যখন একা বসে ভাবি তখন সেই ভাবনাগুলোই গান হয়ে যায়। তারপর গীটারটা হাতে নেই সেই ভাবনাকে সুরের মূর্ছনায় ছড়িয়ে দিতে। এভাবেই চলছে গান, ভাবনা আর বেচে থাকা। গতকাল বিশ্ববিখ্যাত হলুদ জার্সির ঝলকে ধরাশায়ী হল হালের ফুটবল দল স্পেন।
কথাটি শুনে আমার ফুটবল জ্ঞান নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলতে পারেন।
আমি এই পোষ্টে শুধু তাদেরকে কিছু বলতে চাই যারা এক সময়ে ব্রাজিল আর্জেন্টিনার সমর্থক ছিলেন কিন্তু ২০১০ বিশ্বকাপের পর স্পেনের সমর্থক হয়েছেন। এদের নিয়ে প্রথমদিকে আমার সমস্যা ছিল না। কে কার সাপোর্ট করবে সেটা তার নিজের ব্যাপার। কিন্তু এদের নিয়ে মাথা ব্যথ্যাটা শুরু হল যেদিন এরা ব্রাজিল-আর্জেন্টিনাকে নিয়ে সমালোচনা করতে লাগলো। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ফুটবল সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলতে লাগলো।
২০১০ সালে বিশ্বকাপ জেতার পর ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার কিছু সমর্থক স্পেনের সমর্থন করা শুরু করে। এরা হয়ে ওঠে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সমালোচক। এদের ভাষ্যমতে, স্পেন শুধু বিশ্বেরই সেরা দল নয়, ইতিহাসেরও সেরা দল। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার উচিত স্পেনকে আদর্শ হিসেবে গ্রহন করা।
আমার তখন এই সুবিধাবাদীদের কিছু কথা জিজ্ঞেস করতে খুব ইচ্ছে করেছিল।
বিশ্বের সেরা দল হতে হলে বিশ্ব ফুটবলের প্রতিটি শক্তিশালী দলকে ধরাশায়ী করতে হবে এবং কাজটি ফুটবলের শিল্প দিয়েই করতে হবে। আর ফুটবলের নাম আসলে সবার প্রথমে মনে পরে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার কথা। স্পেন তো ব্রাজিল-আর্জেন্টিনাকে ফেসই করেনি একবারো। এই দুই দলকে ফেস না করে এরা ইতিহাসের সেরা তো দুরের কথা, বিশ্বের সেরা মানতেও আমি রাজি না। আমি সর্বোচ্চ এদেরকে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে গুছানো দল বলতে রাজি ছিলাম।
স্পেন দুইবার ইউরো জিতেছে। সেখানে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ছিল না। ২০১০ এ যে বিশ্বকাপ জিতলো সেখানেও ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার বাধা স্পেনকে পেরোতে হয়নি। সেই বিশ্বকাপে তারা ইউরোপীয়ান দলগুলোকে ফেস করেই জিতে নিয়েছিল শিরোপা। ইউরোপীয়ান দলের মধ্যে জার্মানী, ইতালী ছাড়া আর কেউই এখন তেমন কোন ফর্মে নেই।
হ্যা স্পেন সেবার ইউরোপীয়ান পাওয়ার হাউস জার্মানীকে হারিয়েছিল। এই ক্রেডিট তাদের দিতে আমার সমস্যা নেই, জার্মানীকে হারানো কোন সহজ কাজ না। তবে লাতিন ফুটবলের দুই জায়ান্টকে হারানোর আগে কাউকে আমি ফুটবলের সেরা মানতে কখনই রাজি না।
আমি মনে প্রানে চাচ্ছিলাম ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা স্পেনকে একটা কঠিন জবাব দিক তাদের ফুটবল শিল্প দিয়ে। বুঝিয়ে দিক যে, এদের যে ফুটবল ঐতিহ্য আছে শুধু সেটি দিয়েই স্পেনের মত দলকে এরা চাইলে দুঃস্বপ্ন দেখাতে পারে।
আর্জেন্টিনা অবশ্য জবাবটি খুব দ্রুতই দিয়েছিল স্পেনকে। বিশ্বকাপের কিছুদিন পরই আর্জেন্টিনার সাথে এক প্রীতি ম্যাচে অবতীর্ন হয় স্পেন। সেখানে লিও মেসি স্পেনকে লাতিন ফুটবলের কিছু প্রদর্শনী দেখান যা স্পেনের তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। খেলা শেষে স্কোরঃ স্পেন ১ আর আর্জেন্টিনা অনেকগুলো সুযোগ মিস করার পরও ৪। যাই হোক, স্পেন ইতিহাসের সেরা দল।
ব্রাজিল অবশ্য জবাবটি দিতে বেশ দেরী করে ফেলে। ব্রাজিলের সাথে স্পেনের খেলা পড়ার তেমন কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছিল না। ইতোমধ্যে স্পেন জিতে ফেলে আরেকটি ইউরো। অবশেষে কনফেডারেশন্স কাপের ফাইনালে সেই স্পেনকে পায় ব্রাজিল। সবাই মনে করেছিল, স্পেন ৭০ ভাগ বল দখলে রাখবে, পাসিং ফুটবল খেলে সবার মাথা নষ্ট করে দেবে, এটা ভুলে গিয়েছিল ব্রাজিল ইউরোপের দল না।
লাতিন দলরা শাসিত হয় না, শাসন করে। ওরা কোনদিন জার্মানীর মত কাউন্টার অ্যাটাক ভিত্তিক খেলা খেলবে না। এই ধরনের খেলা খেলতে ওদের সম্মানে বাধে। ওরা সব সময় থাকতে চাইবে চালকের আসনে। পুরো ম্যাচে সেটিই দেখা গেছে।
মেসির মতো দুঃস্বপ্ন হয়ে এবার স্পেনিয়ার্ডদের বিপক্ষে ছড়ি ঘুরিয়েছেন নেইমার ডি সিলভা। পেলান্টি মিস, লাল কার্ড খাওয়ার মত ঘটনা ঘটিয়ে স্পেন তখন লাঞ্চনার চূড়াতে। খেলা শেষ হল নির্ধারিত ৯০ মিনিটেই। স্কোরঃ ব্রাজিল ৩, স্পেন ০। মেসির পর এবার নেইমারও ঘোষনা দিলেন, স্পেনের হালের ফুটবলের যুগের ইতি ঘটতে চলেছে, লাতিন ফুটবল ছন্দে ফিরছে।
যাই হোক, স্পেন ইতিহাসের সেরা দল।
ম্যারাডোনা, পেলে, গ্যারিঞ্চা, জিকো, রোমারিও, রোনালদো, বাতিস্তুতা, মেসি, নেইমার – এর মত খেলোয়াড়রা যে ফুটবলের অংশ সেই ফুটবলকে নাকি স্পেনের কাছে শিল্প শিখতে হবে। কারণ স্পেন নাকি ইতিহাসের সেরা দল। ২০১০ সাল থেকে যারা সাপোর্ট করা শুরু করেছে এরা ইতিহাসও বোঝে এটা বিস্ময়কর তথ্য।
(এই লেখাটি শুধু নব্য স্পেন সাপোর্টারদের জন্য যারা ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ২০১০ এর পরে কথা বলেছিল ইতিহাস টেনে।
যারা অনেক আগে থেকে স্পেনের সমর্থক তাদের কিছু বলার নেই। খেলায় হারজিত থাকবেই। সেই নিয়ম মেনেই স্পেন কাল হেরে গেছে। ব্রাজিলও হারতে পারতো। )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।