হইল। সারারাত একাত-ওকাত হলুম। শেষে কাশিতে কাশিতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
অ্যালার্ম দিয়েছিলাম ৬টায় । উঠে তিনটা অংক মুখস্থ করব ভেবে। গোপন ও বিশেষজ্ঞ সুত্রে বুঝিতে পারিয়াছিলাম, অংকত্রয় তাহার কারিশমা পরদিন সকালে পরীক্ষার হলে দেখাইতে যাইতেছে। আমিও আমার কারিশমা দেখানোর আশায়, বড় আশা করে ৬টায় অ্যালার্ম দিলাম। ইচ্ছে ছিল, আমার সমস্ত বেসিক জ্ঞ্যান দিয়ে তিনটা ম্যাথ ঠাঠা মুখস্থ করব।
মুখস্থ করার বেসিক আগে তেমন না থাকলেও গত দুই টার্মের বাঁশে এই বেসিক মাশাল্লাহ ভালই আয়ত্ত্ব করতে পারছি বলে আমার মনে হয়।
২: শুভ সকাল
যথারীতি কাশার ক্লান্তি দূর করতে গিয়ে, চিরন্তন সত্য বলে পরিচিত "প্যারাডক্স অফ ঘুম" আমার যাবতীয় পরিকল্পনা নস্যাৎ করল। অতঃপর ঘুমই নমস্য মনে করিয়া সব আয়োজন উপেক্ষা করিয়া, অংকত্রয়ের অবিরাম আহবান ও মহান চিজিপিয়ের কামভরা লোভনীয় আবেদনময়ী ঝলক অবজ্ঞা করিয়া ৯টা পর্যন্ত সুখনিদ্রায় কাতর হয়ে রইলাম। এইবার প্যারাডক্স অফ ঘুম তাহার দ্বিতীয় পর্বের ভেলকীবাজি দেখানো শুরু করল। এই পর্ব অনুশোচনার।
নিজেকে গালিগালাজ করার পরও যখন মনটা ভরল না তখন অস্থায়ী রুমমেট রাইয়ান কে মনে মনে গালি দিলাম জোরপুর্বক ঘুম থেকে না তোলায়। কিন্তু তাহাকে কি গালি দিব... সেই দেখি তঁখনো কাইত। যাই হোক, ঘুমের মায়া ত্যাগ করে নিজে উঠলাম, তাহাকেও তুলিলাম। তারপর অংকত্রয় নিয়ে বসিলাম। এদিকে সময় নেই।
দশটায় পরীক্ষা। অতঃপর, কোনমতে একটা মুখস্থ করে দেখি ৯:৪০ এর উপরে ঘড়ি। আউলা থেকে নিজ হল নজরুলে রওনা দিলাম কলম ও রেজিশট্রেশন কার্ডের জন্য। আর হাতে কয়টা পৃষ্টা বই থেকে ছিড়ে নিলাম পড়তে পড়তে যাব বলে। পথিমধ্যে কতিপয় মানুষের কাছে আমার সিল পড়ে যাওয়া কেয়ারলেস তোফার পরিচয়কে আতেল পরিচয়ে সরিয়ে নিলাম।
কারণ, পৃষ্টা থেকে চোখ তুলছিলাম না বললেই চলে। যাহা তাহারা জানিত না, দশমিনিট পর আমার পরীক্ষা। পথে আরিফের(আমার ক্লাসমেট বন্ধু, পাশাপাশি নতুন সম্পর্ক সতীর্থ মেস ম্যানেজার) সাথে দেখা। তাহার মন্তব্য পরে শুনেছিলাম এই বিষয়ে। তাহা পরেই উন্মোচন করিব।
রুমে এসে দেখি, এক রুমমেট পরীক্ষার উদ্দেশ্যে রওনা দিল। আরেকজন সিভিলিয়ান হবার সুবিধা জাহির করিতেই যেন আমাকে দেখিয়া আরো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হইল। আমিও মনে মনে কইলাম, বেটা তিনদিন পর তো তোর পরীক্ষা। তখন বুঝবা,নাকে তেল দিয়া ঘুমানো আর দেখিয়ে দেখিয়ে দাত কেলিয়ে হেসে মুভি দেখা কারে কয়!!! সল্পক্ষনেই আবিষ্কার করিলাম, আমার রেজিস্ট্রেশন কার্ড সহ আমার ব্যাগটি রুমে নেই। ততক্ষনে আমার সহপাঠীরা প্রশ্ন হাতেই নিয়ে নিয়েছেন।
আমার রেজিস্ট্রেশন কার্ডের নিচের দিকের কিছু বিতিকিচ্ছিরি হিসাব-নিকাশ আছে। তাই খুব স্বযত্নেই গোপন কুঠুরিতে লুকিয়ে রাখি প্রায়সই। কি হে, বুয়েটিয়ান ফেলাস, এই বিতিকিচ্ছিরি হিসাবটা আমার মত অনেক goodfellas বুঝতে পারছে। তবে beautiful minded, good will hunted পোলামাইয়ারা বুঝবানা......
