আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইন্টারভিউ !!

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! নিজের ডেস্ক থেকে পল্টু ভাইকে দেখলাম সম্পাদক কেবিন থেকে বের হতে । মুখটা কেমন জানি বিষন্ন । সোজাসুজি আমার কাছে এসে বসে পড়ল । -অপু খুব বিপদে পড়লাম রে ভাই । -কেই ভাই ? কি হল ? -আর বলিশ না ।

এই সম্পাদক বেটা এমন বিপদে ফেলে না মাঝে মাঝে ! মনে হয় চাকরি বাকরি ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে চলে যাই । -ভাই বলবেন তো কি হয়েছে ? -আর বলিশ না । মিলন ভাই এখন কয় আব্দুল জলিলের ইন্টার্ভিউ নিতে । দেখ দেখি কি বিপদ ! আমি একটু অবাক হলাম । মিলন ভাই আমাদের বিনোদন পাতার এডিটর ।

আমরা দুজন ওনার নিচেই কাজ করি । তা হঠাত্‍ উনি বিনোদন ফেলে রাজনীতির পেছনে ছুটলেন কেন ? প্রবীন রাজনীতি বিদ আব্দুল জলীলের ইন্টারভিউ নিতে কেন বলবেন ! একটু তো চিন্তার বিষয় ! আমি বললাম -আব্দুল জলীল মানে আওয়ামেলীগ নেতা তো ? কিন্তু ওনার মত এতো বড় লোক কি আমাদের কে সময় দেবেন ? পল্টু ভাই আমার কথায় মনে হয় একটু বিরক্ত হল । বলল -আরে দুর মিয়া ঐ লোক না । -তাহলে আব্দুল জলীল কে ? মানে কোন আব্দুল জলীল ? -আরে নায়ক আব্দুল জলীল । আমি ঠিক বুঝতে পারলাম পল্টু ভাইয়ের কথা ! আমি এই লাইনে অল্প কয়েক দিন এসেছি তবে খোজ খবর আমার ভালই জানি ।

কিন্তু আব্দুল জলীল নামে কোন নায়ক আছে ? এটা তো আমি জানি না । পল্টু ভাইকে বললাম -ভাই আব্দুল জলীলটা কে ? পল্টু ভাই আমার কথা শুনে আরো বেশি বিরক্ত হল । -বেকুবের মত কথা বলবি না । আব্দুল জলীলকে চিনিস না আবার বিনোদন পাতায় লেখিস ! তোর নামে তো কেইস করে দেওয়া উচিত্‍ ! আমি আর খানিকটা খাবি খেলাম । কি রে ভাই জলীলটা আবার কে ? বড় কোন নায়ক ? নতুন নায়ক ? আমি জানি না ? আমি লজ্জিত হয়ে বললাম -ভাই একটু যদি বলতেন ।

আপনার সাথে আমিও যেতাম ! এবার দেখলাম পল্টু ভাইয়ের মুখটা একটু উজ্জল হয়ে গেল । -সত্যি যাবি ? যাক আমাকে একটু বাচালি ! তুই পাশে থাকলে একটু ভাল লাগবে । বুকে বল পাবো । এতো বড় একজন মানুষের ইন্টারভিউ নিতে আমার তো সাহসই হচ্ছিল না । আমি আবার বললাম -ভাই একটু যদি বলতেন ।

পল্টু ভাই বলল -আরে চিনলি না ? তার একটা মুভিতো এখন স্টার সিনেপ্লেক্সে চলছে । আমি আরো অবাক হলাম । স্টার সিনে তে চলছে আর আমি জানি না । আচার্য বিষয় । -কি নাম ? -আরে ঐ যে "সর্বাধিক স্বাগতম" ।

-কি বললেন ? এটা আবার কোন মুভি ? "সর্বাধিক স্বাগতম" ! পল্টু ভাই বলল -আরে আর একটা মুভি করেছে তো "গতি টি" ! "গতি টি" ?? -তারপর "খোজ" আর "হার্ট ব্রেকিং ব্লো" । এতোক্ষনে আমি আব্দুল জলীলকে চিনলাম । কিন্তু ওনার নাম তো আব্দুল জলীল না । -ভাই ওনার নাম তো আব্দুল জলীল না । সীমান্ত জলীল ।

