আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইন্টারভিউ

লিখতে ভাল লাগে, লিখে আনন্দ পাই, তাই লিখি। নতুন কিছু তৈরির আনন্দ পাই। কল্পনার আনন্দ। ইন্টারভিউ মোহাম্মদ ইসহাক খান বাংলাদেশের দীর্ঘতম নদীর নাম কী? বলতে পারছি না স্যার। পদ্মা? অন্ধকারে ঢিল মারল ছেলেটি।

পদ্মা তো এখন বালুর চর হয়ে গেছে। আচ্ছা বলুন, সূর্যের পৃষ্ঠ তাপমাত্রা কত? ঠিক জানি না স্যার। দাঁড়ান স্যার, একটু ভেবে বলছি ... ... একটি ফ্রিজিয়ান গরু দৈনিক কত লিটার দুধ দেয়? এটা আমি জানতাম স্যার, কিন্তু মনে পড়ছে না। আপনার দেশের বাড়ি কোথায়? জি, স্যার? দয়া করে প্রশ্নটা আবার করবেন? আপনার দেশের বাড়ি কোথায়? যশোরে। একজন বিখ্যাত মানুষের নাম বলুন, যিনি যশোরে জন্মেছেন।

এবার ছেলেটি বেশ নড়েচড়ে ওঠে। মাইকেল মধুসূদন দত্ত। তিনি কী লিখতেন? সবই লিখতেন, গল্প, কবিতা। তবে বাংলায় প্রথম সনেট তিনি রচনা করেছিলেন। সেই সনেট তিনি বাংলা কত সালের কোন্‌ মাসে লেখেন? ছেলেটির চেহারা খাবি খাওয়ার মতো হয়।

ঠিক বলতে পারছি না স্যার। ঠিক আছে, সহজ প্রশ্ন করি। উনি প্রথম সনেটটা দাঁড়িয়ে না শুয়ে লিখেছিলেন? ছেলেটি শুন্য দৃষ্টিতে তাকায়। চীনা ভাষায় "শুভ সকাল" বাক্যটি কীভাবে বলে? জানি না, স্যার। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম খাদ্যমন্ত্রীর নাম কী? জানি না, স্যার।

মিশরের পিরামিডে মোট কতগুলো পাথর আছে? জানি না, স্যার। আপনি তো দেখছি কিছুই জানেন না। ছেলেটি মাথা নিচু করে থাকে। এতক্ষণ সে একটু-আধটু চেষ্টা করছিলো, কিন্তু এখন হাল ছেড়ে দিয়েছে। পরপর তিনটি প্রশ্নের জবাবে সে সরাসরি বলেছে, "জানি না স্যার।

" যদিও ফুটপাত থেকে কেনা বিশ টাকা মূল্যের "চাকরির ইন্টারভিউতে ভালো করার ১০১ টি সহজ উপায়" বইটিতে স্পষ্ট বলা আছে, কোন প্রশ্নের জবাবে "জানি না" বলা যাবে না কোনমতেই। বলতে হবে অন্য কিছু, ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে, যেন আমি সবই জানি, কিন্তু "এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না"। প্রশ্নকর্তারা সব অফ-ষ্ট্যাম্পের বাইরে বল করছেন, খোঁচা মারতে গিয়ে ইতোমধ্যেই ছেলেটি কয়েকবার "কট বিহাইন্ড" হয়েছে। মোটাসোটা ভুঁড়িওয়ালা প্রশ্নকর্তাটি বললেন, আপনি এবার আসতে পারেন। ছেলেটির হঠাৎ খুব রাগ হয়, মাথায় রক্ত চড়ে যায়।

