আজ নবফাল্গুন। সকালবেলায় ফরিদী ভাইয়ের হঠাৎ 'চলে যাওয়া' সংবাদে ছড়িয়ে পড়ল বিষাদ। একটা হাহাকার টের পাচ্ছি মনের ভেতর। ভাবলাম, আজ কোত্থাও যাব না। বাসায় শুয়েই কাটিয়ে দেব।
শুয়েই ছিলাম। কিছুক্ষণ আগে ফোন পেলাম, উজ্জ্বলের ফোন। উজ্জ্বলের প্রথম কবিতার বই বেরুচ্ছে। নামলিপি আমাকে করতে হবে। আমার বাসার সামনেই কাঁটাবন বিশ্ববিদ্যালয় মার্কেট, সারি সারি পাখির দোকান, ফুলের দোকান, অ্যাকুরিয়ামের দোকান।
ওখানেই, 'পুনশ্চ'তে বইয়ের কাজ চলছে। পুনশ্চ'র রিযাজ ভাই, উজ্জ্বল আর আমি চা খেতে নামলাম। রাস্তা হলুদ হয়ে গেছে, সাজুগুজু মেয়েদের শাড়িতে শাড়িতে। সুন্দর। উজ্জ্বল বলল, সকালে ও ফরিদী ভাইয়ের বাসা হযেই এসেছে।
উজ্জ্বলেরও মনখারাপ, ফরিদী ভাইয়ের জন্যে। চা'র দোকানে দাঁড়িয়ে আমরা কথা বলছি ফরিদী ভাইয়ের সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো নিয়ে...নতুন সিনেমা নিয়ে...আর্ট-কালচার নন্দনজগৎনিয়ে...রিয়াজ ভাই বললেন, 'ওই যে দ্যাখেন, সিনেমা...'
দেখলাম।
আমাদের অদূরেই ৪/৫ জন মহিলার জটলা। সঙ্গে একজন পুরূষ। তার হাতে দলিলের স্ট্যাম্প।
সে একজন দালাল। আরেক মহিলার কোলে একটা শিশু তোয়ালে দিয়ে জড়ানো। '২ সপ্তাহের শিশু' রিয়াজ ভাই বললেন। মাত্র ৫০০০ হাজার টাকায় শিশুটা বিক্রি করা হচ্ছে। সেই ৪/৫ জন মহিলার চোখে কেমন যেন এক কৌতূহল।
খানিকটা লুকোছাপাও লক্ষণীয়।
'বাচ্চাটার মা কে?'
'ওই যে...'
দেখলাম। ছেড়ামলিন বসনের এক নারী, আমাদের চিরকালের মা। তার চোখে শুকিয়ে য়াওয়া অশ্রু। ধ্বস্ত-বিধ্বস্ত, ক্লান্ত।
মনে হলো, না-ঘুমোনো মানুষ। সেই মা'র চোখে আটকে রাখা কান্না। সভ্যতার সবচেয়ে অসহায় নারী। তার সঙ্গে কেউ নেই। আমরা তিনজন কী বলব, কী করব_বুঝতে পারছি না।
আমরা নির্বাক দর্শক। ৫০০০ টাকায় আপন সন্তানকে বিক্রি করতে হচ্ছে তাকে। তাকে দেখেই টের পেলাম, ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে সন্তান বিক্রি করতে হচ্ছে। কেমন যেন ভাবলেশহীন ঐ মা কি কোনো পাগলি? কিংবা কিছুই জানি না তাকে।
বন্ধুরা, মানুষের কতরকম বেঁচে থাকা থাকে।
এটাও কি বেঁচে থাকা? মনটা আরো খারাপ হয়ে গেল। জানি, কোনো গণমাধ্যমই ঐ মা'কে কাভারেজ করবে না। আমরা কেউ জানব না কিছু। বাসায় ফিরলাম। ভাল্লাগছে না।
মোটেই না। কি করতে পারি? ধুর, এত এত মনখারাপ হয়, এত মনখারাপ হওয়া তো ভালো না। গান শুনব? কোন গান? কার গান?
'...সুখে আছে যারা, সুখে থাক তারা
সুখেরও বসন্ত সুখে হোক সারা
দু;খিনী নারীর নয়নের নীর
সুখিজনে যেন দেখিতে না পায়...'
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।