-আরে আব্দুল জলীল । তুই তো কিছুই জানিস না । আহে নাম আব্দুল জলীলই ছিল । এখন ছিনেমার নায়কের নাম আব্দুল জলীল হলে কেমন দেখায়য় তাই নাম রেখেছে সীমান্ত জলীল ! কিন্তু জলীল মিয়া কে চিনতে পেরেই আমার মনে হল কি এক মারাত্বক ভুল করে ফেলছি । এই লোকের ইন্টারভিউ নেওয়া আর হাটু পানি ডুবে মরা একই কথা ।

না না ! এই ফাঁদে তো পা দেওয়াই যাবে না । আমি পল্টু ভাই কে বললাম -ভাই আমার একটা জরুরী কাজ মনে পড়ে গেল । আমাকে এখনই জেতে হবে ! পল্টু ভাই বলল -শোন অপু মেজাজ খারাপ করবি না । চুপচাপ আমার সাথে চল । আমাকে প্রায় জোর করেই নিয়ে গেলেন ।

আমরা সুপারষ্টার আব্দুল জলীলের বাড়ির সামনে হাজির হলাম । বেটা মুভি যেমনই বানাক না কেন বাড়ি একখান বানিয়েছে । আমি আর পল্টু ভাই বাড়ির সামনে দাড়িয়ে থাকা দাড়োয়ান কাছে গিয়ে বললাম -তোমার স্যার কে গিয়ে বল যে পত্রিক অ ...... আমার কথা শেষ করার আগেই পল্টু ভাই আমার হাত চেপে ধরল । আমাকে চুপ করতে ইশারা করল । আমি পল্টু ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম -কি ? -আরে চুপ ।

তারপর পল্টু ভাই দাড়োয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল -স্যার ভাল আছে ? আমার ছোট ভাইটি আপনাকে ঠিক চিনতে পারে নি । কিছু মনে করেন না । আমি দাড়োয়ানের দিকে ভাল করে তাকিয়ে যেন আকাশ থেকে পড়লাম । আরে এই লোক এখানে কি করে ? এই লোকের সমস্যা কি ? এই লোককে তো আমি চিনতেই পারি নি । কিন্তু আসল কথা হল এই লোক এই খানে দাড়োয়ানের পোষাকে কি করে ? জলীল সাহেব আমার দিকে তাকিয়ে বলল -ইউ পম পেপার ? প্রথম প্রথম আমার একটু সন্দেহ ছিল যে এটা আমাদের সুপারস্টার নাও হতে পারে ।

কারন এতো বড় একজন নায়ক দায়োয়ান হতে পারে না কিন্তু এখন আমি নিশ্চিত যে এই সেই পাবলিক । ইউ পম পেপার ! -ইয়েস । উই পম পেপার ! -হুইছ পেপার ? পল্টু ভাই বলল -স্যার আমরা দৈনিক রাতে আলো থেকে এসেছি । আপনার যদি একটু সময় হতো তাহলে ? সুপারস্টার বলল -আমি তো খুব ব্যস্ত এখন । ব্যস্ত ? এই বেটা বলে কি খাম্বার মত এখানে দাড়িয়ে রয়েছে আবার বলে ব্যস্ত ।

পল্টু ভাই বলল -স্যার আমরা তো জানি সব সময়ের অনেক মূল্য ! তবুও যদি একটু সময় আমাদের জন্য সময় বের করতেন ? -আইচ্ছা তোমরা ভিতরে যাও আমি আসতেছি । আমি অবাক না হয়ে পারলাম না । বেটা বলছে ব্যস্ত ! কিন্তু ওখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে করছে কি ? আমি পল্টু ভাইয়ের কাছে বললাম -বেটা কি কাজে বিজি ? -কি জানি ? আমরা আলিশান ড্রয়িং রুমে সুপারস্টারের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম । তিনি এলেন আরো মিনিট পরেন পরে । এখন অবশ্য আর দাড়োয়ানের পোষাক পরা নেই ।

বসতে বসতে জলীল সুপারস্টার বলল -দেখুন আমি কিন্তু বেশি সময় নেই । এক তাড়াতাড়ি করতে হবে । -জি জি অবশ্যই । আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই জলীল মিয়া বলল -আপনারা এডুকেটেড তো ? কি রে ভাই এটা আবার কি ধরনের কথা হল । -আপনারা দুজন কি হায়ার এডুকেটেড ? দেখুন আমি আন এডুকেটেড লোকেদের সাথে ঠিক মত কথা বলতে পারি না ।