চোখ তুলে বলে, এভাবে ডেকে এনে তামাশা করার কী মানে ছিল স্যার? আপনি কী বলতে চাইছেন? কী বলতে চাইছি তা আপনি ভাল করেই জানেন, স্যার। আমি যে পদে আবেদন করেছি, সেটা রিসিপশনিস্টের পদ। আমি শুধু লোকজনের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেবো, শিডিউল ঠিক করবো। কিন্তু আপনারা যেসব প্রশ্ন করলেন, বাংলাদেশের দীর্ঘতম নদী কোনটি, ফ্রিজিয়ান গরু কত দুধ দেয়, মিশরের পিরামিডে কতগুলো পাথর আছে, এসবের তো আমার চাকরির সাথে কোন সম্পর্কই নেই। আপনারা যদি আমাকে কাজের সাথে সম্পর্কিত কোন প্রশ্ন করতেন, যদি জিজ্ঞেস করতেন যে ক্লায়েন্টের সাথে কেমন ব্যবহার করতে হবে, কীভাবে খারাপ অবস্থা সামাল দিতে হবে, তাহলে আমি অবশ্যই পারতাম।

মিশরের পিরামিডে কতগুলো পাথর আছে, কিংবা ফ্রিজিয়ান গরু ক'লিটার দুধ দেয়, তা জেনে একজন রিসিপশনিস্ট কী করবে? এবার প্রশ্নকর্তাদের একজন চোখ গরম করে বললেন, আপনি কি বলতে চাইছেন, এই বিজ্ঞ জুরিবোর্ডের সদস্যরা কিছু না বুঝেই আপনাকে উল্টোপাল্টা প্রশ্ন করতে বসেছেন? তাঁদের সময়ের কোন দাম নেই? তাঁরা ভেরেণ্ডা ভাজতে এসেছেন? আপনি মহা পণ্ডিত? আমরা বোকা? অবশ্যই, স্যার। আপনারা বিজ্ঞ নন, অতি অতি অজ্ঞ। আপনারা আমাদের মতো ছেলেমেয়েদের সাথে একটা খেলা খেলছেন। আপনারা মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত এক একটা ছাগল। কী বললেন? আমরা ছাগল? অবশ্যই ছাগল।

ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের দেশী ছাগল নয়, যমুনাপড়ি, লম্বা পা আর কানওয়ালা রামছাগল। আপনি এই মুহূর্তে এখান থেকে বেরিয়ে যান। গেট আউট। ছেলেটি ঝড়ের বেগে বেরিয়ে যায়। ইন্টারভিউ শেষ।

এই ছেলেটি ছিল শেষ ক্যান্ডিডেট। প্রশ্নকর্তারা খানিকক্ষণ চুপচাপ বসে থাকেন। তারপর ফেটে পড়েন হাসিতে। হো হো, হি হি। একজন হাসতে হাসতে বলেন, যা-ই বলুন, ছেলেটার কিন্তু তেজ আছে।

আরেকজন বললেন, এই বয়সে একটু তেজ থাকেই। রোদে ঘুরে চাকরি খুঁজতে খুঁজতে আর ইন্টারভিউ দিতে দিতে সব চর্বি গলে পানি হয়ে যাবে, তখন আর তেজও থাকবে না। কত দেখলাম। সবাই মিলে রিপোর্ট পাঠিয়ে দেন, "মেধার ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই করে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে রিসিপশনিস্ট নিয়োগ করা হল। " কাল সকালেই ইন্টারভিউ বোর্ডের সকল সদস্যের বাসায় পৌঁছে যাবে বাদামী খামে ভরা সুগন্ধযুক্ত "বখরা"।

এটাই এই অফিসের নিয়ম, আগে থেকেই ঠিক করা আছে কাকে নিয়োগ করা হবে, কিন্তু ইন্টারভিউ বোর্ড বসিয়ে সবাইকে দেখাতে হবে যে তাঁরা "প্রকৃত মেধা" যাচাই করছেন। কড়কড়ে নোটের গন্ধের মধ্যে একটা মাদকতা আছে। *** সেই ছেলেটি এখনো দুপুর রোদে ঘুরে ঘুরে চাকরি খোঁজে। ইন্টারভিউ দিয়ে বেড়ায়। বলাই বাহুল্য, কাজ হয় না।

তবে ইন্টারভিউ বোর্ডের সেই লোকটির কথা সত্যি, এখন ছেলেটির শরীরের সব চর্বি গলে পানি হয়ে গেছে, মৌখিক পরীক্ষায় অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন শুনে আর মেজাজ খারাপ হয় না তার। মাথা নিচু করে ফিরে আসে সে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।