হেঁটে হেঁটে যতদূর চোখ যায় ইতিহাসের ছাত্র রুবেল। সদ্য এমএ পাস করেছে। বর্তমানে চাকরির ধান্দায় আছে। তাই বিরতিহীন ইন্টারভিউ দিয়ে চলেছে। কিন্তু চাকরি হচ্ছে না।
হবে কি করে? এ যুগে মামা চাচা ছাড়া চাকরি হওয়াটা অতি বিরল ব্যাপার! তাই রুবেলেরও কিছু হয়নি। তবুও সে বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে। কেননা ছোটবেলায় সে পড়েছিল, সংসার সাগরে দুঃখ তরঙ্গের মেলা/আশা তার একমাত্র ভেলা। এই ভেলায় যে তাকে আরও কতকাল ভাসতে হবে তা বিধাতাই জানেন! তবুও রুবেল ভেসেই চলেছে।
একটু পরে রুবেলের একটা ইন্টারভিউ হবে।
পোষ্ট হচ্ছে সেলস অফিসার। বেতন মোটামুটি। আজকে ইন্টারভিউর প্রথম ধাপ-লিখিত পরীক্ষা। এতে টিকলে ভাইভা। তাতে টিকলে লোক ধরাধরি।
তাতে টিকলে ডোনেশন এবং এতে টিকলে চাকরি!
যাহোক, কিছুক্ষণ পর লিখিত পরীক্ষা শুরু হলো। কিন্তু প্রথম প্রশ্নটা থেকেই তার চোখ কপালে উঠল। হাত-পা ঠণ্ডা হতে আরম্ভ করল। কলমের মাথার বল যেন জমে গেল। কোথায় যেন রুবেল পড়েছিল টেনশন কমানোর জন্য এক থেকে একশ পর্যন্ত উল্টো করে পড়তে হয়।
কিন্তু ওর হাতে এখন অত সময় নেই। তাই সে দশ থেকে শুরু করল দশ, নয়, আট, সাত...। সে প্রশ্নটা আবার পড়ার চেষ্টা করল, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক কে?
ইতিহাসের ছাত্র রুবেল। তার তো এ প্রশ্নের উত্তর ঝড়ের বেগে লিখে ফেলা উচিত। কিন্তু কথায় বলে না ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না।
তাই রুবেল ভাবতে বসল। বর্তমান সময়টা টেকনিকের যুগ। উত্তরটা তাই টেকনিক্যালি দিতে হবে- যাতে সাপও মরে, লাঠিও না ভাঙ্গে। কিন্তু কি করা যায়? এদিকে সময়ও চলে যায়। আচ্ছা এক কাজ করলে কেমন হয়, যা সত্য তাই লিখে দিই।
কিন্তু মালিকপক্ষ যদি সত্যের সাপোর্ট না করে। তাহলে তো চাকরি হবে না। আবার মিথ্যাইবা লিখি কি করে! বিবেক বলে একটা কথা আছে না। চাকরির জন্য মনুষ্যত্ব বিসর্জন দেয় কি ঠিক? ঠিক না। তবে কথায় বলে, প্রয়োজন আইন মানে না।
আমার এখন চাকরির প্রয়োজন। প্রয়োজনে মিথ্যা লেখা তো দোষের কিছু না। তবুও সমস্যা থেকেই যাচ্ছে- মালিকপক্ষ আসলে কোন পক্ষের? সরকারদলীয় না বিরোধী দলীয়? মনে করি, মালিক পক্ষ সরকারদলীয়। তাই সরকারের মনের মতো উত্তর লিখলাম, চাকরি হলো। কিন্তু ভবিষ্যত তো শঙ্কামুক্ত থাকল না।
বাংলাদেশে ইদানীং প্রতি পাঁচ বছর পর পরই তো ইতিহাস পরিবর্তিত হচ্ছে। তাই বিরোধী দল ক্ষমতায় এসে তো আমার চাকরি খেয়ে নেবে।
এভাবে রুবেল যখন হাজার ভাবনার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে তখন কে যেন বলল স্টপ রাইটিং। তার মানে পরীক্ষার সময় শেষ। অথচ রুবেলের একটা প্রশ্নেরও উত্তর দেয়া হয়নি, যাক।
ব্যাপার না। সংসার সাগরে দুঃখ তরঙ্গের... আশা... একমাত্র ভেলা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।