আত্মনির্ভরশীল,দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি মুক্ত একটি শিল্পোন্নত আধুনিক সুশিক্ষিত বাংলাদেশ আমরা তরুনরাই গড়ে তুলতে পারি। আর সে জন্য দরকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। নাদিয়া তপুকে ছেড়ে চলে গিয়েছে চার সপ্তাহ হলো। তপুর মানিয়ে নিতে বেশ কষ্ট হয়েছে। এটা ছিল তার জীবনের প্রথম রিলেশন।
আর এটা ছিল পারফেক্ট। সব কিছুই চলছিল মসৃণ ভাবে। তপুর বড় ভাইয়ের বিয়েতে পরিচয়, নাদিয়া তার ভাবির কাজিন হয় দূরসম্পর্কের। তারপর ফেসবুকে ফ্রেন্ড হওয়া,চ্যাটিং,মোবাইলে কথা বলা...সব কিছুই এগিয়ে যাচ্ছিল তরতর করে। তপু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাপ্লাইড ক্যামিস্ট্রিতে পড়ে, নাদিয়া বোটানিতে।
প্রথম কয়েকদিন তারা বন্ধুর মতই ঘুরে বেড়িয়েছে...নাদিয়াই এক সময় রিলেশন টাকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়। সেই নাদিয়াই আবার কাঁচের দেয়ালের মত ভেঙ্গে ফেলে সুন্দর সম্পর্কটাকে।
তপু একটু বদলে গেছে আজকাল। চুপচাপ ছেলে হিসেবেই পরিচিত ছিল সে, ক্লাসের মেয়েদের সাথেও খুব একটা মেশামিশি করতো না। আজকাল অকারণে হৈচৈ করে...মেয়েদের সাথে ফ্লার্টিং করে অলটাইম।
তার বন্ধুরা অবশ্য তাকে ঘাঁটায় না কারণ এমনিতে তপু খুব মেধাবী ছাত্র, যাই ঘটুক পরীক্ষায় তার নাম্বারের হেরফের হয়নি। তারমানে ভালই আছে সে। তবে চোখগুলো জ্বলজ্বল করে সবসময়, যেন ড্রাগ নিয়েছে ।
ফেসবুকে তপু আজকাল অনেকটা সময় কাটায়। এটা ব্যস্ত থাকার একটা ভাল উপায়।
অনেক পুরনো একাউন্ট তার, স্কুল,কলেজ,ভার্সিটির বন্ধু মিলিয়ে তার ফ্রেন্ড লিস্ট প্রায় পূর্ণ। নাদিয়া তাকে ছেড়ে যাবার পর মনের কষ্টে কয়েকটা কবিতার মত কিছু লেখার চেষ্টা করেছিল,কেন জানি সেগুলো সবার খুব পছন্দ হয়। লাইক আর শেয়ার হয় প্রচুর। প্রশংসাও পায় অনেক। অচেনা মানুষেরা ইনবক্সে এসে "বস,গুরু" বলে সম্বোধন করে, ফ্রেন্ডলিস্টে এড করার জন্য কাকুতি মিনতি করে।
ফলোয়ার সংখ্যা বাড়তে থাকে ধীরে ধীরে। এক সময় সে কবিতা ছেড়ে ছোট গল্প লিখা শুরু করে। বিচিত্র সব বিষয় নিয়ে লেখা গল্প গুলোর ভাষায় কিযেন যাদু আছে, সবাই পাগলের মত ভক্ত হয়ে যায় তার গল্পের, পোস্ট করা মাত্রই লাইক আর তৈলাক্ত কমেন্টের স্রোত শুরু হয়, ফলোয়ার বেড়ে ৫-৬ হাজার হয়ে যায় মাত্র একমাসে।
তপুর নেশা ধরে যায়। এটা খ্যাতির নেশা,মানুষের প্রশংসা আর ভক্তির নেশা।
একটা সময় সে ঘোষনা দিয়ে ছদ্মনামে চলে যায়,ব্যক্তিগত সব তথ্য সরিয়ে নেয় একাউন্ট থেকে। সময়ের স্রোতে তপু হারিয়ে যায় "নিঃসঙ্গ পথচারী" নামের আড়ালে, তপুর জগতটা পড়াশুনা,টিউশনি আর ফেসবুকের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে যায়।
প্রায় একবছর পরের কথা। ৬৪হাজার ফলোয়ারের একটা একাউন্টের মালিক তপু। কোনো বিতর্কিত বিষয় নিয়ে কখনও কিছু লিখেনা বলে ফেসবুকে তার শত্রু নেই।
প্রতিদিন একটা বা দুইটা পোস্ট দেয়, গড়ে হাজার ছয়েক লাইক পরে। কেন জানি একটুও এক ঘেয়ামি লাগে না তার লিখতে। মেসেজ বক্স উপচে পড়ে তার, মাঝে মাঝে চেক করে রক্ত বা চিকিৎসা সাহায্যের মত জরুরি কিছু আছে কিনা...এসকল ব্যাপারে তার সাহায্য করতে কোনো দ্বিধা নেই। একদিন সকালে ক্লাস নেই, ফেসবুকে ঢুকে মেসেজ বক্স খুলে বসে সে, কয়েকটা মেসেজ চেক করেই চমকে উঠে, নাদিয়া মেসেজ পাঠিয়েছে,সে তার ফলোয়ার, যদি তাকে ফ্রেন্ড লিস্টে এড করে খুব কৃতার্থ হবে- এই টাইপের কথা বার্তা।
ব্রেক আপ হবার পর আনফ্রেন্ড করে দিয়েছিল নাদিয়া তপুকে।
এতদিন পর এই আইডির পপুলারিটি দেখে আবার মেসেজ পাঠিয়েছে,টের পায়নি যে এটা তপুর আইডি। তপু একবার নাদিয়ার ওয়ালে যায়, গিয়েই মেজাজটা খিঁচড়ে যায় তার, চামচিকা মার্কা এক ছেলের সাথে ছবি কভার পিকচারে। এই ছাগলা দাড়ি উল্লুকের জন্য তাকে ছেড়ে চলে গিয়ে ছিল নাদিয়া? ইনবক্সে গিয়ে জবাব লিখে সে,"স্যরি, আমার ফ্রেন্ড লিস্টে জায়গা নেই আপাতত। ফলো করতে থাকুন। " কথাগুলো লিখে খুব তৃপ্তি পায় সে।
কেমন যেন একটা শীতল প্রতিশোধের অনুভূতি।
২১ শে বইমেলায় একটা বই বের হচ্ছে, ফেসবুকে তপু এই ঘোষনা দেয়ার পরই প্রায় ১০ হাজারের মত ক্রেতার আওয়াজ পাওয়া যায়। তারপর একদিন সে পোস্ট দেয়,তাম্রলিপি স্টলের সামনে ১০ তারিখ থাকবে,বিকেল পাঁচটায়। প্রিয় লেখককে দেখার জন্য ভীড় হয়ে যায় স্টলের সামনে, হাসি মুখে সবাইকে অটোগ্রাফ দিতে থাকে তপু। ভীড়ের মধ্যে তাকিয়ে হঠাৎ নাদিয়াকে দেখতে পায় সে।
চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। একটা মুচকি হাসি দিয়ে আরেকটা বই টেনে নেয় , অটোগ্রাফ দেয়ার জন্য। নাদিয়ার সজল চোখে প্রস্থান তার বুকে একটুও দীর্ঘশ্বাস সৃষ্টি করে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।