যাইহোক, অচিরেই বুঝিলাম, ইহা রুমমেটের কারসাজি। গতকল্য আমার ব্যাগ ধার করিয়া সে গ্রুপ-স্টাডি(??) করিতে গিয়াছিল।
তৎক্ষনাত চিল্লাই-মিল্লাই তাহাকে জাগাইলাম। সে তাহার অলস স্মৃতিশক্তির প্রখর ব্যবহার করিয়া কিছুক্ষনের মধ্যেই জানাইল রশিদ হলের বন্ধু তানভীরের রুমে রেখে আসছে। তারপর কিছুই হয়নি ভাব করে ঘুমিয়ে পড়িল। তাহার অশালীন ও ধৃষ্টতাপূর্ণ ব্যবহারে ক্ষুব্ধ হয়ে আমি আবার ডাকিয়া তাহার মোবাইল হতেই তানভীরকে কল দেওয়াইলাম আর ব্যাগখানা নিয়ে শহীদ মিনারের দিকে আসিতে কইলাম। কিছুক্ষন হলেও আমার কাছে প্রতিটা অপচিত সেকেন্ড লেবার পেইন টাইপ পেইন দিতেছিল।
আশার কথা, আমার তুলনাটা ঠিক কিনা তাহা আমার কখনোই জানিতে হইবে না। অবশেষে, তার তথা আমার বন্ধু তানভীর ব্যাগ হাতে শহীদ মিনারে আসিয়া দাড়াইল। আমি ও অংকত্রয় হুটোপাঠা ভুকিঝুকি দিয়ে মুখস্থ করিয়া যেতে যেতে আর বিড়ি টানিতে টানিতে হাটিতে লাগিলাম। অবশেষে শহীদ মিনারে বসিয়া ঠান্ডা মাথায় সিগারেটখানা শেষ করিলাম। অতঃপর ইএমই বিল্ডিং এর কাছে আমি।
৩: কাশিময় পরীক্ষা
হলে ঢুকেই একটা পুরনো ব্যাথা চিনচিন করে উঠল। এইভাবে মানবীহীন সমাজে কিভাবে তিনটা ঘন্টা নিজের অস্তিত্ব বাচিয়ে রাখা যায়? এই যে, এত কেয়ারলেসলি ২০টা মিনিট পরে ক্লাসরুমে ঢুকলাম তা কাকে দেখাব? তরুনীদের বিস্মিত করার তৃপ্তিটুকু কই পাব?? গত টার্মে যখন স্যারের কাছে মধ্যপরীক্ষায় স্যারের কাছে ক্যাল্কুলেটর চেয়েছিলাম, তখনো তরুনীদের বিস্ময় মাখানো চোখ আমাকে আজও নাড়িয়ে দিয়ে যায়। এখনো নিজেকে সেই সময়টুকুর জন্য নায়ক ভাবতে ইচ্ছে করে। পরীক্ষাহলের নারীসমাজের কাছে অল্প-সল্প পরিচিতিও হয়ে গিয়েছিল। দুঃখবোধের মাঝেই প্রশ্ন হাতে নিলাম।
হাতে নিয়েই আমার পুরো সিলেবাস গুজামিল দিয়ে কভার করে আসার সুবাধে একটি প্রাত্যহিক সমস্যায় পড়ে গেলাম। আট সেটের মধ্যে কোন ছয়টা আনসার করা যায়?? সবই তো কমন?? লিখা শুরু করলে বুঝা যাবে কোনটা পারব , কোনটা পারব না। কোন সেটের লিখা আগে শুরু করি??? অবশেষে ভাবিলাম, কিছুক্ষন আগে গুজামিল দিয়ে পড়ে আসা অংকটাই শুরু করি!! এরমধ্যে কাশি শুরু হল। কোন রমনীকুল না থাকায় নিজের কাশি সংবরনের কোন চেষ্টায় করছিলাম না। পাশের ফেলাদের ও স্যারদের বিরক্তির দৃষ্টি উপেক্ষা করেই পাশবিক আনন্দ নিয়েই কাশি দিয়ে চললাম।
