আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লাতিন ভাষার সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ
আমরা বলি লাতিন আমেরিকা,- বলি লাতিন আমেরিকার নান্দনিক ফুটবল। আমরা জানি লাতিন আমেরিকা বলতে দক্ষিণ আমেরিকাকে বোঝায়। কিন্তু কেন লাতিন আমেরিকা বলতে দক্ষিণ আমেরিকাকে বোঝায়? আজ এই প্রশ্নের উত্তরটি খোঁজা যাক ... লাতিন একটি ভাষার নাম।

এটি ইতালিক ভাষার অর্ন্তগত। ইতালিক ভাষা হল ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষারই উপ-পরিবার। আমরা জানি ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা হল বিশ্বের একটি অন্যতম ভাষা পরিবার। প্রাচীন রোম ও লাটিনামের কথ্য ভাষা ছিল লাতিন। লাটিনাম হল প্রাচীন রোমকেন্দ্রীক ইতালির অঞ্চল।

৬০০ থেকে ৭৫০ খ্রিস্টপূর্বের মধ্যে লাতিন মৃত ভাষায় পরিনত হয়। এর মানে এই ভাষায় আর কেউই কথা বলে না। তবে লাতিনের গুরুত্ব একেবারেই হারিয়ে যায়নি। ইউরোপের স্কুলে আজও পড়ানো হয় ভাষাটি। আজও লাতিন থেকে নতুন নতুন শব্দ ইংরেজি ও অন্যান্য ভাষায় নেওয়া হচ্ছে।

অস্টাদশ শতক অবধি পান্ডিত্য ও কূটনৈতিক ভাষা ছিল লাতিন। কুড়ি শতক অবধি রোমান ক্যাথলিক ধর্মশাস্ত্রে লাতিন ভাষার প্রভাব অব্যাহত থাকে। এবার লাতিন ভাষার উদ্ভব ও বিকাশের দিকে দৃষ্টি ফেরানো যাক। প্রাচীন রোম। রোমুলাস ৭৫৩ খ্রিস্টপূর্বে রোম নগরীর পত্তন করেন।

সে সময় রোম ও রোমের আশেপাশের অঞ্চলকে বলা হত লাটিনাম। সেখানকার মানুষ যে ভাষায় কথা বলত - সেই ভাষার নামই লাতিন। আমাদের মনে রাখতে হবে লাতিন ভাষা কিন্তু প্রাচীন ইতালির স্থানীয় ভাষা ছিল না। লাতিন ভাষাটি ইটালিক জাতি প্রাগৈতিহাসিক সময়ে উত্তর দিক থেকে এসে ইতালিয় উপদ্বীপে নিয়ে আসে। রোমান বর্ণমালা।

এই লিপির উদ্ভবকাল ধরা হয় খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ট শতক। আদি লাতিন ভাষার সময়কাল ধরা হয় ২৫০ থেকে ১৫০ খ্রিস্টপূর্ব। এই সময়ে আদি রোমান সাহিত্যও লিখিত হতে থাকে। সেসব ছিল মূলত গ্রিক অনুবাদ। এরই মধ্যে রোমানরা ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী অঞ্চল জয় করে নেয় এবং রোমান ভাষাও ছড়িয়ে যায়।

রোমান সাম্রাজ্য। এটি অবশ্য আরও পরের মানচিত্র। ১৫০ থেকে ১০০ খ্রিস্টপূর্বের মধ্যে মেধাবী রোমান লেখক ও ব্যাকরণবিদদের হাতে ক্ল্যাসিকাল লাতিন ভাষার বিকাশ ঘটে। এ সময়ে সিসেরো, সিজার, ভার্জিল প্রমূখ লেখকগন লাতিন ভাষায় ধ্রুপদী সাহিত্য রচনা করেন। লাতিন ভাষার এই নবজাগরনের সঙ্গে উনিশ শতকের বাংলা ভাষার নবজাগরনের সাদৃশ্য রয়েছে।

