আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি জিনের বাদশাহ..................................

শুধু জিন নয়, সে জিনের বাদশাহ। জিনের চিকিৎসকদেরও নাকি বাদশাহ সে। বয়স ৯৬৩ বছর, চিকিৎসা দিয়ে আসছে ৭৬৩ বছর ধরে। বোম্বে শহরতলির জাতুয়ার এলাকায় ওই শাহী জিনের জন্ম, কুসুম্বায় স্থায়ী বসবাস। বর্তমানে রেজাউল করিম ভুতু নামে এক ব্যক্তির শরীরে ভর করে সর্ব রোগের চিকিৎসা দিয়ে আসছে ওই শাহী জিন।

ভুতু জানান, তার বশীভূত ওই জিনের বাদশাহর নাম রুহুল আমিন ওরফে রুহুলে আলা। পিতার নাম মানতুসুরা। কথিত ওই জিনের বাদশাহর কথা বলে দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে চিকিৎসার নামে প্রতারণার ব্যবসা চালিয়ে আসছেন রেজাউল করিম ভুতু। নওগাঁর মান্দা উপজেলার সাবাই বাজারের অদূরে উত্তরে মহাসড়ক সংলগ্ন কেশবপুর ঝাঁঝর গ্রামের একটি আমবাগানের ভেতর নির্জন বাড়িতে সর্ব রোগের দাওয়াই খুলে বসেছে। দাওয়াখানায় গিয়ে দেখা গেছে তার জমজমাট ব্যবসা।

দূর-দূরান্ত থেকে তিন শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন তার দাওয়াখানায়। এদের মধ্যে কলেজ প্রভাষক থেকে বিভিন্ন উচ্চ-মধ্য শ্রেণী-পেশার মানুষদেরও দেখা গেছে। বিভিন্ন অসুখে এরা চিকিৎসা নিতে আসলেও সন্তান না হওয়া দম্পতিদের দেখা মিলেছে সবচেয়ে বেশি। এছাড়া যৌন সমস্যা, প্যারালাইসিস, ডায়াবেটিস রোগীদের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। কেউ কেউ দামি গাড়ি নিয়ে সেখানে আসলেও সংকোচবশত নিজেদের পরিচয় ও সমস্যার কথা জানাতে চাননি।

রাজশাহীর কাদিরগঞ্জ আমবাগান এলাকার সাইদুর রহমান ও দুর্গাপুর উপজেলার উজাল খলসী গ্রামের আফজাল হোসেন স্ত্রী নিয়ে প্রথমবার এসেছিলেন ভুতুর দাওয়াখানায়। তারা কি রোগে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন তা বলতে চাননি। তবে ভুতু কবিরাজের লোকজন জানান, তারা এসেছেন সন্তান প্রাপ্তির আশায়। নওগাঁ সদর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের সুলতান আহমেদ বাত রোগে, মোহনপুর খোলাগাছি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র গোলাপ হোসেন পায়ের ব্যথায় হাঁটতে না পারা, মতিহার মোহনপুর এলাকার মোজাম্মেল হক এলার্জি রোগের চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন বলে জানান। মৌগাছি মোহনপুর এলাকার শফিউর রহমান প্রস্রাবের সমস্যা নিয়ে তৃতীয়বারের মতো এসেছিলেন।

তিনি জানান, রোগের উপশম না হলেও এখনও আশা ছাড়েননি। নিয়ামতপুর এলাকার আশিফা নামে এক যুবতীকে মেয়েলী অসুখের চিকিৎসা দিতে তার পিতা এসেছিলেন সঙ্গে নিয়ে। কিন্তু কথিত চিকিৎসক ও তার দাওয়াখানা ঘুরে আস্থা না পেয়ে শেষ পর্যন্ত চিকিৎসা না নিয়েই ফিরে গেছেন তারা। দাওয়াখানা ঘুরে দেখা গেছে, বাড়ির পশ্চিম ভিটার পশ্চিম দুয়ারি ঘরে আসন পেতে বসে আছেন কথিত জিনের বাদশা রেজাউল করিম ভুতু। ঘরে ভুতু ছাড়াও শফিকুল ইসলাম নামে তার এক সহযোগীকে দেখা গেছে।

