তরুণ নামের জয়মুকুট শুধু তাহার, বিপুল যাহার আশা, অটল যাহার সাধনা কাতারের ধর্ম মন্ত্রণালয় এর আওতাধীন একটি ইসলামিক কালচারাল সেন্টার হচ্ছে- ফানার। এ সেন্টারের তত্ত্বাবধানে কাতারে বসবাসরত বিভিন্ন দেশের মুসলিম নাগরিকদের জন্য তাদের স্বদেশী আলেমদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়ে কাতারে মাহফিলএর ব্যবস্থা করে থাকে। সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশীদের অনুরোধে ফানার বিভিন্ন সময়ে এ দেশ থেকেও আলেমদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়ে কাতারে প্রবাসীদের উদ্দেশে বয়ান ও নসীহতের ব্যবস্থা করেছে। ফানার এর আমন্ত্রণে কাতার সফর করেছেন মুফতী ফজলুল হক আমিনী, হাটহাজারীর মাওলানা শাহ আহমদ শফী, শায়খুল হাদীস আল্লামা আজীজুল হক।
চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে ফানার এর তত্ত্বাবধানে কাতার সফরে যান মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী।
সেখানকার বিভিন্ন জায়গায় বাংলাদেশীদের উদ্দেশে তিনি ওয়াজ করেছেন। স্থানীয় একটি হোটেলে জামাত এর সংগঠন কুরআন সুন্নাহ পরিষদ কাতার এর উদ্যোগে আয়োজিত এমনি এক সুধী সমাবেশে সাঈদী ওয়াজের মাঝখানে বিশিষ্ট সাহাবী আমর ইবনুল আস রা.কে গালি দিয়ে ধোঁকাবাজ বলে আখ্যায়িত করে বসেন। বিতর্কিত নারী নেতৃত্বের বিপে কুরআন হাদীসের কোথাও কোন নিষেধাজ্ঞা নেই বলে তিনি বয়ান করলেন। বেফাঁস কথাবার্তার এক পর্যায়ে চরমোনাইর মরহুম পীরকে তিনি বেআদব বলে বসেন।
তার এ কয়েকটি কথায় উপস্থিত সচেতন উলামায়ে কেরাম ফুঁসে ওঠলেন।
সাঈদীর এমন অজ্ঞতাপূর্ণ মন্তব্যের প্রমাণ হিসেবে যারা ভিডিও রেকর্ড করেছিলেন- অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর তাৎণিকভাবে সেখানে উপস্থিত জামাতকর্মীরা সবার মোবাইল থেকে ভিডিওটি সিডি আকারে তাদেরকে দেওয়া হবে বলে জোর করে মুছে ফেলে।
উপস্থিত কয়েখজন আলেম ঘটনাটি কাতারের ধর্ম মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানালেন। এভাবে একে একে সাতাশটি রিপোর্ট জমা হলো কাতার ধর্ম মন্ত্রণালয়ে। এতে নড়েচড়ে বসলো ফানার।
কয়েক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে সাঈদীকে তার ভ্রান্ত ধারণা পরিবর্তন করার তাগিদে এ বিষয়ের নির্ভরযোগ্য কয়েকটি কিতাব দিয়ে তার কাছে পাঠানো হলো।
সাকাফাতুদ্দায়ী এবং ইতিকাদু আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহ গ্রন্থদুটিও তার কাছে পাঠনো হলো। এ গ্রন্থদুটির লেখক আরব বিশ্বের প্রখ্যাত গবেষক আল্লামা ইউসুফ কারযাভী।
তদন্তদলে দু একজন এমনও ছিলেন যারা সাঈদীকে তার ওয়াজের কারণে ভালোবাসতেন। তারা চাচ্ছিলেন, বিষয়টি যেন সহজে সুরাহা হয়ে যায়। কিন্তু সবাই অবাক হয়ে দেখতে লাগলেন, সাঈদী কিতাবদুটোর নামটুকুও আরবীতে পড়তে পারছেন না।
তার এমন দুর্গতি দেখে তাৎণিকভাবে উর্দু অনুবাদ এর ব্যবস্থা করা হলো, তিনি সেটিও দূরে ঠেলে দিয়ে বললেন, আমাকে বংলায় বুঝিয়ে দিন। নারী নেতৃত্ব বিষয়ে যখন তাকে পড়ে শোনানো হলো- ...কোন অবকাশ নেই। তিনি বলে উঠলেন, অবকাশ নেই বলা হয়েছে, জায়েজ নেই’ কথাটি তো লেখা নেই। উপস্থিত লোকজন তার বোধশক্তির স্বল্পতা দেখে অবাক হয়ে গেলেন।
ফানার এ তখন পরিচালক ছিলেন বারেক আলাওয়ী।
তিনি সাঈদীর এমন কান্ড শুনে রেগে উঠলেন। তার উপদেষ্টাদের জানালেন, এ লোকটিকে এখানে গ্রেফতার করা হোক। উপদেষ্টাদের একজন জনাব বাসিইউনী (মিশরীয় আলেম) তাকে বুঝিয়ে গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত না নিতে অনুরোধ করলেন।
পূর্ণ তদন্তের পর কাতার এর ধর্ম মন্ত্রণালয় এবং ফানার তখনই মাওলানা সাঈদীকে সতর্কবার্তা জানিয়ে তাকে কাতারে অবস্থানকালীন আর কোন সমাবেশ কিংবা সভায় বক্তৃতা দেয়া থেকে নিষেধাজ্ঞা জারী করে। এ লোক যেন ভবিষ্যতে আর কোনদিন কাতারে আসতে না পারে- সেজন্য তার নামে স্থায়ীভাবে নিষেধাজ্ঞা লিখে রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সাঈদী দুবাই গিয়ে অনেকদিন অপো করছিলেন কাতারে প্রবেশ করার জন্য, কাতার এর জামাত নেতারা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েও তাকে আর কাতারে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে পারেনি।
সাঈদীর এমন জ্ঞানের স্বল্পতা দেথে ফানার এর এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা মন্তব্য করেছিলেন, এ লোকটির ওয়াজ শুনতে নাকি হাজার হাজার মানুষ আসে- তোমাদের দেশে ইসলামের কি এতই করুণ অবস্থা!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।