জীবন চলা মানে প্রতিক্ষন জীবনান্তের দিকে এগিয়ে চলা রংপুর এসেছি মাস খানেক হল । এসেই হোটেলে থাকার পর্ব শুরু হল । তিন বেলা হোটেলে খাওয়া উহ্ জঘন্য । এভাবে দিন দশেক পার করলাম কোন মতে । মাঝখানে একদিন হরতাল ছিলো আধা বেলা, আ, লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আ, লীগের হরতাল।
রাতে খাবার পরিবেশন করার সময় সহৃদয় ওয়েটার বলল, 'এই হরতালে ঔষধপত্র খাবার হোটেল সব বন্ধ থাকবে সকালে নাস্তা পাবেন না এখন রুমে যাবার সময় পাউরুটি কলা কিনে নিয়ে যাবেন' তাই করলাম । ভাগ্যিস আধাবেলা হরতাল ছিলো নাহলে দুপুরেও সম্ভবত একই মেন্যুর শ্মরনাপন্ন হতে হত । ঈদের আগের দিন জেনে গেলাম এক সপ্তাহ হোটেল বন্ধ থাকবে । রংপুর ত্যাগ করলাম । ঈদ কাটিয়ে এসেও দেখি ভাল হোটেল বন্ধ, বাধ্য হয়ে অখ্যাত হোটেলের খাবার আনাতে হল মেন্যু মুরগী ভূনা।
প্রথমে গাঢ় ঝোল দিয়ে খাওয়া শুরু করলাম, মুরগীর টুকরাটা বেশ ভালভাবে ভেজে রান্না করেছে । ঝোলটা বেশ সুস্বাদু হয়েছে, ভাবছিলাম এই হোটেলের খাবার আগে আনেনি কেন ? খাওয়ার শেষের পর্যায়ে যখন মাংসে কামড় দিলাম সব একেবারে ভেতর থেকে উগলে আসার যোগার হল মাংসটা কেন এত কড়া করে ভেজেছে তার মাজেজাটা এতক্ষনে বোঝা গেল মাংসটা ছিলো একেবারে পচা । পচা গন্ধটা দূর করাই ছিলো উদ্দেশ্য । ভাবলাম মাছ পচা হতে পারে, অনেকদিন ফ্রীজে রাখলে মাছে কিছুটা শুটকীর গন্ধ আসে, এটা সমস্যা নয় ভাবলাম পচা মাংস কোথায় পেল! আর এমন হোটেলও নয় যে ফ্রীজ আছে । এরপর যা জানলাম তা আরও মারাত্নক, এগুলো ডাষ্টবিনে ফেলে দেওয়ার উপোযোগী মরা মুরগী যা প্রায় পচে গেছে ।
একদল ব্যবসায়ী আছে যারা মরা মুরগী ফেলে না দিয়ে অল্প দামে এক ধরনের টোকাইদের কাছে বিক্রী করে। ওরা এগুলো ঐসব 'ওতেল দা ইতালীয়ানা' মার্কা হোটেলে বিক্রী করে । ( হোটেলের খাবারের মান দেখার জন্য এক জন সরকারী ইন্সপেক্টর থাকেন । ) এরপর শুরু হয়েছিলো প্রচন্ড পেটে ব্যাথা ভয় পেলাম আবার না ডায়রিয়া শুরু হয়ে যায় । এই দুর্বিপাক আর সহ্য হয়না ।
আগেই ছোট মোটো একা থাকার জন্য একটা বাসা খুজতে লোক লাগিয়ে ছিলাম, আরও জোর তাগাদা দিলাম, আপাতত যেমন তেমন বাসা হলেও চলবে, তার পরও হোটেল নৈব নৈব চ । যেমন উদ্যোগ তেমন ফল, বাসা একটা পেয়ে উঠে গেলাম । এবার আরেক জ্বালা কাজের লোক পাওয়া যাচ্ছেনা । কি আর করা স্ব উদ্যোগে স্ব পাক আহারের ব্যবস্থা চালু করলাম, ভাত, ডাল, আলু ভর্তা এগুলো আগেই কিছুকিছু পারতাম এই সিরিয়ালে ডিমের মামলেট ডিমের ভর্তা সীম ভর্তা এগুলোও আছে । প্রথম প্রথম ভাল লাগলেও অচিরেই একই আহারে অরুচি ধরে গেল কাহাতক আর একই খাবার বারবার খাওয়া যায় একটু রুচির পরিবর্তন করা প্রয়োজন।