আরও দেখা গেছে বিভিন্ন হারবাল কোম্পানির ওষুধের স্তূপ। আসনের পাশে রয়েছে ১২ ইঞ্চির মতো একটি লম্বা হাড়, পিতলে মোড়ানো একটি লাঠি ও দেয়ালে টানানো রয়েছে মানুষের কঙ্কালের ছবি। কবিরাজ ভুতু জানালেন রোগের বর্ণনা শুনতে হয় না। হাড় ও পিতলে মোড়ানো লাঠিটিই তার কম্পিউটারের মতো সকল রোগের লক্ষণ চিহ্নিত করে দেয়। ঘরের দরজা বন্ধ রেখে একজন করে রোগীকে ভেতরে ডেকে নিয়ে ব্যবস্থাপত্রসহ দেয়া হচ্ছে হারবাল কোম্পানির ওষুধ, মালিশ মলম, হালুয়া, মধু, মদক ও শরবতের সিরাপ।

আরও রয়েছে বিভিন্ন ব্যান্ডের যৌন উত্তেজক এনার্জি ড্রিংকস, ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল। এভাবে তিনি প্রত্যেক রোগীর কাছ থেকে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। কথিত জিনের বাদশাকে এসব কাজে সহযোগিতা করছেন বিভিন্ন হারবাল কোম্পানির প্রায় ডজনখানেক রিপ্রেজেন্টেটিভ। বাইরে অপেক্ষমাণ রোগীদের সিরিয়াল তৈরির জন্য একজন মহিলাকে নিযুক্ত রাখা হয়েছে। সাংবাদিক পরিচয়ে তার নাম জানতে চাওয়া হলে তিনি কৌশলে সটকে পড়েন।

বাড়ির অন্য ঘরগুলোতে জমা রয়েছে বিপুল পরিমাণ হারবাল কোম্পানির ওষুধ। কবিরাজ ভুতু দাবি করেন প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকার ওষুধ তার ঘরে মজুদ রয়েছে। তিনি আরও দাবি করেন, জিনের বাদশাহ রুহুল আমীন জিনের ভাষায় ব্যবস্থাপত্র লিখে দেন। এর তর্জমা করে দেন ৬ষ্ঠ শ্রেণী পাস ভুতুর সহযোগী শফিকুল ইসলাম। শফিকুল ইসলাম জানান, ৩ হাজার টাকা বেতনে প্রায় ৫ বছর ধরে তিনি ভুতুর সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন।

এলাকা ঘুরে জানা গেছে, রোগী দেখার পাশাপাশি রাতের অন্ধকারে ওই দাওয়াখানায় নামী দামি গাড়ি নিয়ে অনেক লোক আসা যাওয়া করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিবেশী জানান, কথিত ওই জিনের আস্তানায় রাতের অন্ধকারে মাদক ও নারী ব্যবসা হয়ে থাকে। এসব অবৈধ ব্যবসা দিয়ে তিনি অঢেল বিত্তবৈভবের মালিক বনে গেছেন। কথিত জিনের বাদশাহ রেজাউল করিম ভুতুর পরিচয়: উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের সাঁটইল গ্রামের দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান। পিতার নাম আবদুল হাকিম।

কোনদিন বিদ্যালয়ে যাননি। পিতার অভাবের সংসারে হাল ধরতে উপজেলার দেলুয়াবাড়ী বাসস্ট্যান্ডে রুটি বিক্রির ব্যবসা শুরু করেন। এক সময় স্বপ্নের মাধ্যমে পরিচয় ঘটে জিনের বাদশাহ রুহুল আমীনের সঙ্গে। রুটি ব্যবসা ছেড়ে তার দেয়া হাঁড়গোড় নিয়ে শুরু করেন চিকিৎসার নামে প্রতারণার ব্যবসা। থানার অফিসার ইনচার্জ আবদুল্লাহেল বাকী জানান, বিষয়টি শুনেছি।

তদন্ত চলছে, আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোজাহার হোসেন বুলবুল জানান, চিকিৎসাশাস্ত্রে এ ধরনের চিকিৎসার কোন বৈধতা নেই। এটি প্রতারণা ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সূত্র : বিডিনউজ.কম  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।