সত্য সুন্দরকে ব্রত করি জীবনে আগের পর্বঃ Click This Link
"আবার বিকেলে টাউন হল- এ সভায় আসবার আগে মাহিগঞ্জে রবি মৈত্রের বাড়ি যাওয়া গেল । ...মাহিগঞ্জ থেকে আসতে পথের দু'ধারে বড় বড় পাতাওয়ালা গাছ --" ( যুঁই- যূথিকা, বিভূতিভূষন বন্দ্যোপাধ্যায়) ।
এই সেই রংপুরের মাহিগঞ্জ, যেখানে কর্মসূত্রে ছিলেন রাজা রামমোহন রায় । এখানে অবস্থান কালে ১৯০৫ সালে রামমোহন রায় তার অল্প বয়সের কাকিমার সহমরনে যাবার আয়োজনের কথা শুনে বিচলিত হন যা তখন হিন্দু ধর্মের প্রথা ছিল । তার উদ্যোগে পরবর্তীতে এ প্রথা রদ করা হয় ।
( ১৯০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ক্লাব যার বর্তমান পরিবর্তিত রূপ) ।
"সভান্তে জ্যোৎস্নারাত্রে রায় বাহাদুর বসন্ত ভৌমিকের বাড়ি চা-পার্টি । খুব গোলাপ ফুটেচে বসন্তবাবুর বাগানে । তিনি আমাকে তার পড়ার ঘর দেখালেন-- বেশ সাজানো, আর অনেক বই আছে । এদেশে ঘর তৈরী করার পদ্ধতি আমার বেশ সুদৃশ্য লাগল ।
" ( যুঁই- যূথিকা, বিভূতিভূষন বন্দ্যোপাধ্যায়) ।
এসব পুরোন বাড়ি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথার যথার্থতা প্রমান করে । এ বাড়ি রাধাবল্লভ নামে একজন জমিদারের ছিল ( শোনা কথা) যার নামে এলাকার নাম 'রাধাবল্লভ' । পরবর্তীতে এ বাড়ীর মালিক ছিলেন মশিউর রহমান যাদু মিঞা । বর্তমানে এ বাড়ী পড়ে আছে শ্রীহীন ।
রংপুরে অনেক এলাকায় একই চিত্র । যেমন --
( অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে ছিলাম এখনো কো-অপারেটিভ ব্যাংক নামে চালু ১৯১৫ সালে স্থাপিত এই ' সেন্ট্রাল কোঅপারেটিভ ব্যাংক" দেখে) ।
এবং
(শহরের ব্যস্ত এলাকায় মোড়ের কাছাকাছি এ বাড়ীর ভগ্নদশা ব্যঙ্গ করছে আমাদের , আমাদের অবহেলাপ্রবনতাকে)।
অতীত ছাড়া কি কোন পরিচয় হয় ? আমাদের মধ্যে বর্তমানের প্রতি যতটা আগ্রহ উদ্দীপনা ঠিক ততটাই ঔদাসীন্য অবহেলা অবিচার অতীতের জন্য ।
আমরা ভাঙ্গা ভাঙ্গির বেলায় সিদ্ধহস্ত ।
হোক নাসেটা সম্পর্ক ভাঙা, দল ভাঙা, মন ভাঙা, শপথ ভাঙা, কপাল ভাঙা, রাস্তা ভাঙা অথবা বাড়ি ভাঙা । আর তাই অনেক আগে দেখা জজ বাংলোর পাশে এডিসির কাঠের আকর্ষনীয় সুরম্য দোতলা বাংলো ভেঙে ফেলা হয়েছে । এ কাঠের বাংলোতে যাবার, ঘুরে দেখবার এবং অবস্থান করবার সুযোগ হয়েছিল ; তখন দেখেছিলাম এর অনন্য গঠনশৈলী । শোনা কথা এটা কোন বৃটিশ লাটের জন্য তৈরী করা হয়েছিল । ছবি তোলা হয় নি , তখন কি জানতাম এটার অকাল অথবা সকাল সকাল মৃত্যু !
( গুগল থেকে এ ছবিটা সংগ্রহ করে বোঝানোর বৃথা চেষ্টা যে বাড়িটা প্রায় এরকম ছিল, আসলে সে বাড়িটা ছিল আরো দৃষ্টিনন্দন) ।
সে বাড়ীটা নেই , ভেঙে ফেলা হয়েছে; সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক, এল জি ডি ইত্যাদি ইত্যাদি । কোনভাবেই কি পারা যেত না এটা সংরক্ষন করা ? স্বচক্ষে সেই বাড়ির হারিয়ে যাওয়া দেখে এক রাতে ঘুমুতে পারিনি ঠিকমত । স্থানীয় দু একজনকে বলে দেখেছি বিষয়টা ; মনে হোল কারো কিছু করবার ছিল না ।
মন খারাপের আরো বিষয় , যখন দেখি রংপুর চিড়িয়াখানার রাজকীয় বাঘ খুড়িয়ে হাটছে । দেখুন
( বাঘের এ করুন দশা দেখে আর অন্য খাঁচার কাছে যাবার ইচ্ছে হয়নি; আমার বরকে বললাম এখানে কিউরেটর নেই ? কিভাবে কষ্ট পাচ্ছে বাঘটা ।
আমার বর চুপ করে থাকল । নীরবতা অনেক সমস্যার সমাধান করে দেয় । নীরবতা অনেক ক্ষেত্রে সর্বনাশের চুড়ান্ত করে ছাড়ে । )
জটিল কথাবার্তা বাদ দেয়া যাক্ । এমন আনন্দময় বেড়ানো থেকে কিছু আনন্দমূহুর্ত সবার জন্য ।
(এত এত পাখী হোক না সে কাক, আমার পুত্রধনের বহন করা রুটিটুকরো পেয়ে খুশীতে নাচানাচি -- ওড়াওড়ি , আমার পুত্রের উপচেপড়া খুশী !)
( রংপুর চিড়িয়াখানায় গাছ,গাছের কাছে শেখবার আছে, কি করে মিলে মিশে থাকতে হয় : মিলে মিশে থাকলে সৌন্দর্য বাড়ে বৈ কমে না । )
( এ দুটো ছাগল ছানা নিয়ে মহা আনন্দে আমাদের দুই ছানা , ঢাকা নিয়ে আসবার ইচ্ছেও ছিল )।
( বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের গাড়ি - বই ভর্তি, সারা রাত সার্কিট হাউজ চত্তরে; আমার ছেলের দীর্ঘশ্বাস, ঢাকায় শুধু সপ্তাহে একদিন পায় দেখা একঘন্টার জন্য)।
( রংপুরে আমাদের এক গুনী বন্ধুর সযত্নে লালিত স্নোবল ফুল) ।
( ঘাঘট নদের পারে এক হোটেলের একরঙ সুস্বাদ চা ।
পরে জেনেছি এই হোটেলে দুপুরের খাবার পাওয়া যায় , আফসোস যে খাবার সময় সুযোগ পেলাম না )।
রংপুর চিড়িয়াখানায় তোলা এই ছবিটা দেখে মনে মনে ভাবি এমনই হয় সুখস্মৃতি; ঝাপসা, মোহনীয় মায়াভরা । পুরো অন্তর জুড়ে থাকে , সারাক্ষন মন ভরিয়ে রাখে ।
এ দেশটা ভারী সুন্দর ।
(ফটোগ্রাফার: মেহবুবা, শুধু গুগল থেকে নেয়া কাঠের বাড়ী ছাড়া)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।