যাইহোক, অংক করতে করতেই বুঝলাম তিন নম্বর পার্টের সুত্র ভুলে গিয়েছি, আমার ভুকিঝুকি মুখস্থ করার বেসিককে সম্মান জানাতে গিয়ে। এমনি অসংখ্য ডিফাইনিং মোমেন্ট পার করতে করতে পরীক্ষাটা শেষ করলাম। মাঝের হতাশার কাহিনী শুনিয়ে বিরক্ত করতে চাচ্ছি না। নিজের সাহিত্যপ্রতিভা কাজে লাগিয়ে মিডল স্পিড ডিজেল ইঞ্জিনের পার্স্পেক্টিভ আর ড্রু-ব্যাক লিখে ফেললাম। নিজের অনুমানশক্তির উপর বিরাট ভরসায় কি এক রকম পাতনে প্রাপ্ত গ্যাসগুলোর পার্সেন্টেজ পাতন তাপমাত্রা সহ লিখে ফেললাম।
অংকনপ্রতিভায় আমার স্বমুগ্ধতার প্রমাণ আবারো রেখে গেলাম, ৪-স্ট্রোক ইঞ্জিনের ভালব-কন্ট্রোল টাইমিং এর চিত্র একে। বরাবরের মত আমার বেসিক যে অনেক শক্তিশালি তা প্রমাণ করেই তিন তিন খান গ্রাফ সহ একটা ছোটখাট থিসিস লিখলাম। মাঝে মোবাইলখানা অফ করে হলে আসায় চরম আত্মঘৃণায় ভুগলাম। তবে আমার নিজের প্রতি রাগ কখনোই বেশিক্ষন থাকে না। কারণ, আমি নিজেকে সবকিছুর চাইতে বেশী ভালবাসি।
অন করা যাবে না। কারণ, তাতে আমার মোবাইলখানা সুতীব্র কম্পনে তাহার উপেনিংবার্তা স্যারদ্বয়কে জানিয়ে দিবে। অন থাকলে, সেভ করে রাখা ছবি দেখে অসম্পুর্ন অংকটা সলভ করা যেত। যা হবে না তা নিয়ে ভেবে আর কি...... গুজামিলে ফুল আনসার দেয়া শেষ, অংকটা বাদে। শেষ পনের মিনিটে অনেক চেষ্টা করলাম।
নিজের মেধার সর্বোচ্চ ব্যবহার করিলাম, তাহার পর ও না পারিয়া ঘাড় ঘুরাইয়া রিস্ক নিলাম। কিন্তু তাহাতেও কোনমতেই না পেরে, তৃতীয় সুত্রের তোফা ভার্সন ইউজ করে যে মান পাওয়া গেল তার মান দিয়েই বাকিটা শেষ করার ট্রায় করলাম। কিন্তু বিধিবাম, তাহা শেষ হবার আগেই ঘন্টা বাজল। আর ঘন্টা বাজার সাথে সাথে হাতের কলম ফেলে শেষ হিসাব না মিলিয়েই স্যারের দিকে খাতা বাড়িয়ে দিলাম। যাক, সময় শেষ, নাহলে ফুল আনসার হত...... আমার দোষ নেই, সময়ের দিকেই দোষ চাপিয়ে নিশ্চিন্ত হলাম।
অথচ, একদা ফুল আন্সার করতে না পারলে, আমার হাত থেকে খাতা নেয়ার আগে ছোটখাট একটা পাঞ্জালড়াই চলত স্যারের সাথে!!!! আহা, দিন কত দ্রুতই না পালটে যায়।
(পরবর্তী পর্ব এবং আসল রম্য পর্বঃ কাশিজ্বর ও বুয়েট ডাক্তার) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।