উনিশ শতকে রামমোহন, বিদ্যাসাগর ও রবীন্দ্রনাথ বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করে এক পরিশীলিত স্তরে নিয়ে যান । অবশ্য সাহিত্যিক লাতিন ভাষাটি প্রাচীন ভারতের সংস্কৃত ভাষার মতোই স্থির হয়ে যায় এবং এর আর তেমন কোনও পরিবর্তন হয় না। প্রাচীন ভারতে অনঢ় ও অপরিবর্তনীয় সংস্কৃত ভাষার বিপরীতে উদ্ভব হয়েছিল পালি ও প্রাকৃত ভাষা, যা ছিল সাধারন মানুষের বুলি। তেমনি লাতিন ভাষায় ধ্রুপদী রূপের পাশাপাশি গড়ে উঠেছিল ভালগার (স্থূল অর্থে) লাতিন- যাকে আমরা ‘প্রাকৃত লাতিন’ বলতে পারি। খ্রিস্টীয় ৫ম শতক অবধি রোমান রাজদন্ড ও লাতিন ভাষা ছিল অভিন্ন ... ৩৫০ খ্রিস্টপূর্ব থেকে ১৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে রোমান সাম্রাজ্য এশিয়া আফ্রিকা ও ইউরোপে অভূতপূর্ব বিস্তার লাভ করেছিল।

রোমান সাম্রাজ্যজুড়ে সৈন্যরা, বসতি স্থাপনকারীরা ও ব্যবসায়ীরা প্রাকৃত লাতিন ভাষায় কথা বলত। পাশাপাশি রোমান সাহিত্যিকরা ধ্রুপদী লাতিন ভাষায় সাহিত্য রচনা করতেন। প্রশাসনিক ও শিক্ষাদীক্ষার মাধ্যম হিসেবে পশ্চিম ইউরোপে লাতিন একটি গ্রহনযোগ্য ভাষায় পরিনত হয়। গ্রিক জগতে লাতিন ভাষা থেকে একটি কথ্য ভাষার উদ্ভব হয়েছিল - সেই ভাষার নাম ছিল ‘কোইনি’। লাতিন পান্ডুলিপি খ্রিস্টীয় ৫ম শতকে বর্বরদের আক্রমনে রোমকেন্দ্রীক রোমান সাম্রাজ্যের পতনে হয়।

এরপরও প্রাকৃত লাতিন ভাষার বিবর্তন থেমে থাকেনি। প্রাকৃত লাতিন ভাষা থেকে উদ্ভব ঘটে Romance ভাষার । এক কথায় প্রাকৃত লাতিন ভাষার বিবর্তনই রোমান্স ভাষা। রোমান্স ভাষাই হয়ে ওঠে লিনগুয়া রোমানা এবং ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স ব্রিটেন উত্তর আফ্রিকা সার্দিনিয়া ও কর্সিকা অবধি ছিল যে ভাষাটির বিস্তার। Romance শব্দটি উদ্ভূত হয়েছে লাতিন romanice থেকে ; এর মানে হল: ‘কথা বলা।

’ ক্রমশ ক্ল্যাসিকাল লাতিন সাধারন মানুষের বোঝার বাইরে রয়ে গেল। সাধারন মানুষ বলতে লাগল রোমান্স ভাষায়। আধুনিক স্পেনিশ ভাষায় ‘রোমান্সার’ বলতে বোঝায় স্পেনিশ ভাষায় অনুবাদ করা। ইতালিয় ভাষাতেও অনুরূপ মানে বোঝায়। আর ফরাসি ভাষায় রোমান শব্দটি দ্বারা বোঝায় সহজসরল গদ্য বা উপন্যাস বা সাধারন মানুষের বুলি।

আমাদের একটা প্রশ্ন ছিল। দক্ষিণ আমেরিকাকে কেন লাতিন আমেরিকা বলা হয়? দক্ষিণ আমেরিকার মানচিত্র। নৌবিদ্যার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে পঞ্চদশ শতকে আমেরিকা অভিমূখে ইউরোপীয় অভিযান আরম্ভ হয়। এ ক্ষেত্রে অগ্রগামী ভূমিকা রাখে স্পেন । পরে সে অভিযাত্রায় ফ্রেঞ্চ পর্তুগিজরা সামিল হয় ।

তারা সেখানে লাতিনজাত রোমান্স ভাষা নিয়ে যায়। পর্তুগিজরা দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিল উরুগুয়ে ও বারবাডোস-এ এবং স্পেন নিউ গ্রানাডা, ভেনিজুয়েলা, পেরুতে কলোনি স্থাপন করে । স্পেন আর্জেন্টিনাতেও কলোনি স্থাপন করে। তাছাড়া প্যারাগুয়ে তেও লাতিনজাত রোমান্স স্পেনিশ ভাষাটি ছড়িয়ে পড়ে । আসলে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের ১৩টি দেশের মধ্যে নয়টিরই সরকারি ভাষা স্পেনিশ-যা লাতিন জাত।

এই লাতিনজাত রোমান্স ভাষার কারণেই দক্ষিণ আমেরিকাকে লাতিন আমেরিকা বলা হয়। তথ্য ও ছবি: ইন্টারনেট
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।