ফলে গতকাল সাহস করে পালং শাক নিয়ে এলাম ফোনে রান্নার পদ্ধতি জানার জন্য ভাগ্নীকে কল দিলাম ও বললো, 'খুব সহজ প্রথমে শাক আর আলু সিদ্ধ করে, ওর মধ্যে দুধ কিসমিস তেজপাতা দিয়ে দেবা তারপর পেয়াজ দিয়ে বাগার দেবা' বুঝলাম দুষ্টুমী করছে । বললাম দাড়াও আমি এসে নেই কান ধরে তোমাকে চান দেখিয়ে ছাড়বো পালং শাক ভালই রান্না করলাম। এরপর এরপর যথারীতি সাহস আরও বাড়লো, আজ গেলাম মাছ কিনতে উদ্দেশ্য ওদেরকে দিয়েই মাছ কাটিয়ে যতদূর সম্ভব পরিষ্কার করিয়ে আনবো, আর বাসায় এনে ধুয়ে শুধু হলুদ আর লবন মাখিয়ে ভাজবো আর খাবো ভাজবো আর খাব । কিন্তু বাজারে গিয়ে দেখি কি আর মাছ কিনবো আর খাবো উল্টো মাছই আমাকে ভেটকী দিয়ে গিলে খেতে আসছে । নেন আপনারাও একটুমাছের ভেটকী খান ।
এর পর আর মাছ কেনার সাহস হলোনা । পাঠক নিশ্চয়ই চিনেছেন । ডিসকভারি বা জিওগ্রাফিক চ্যানেলের বদৌলতে আমাজান নদীতে বসবাস কারী এই রাক্ষুসে মাছ । আমরা চিনলেও সরকারী লোকজন যাদের এগুলো দেখার কথা তারা এসব চেনেনা (আসলে তারা তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব বিন্দু মাত্রও পালন করেনা অথচ রংপুর একটা বিভাগীয় শহর ) অসাধু মুরগীআলার মত অসাধু কিছু মাছ চাষী আছে যারা এই মাছগুলি সামুদ্রিক রূপচাদা মাছ হিসেবে চালায় । উত্তর বঙ্গ হচ্ছে মাছের আকালের দেশ এখানে মাছের প্রাচুর্য নেই ।
এদেশের সহজ সরল মানুষরা সামুদ্রিক মাছ ঠিকমত চেনে না, আর এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে একধরনের মাছ চাষী এবং মাছ ব্যবসায়ী এই সহজ সরল মানুষ গুলির মাছ খাওয়ার প্রত্যাশার সাথে প্রতারনা করছে । অনেক আগে ঢাকার যাত্রাবাড়ী, সদরঘাট এবং মিরপুরের বাজারে পিরানহা মাছ উঠেছিলো তখন এগুলোকে নাম দেওয়া হয়েছিলো থাই রূপচাদা । ম্যজিষ্ট্রেট গিয়ে ধরাতে এখন মাছ ব্যবসায়ীরা এগুলি ঢাকার বাহিরে ছড়িয়ে দিয়েছে । এর থেকে উদ্ধার পাবার উপায় কি ?আমার মনে হয় বিক্রেতাদের না ধরে সরবরাহকারী এবং মাছের উৎস যেখান থেকে এগুলি আসছে সেখানে ধরতে হবে । তাহলে যদি এই রাক্ষুসে মাছের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায় ।
রংপুর বাসী আপনারা হোটেলে বসে গাটের পয়সা খরচ করে রান্না করা রূপচাদা মাছ দিয়ে যদি রসনা পরিতৃপ্তি করার ইচ্ছা পোষন করেন তাইলে দুইবার ভাইব্বেন । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।