আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফেব্রুয়ারির দুপুর ও একটি অবাক চাহনি (গল্প)

মোমিনুলের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে মঈনুল। মোমিনুল হাঁপাচ্ছে। মঈনুলের দেখা পেতে অনেক ছোটাছুটি করতে হয়েছে মোমিনুলকে। বয়সে একযুগের বড় হওয়ায় মঈনুলকে ধমক দিতে পারছে না মোমিনুল। তবে সংবাদটা দিয়ে বেশ রাগান্বিত দৃষ্টিতে বড় ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকলো সে।

সংবাদটা শুনে হা হয়ে গেলো মঈনুলের মুখ। কোনো কথা বলতে পারলো না। সূর্যটা এখন মাথার ওপরে। ফেব্রুয়ারির দুপুর। রোদের উত্তাপ গ্রীষ্মের দুপুরের মতো অসহনীয় নয়।

অথচ মঈনুলের কাছে এই উত্তাপটুকুই অসহনীয় ঠেকলো। কিছুক্ষণের বাকরুদ্ধতার পর মোমিনুলের ঘাড়ের ওপর দিয়ে অনির্দিষ্টভাবে তাকিয়ে থেকে অস্ফুট স্বরে মঈনুল বললো, ‘কখন গেছে?’ ‘গতরাতে। ’ মাথা নিচু করে মঈনুলের মতোই অস্ফুট স্বরে বললো মোমিনুল। ‘দুইদিন থেকেই আপনারে খুঁজতেছি। ’ মঈনুলের মুখের দিকে তাকিয়ে রাগান্বিত দৃষ্টিতে কিছুটা অভিযোগের সুরে মোমিনুল বললো, ‘কই থাকেন আপনে? খালি আপনের নাম করতেছিলো।

’ মঈনুল মোমিনুলের দিকে তাকালো না, তার কথার জবাব দিলো না। অনির্দিষ্টভাবে তাকিয়ে থেকেই বললো, ‘সবাইকে খবর দেয়া হয়েছে?’ ‘হ্যাঁ। মামারা রাতেই আইসে। বাকি সবাই বোধহয় এতোক্ষণ চলে আইসে। আপনে চলেন তাড়াতাড়ি।

’ ‘এখন তো আমি যেতে পারবো না। একটু পরেই মিছিল আছে। ’ ‘মামারা কিন্তু আপনের ওপর ক্ষেপসে। আপনের জন্য কেউ বসে থাকবে না। মাটি দিয়ে দেবে।

’ ‘তুই গিয়ে সবাইকে থামতে বল। মিছিলটা খুব জরুরি। আমাকেই লিড দিতে হবে। মিছিলটা শেষ করেই আমি আসছি। ’ ‘কি বলছেন দাদা! মাকে দাফন করার চেয়ে মিছিলটাই বেশি জরুরি!’ ‘হ্যাঁ।

মিছিলটা খুব জরুরি। গর্ভধারিণী মাকে তো হারালাম। এই মিছিল না করলে, আন্দোলন না করলে বাংলা মাকেও যে হারাবো! মিছিলটা তাই করতেই হবে। ’ ‘না দাদা, ও সব বুঝি না। মামারা খুব ক্ষেপে আছে।

আপনের জন্য দাফন আটকায় রাখবে না। আপনে এখনি চলেন। মিছিল অন্যরা করুক। ’ ‘অবুঝ হইস না। মিছিলে আমাকে থাকতেই হবে।

তুই চলে যা। দরকার হলে দাফন করে দিতে বল। মিছিল আমাকে করতেই হবে। ’ আর দাঁড়ালো না মঈনুল। হাঁটতে লাগলো।

মোমিনুল ‘দাদা’ বলে চিৎকার দিলো। কিন্তু তাতে মঈনুল সাড়া দিলো না। হনহন করে হাঁটতে থাকলো। ফিরে তাকালে তার চলবে না। অনেক বড় দায়িত্ব তার কাঁধে।

উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হতে দেয়া যাবে না। বাংলা চায় এই ভূখণ্ডের মানুষ। উর্দু ঠেকিয়ে বাংলা বহাল রাখার আন্দোলন এই ভূখণ্ডের জনতার। সেই আন্দোলনের একটা অংশ আজকের মিছিল। যে মিছিলে লিড দিতে হবে মঈনুলকে।

মিছিলে তাকে থাকতেই হবে। মায়ের লাশ ফেলে রেখে হলেও! বারো বছর বয়সি মোমিনুল অবাক চাহনিতে চেয়ে থাকে ভাইয়ের দ্রুত হেঁটে যাওয়ার দিকে। বোধগম্য হয় না তার, মায়ের লাশ দাফন করার চেয়েও কেন এই মিছিল জরুরি! সে শুধু অবাক চেয়েই থাকে... ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.