আপনারা তো জানেন আমি ম্যানসিস্টার থেকে লার্ন করেছি । আপনারা কোথায় পড়েছেন ? পল্টু ভাই বলল -আমি ঢাকা কলেজ থেকে অনার্স পাশ করেছি তারপর আমাকে দেখিয়ে বলল ও -ঢাকা ভার্সিটি থেকে পাশ করেছে । জলীল সাহেব এবার আমার দিকে তাকাল । -তুমি তাহলে বেশি এডুকেটেড । ওকে ইউ কোয়েশচান কর ।

-আমি ? -হ্যা হ্যা তুমি । আমি ম্যানসিস্টার থেকে পড়েছি আর আমাকে কোয়েশচান করবে তুমি ? পল্টু ভাইয়ের মুখ কালো হয়ে গেল । আমি বললাম -আপনি দাড়োয়ানের পোষাকে কি করছিলেন ! আমি এই প্রশ্নটা করতে চাইনি । কিন্তু এতোই কৌতুহল হচ্ছিল যে মুখ দিয়ে বের হয়েই গেল । ভয় হচ্ছিল সুপার্ স্টার আবার রেগে না যায় ।

কিন্তু তিনি বললেন -ভাল প্রশ্ন করেছ ! আসলে আমাদের দেশে সব আন এডুকেটেড লোকে ভর্তি । কেউ আসল কথা আন্ডারস্টান্ড করতেই পারে না । শুধু শুধু প্যাচাল পাড়ে । আমি তো বুঝিই না এই দেশের লোকেরা এতো আন কালচারড কিভাবে হয় ! আমি তো ভাবতেই পারি না । তুমি ভাল প্রশ্ন করেছ ।

আসলে আমি যখন কোন মুভি করি তখন সেই ক্যারেটারের মধ্যে একদম ঢুকে পড়ি । তারই রিহারসাল করছিলাম । -মানে ? আপনি কি এবার দারোয়ানের চরিত্র করছেন । -একদম ঠিক ধরেছ । আমার পরবর্তী ছবির নাম "দাড়োয়ান যখন হিরু" ।

-ও আচ্ছা আচ্ছা ! এবারও কি যথারীতি ছবির ডাইরেক্টর, প্রডিউসার, হিরো, হিরোয়িন সব কি আপনি নিজেই ? কথাটা বলেই মনে হল কি বললাম ! হিরোয়িন ?? কিন্তু হিরু সাহেব টেরই পেলেন না আমি কি কি বলেছি । -হ্যা হ্যা সব আমি করছি । এমন হবে ছবির সব আমি একাই করছি । মনে মনে বললাম ছবির দর্শকও কি আপনি একাই । -তা আপনার নতুন ছবির বাজেট কত ? -একশ কোটি ।

-একশ কোটি !! এতো বিগ বাজেটের ছবি এই দেশে । -দেখ আমি এখানে আছি না । আমি একজন সুপারস্টার । আমি ইন্টারন্যাশনাল হিরু । টম ক্রুজ আমার কাছে ডালভাত ।

তাই আমি ৫০কোটির নিচে মুভি করি না । তারপর ধর আমি ডাইরেক্টর । আমার ফিস ২০ কোটি । এর নিচে তো আমি কোন মুভি বানাবো না । আমার একটা ইসটাটাস আছে না ।

-তা তো অবশ্যই । তা তো অবশ্যই । -আর আমার ওয়াইফ ও তো একজন সুপারস্টারের বউ । তারও তো একটা ইসটাটাস আছে । সেও ৩০ কোটির নিচে কোন মুভি করবে না ।

-তা তো অবশ্যই । -আচ্ছা এবার অন্য কিছু বলি ! কয়দিন আগে আপনি আর আপনার ওয়াইফ পিজ্জা হাটে গেছিলেন । ওখানে কি হয়েছিল ? দেখলাম জলীল মিয়ার মেজাজ একটু গরম হল । -আর বল না । যতসব আনএডুকেটেড ছেলে ! ঠিক মত কথা বলতে পারে না ।

ওরা ভুলে গেছে আই এম পম ম্যানসিসটার ! আমার সাথে কিভাবে কথা বলতে টাও জানে না !! আমাদের সাথে মিস আন্ডারস্টান্ডিং করলো কিন্তু একবার সরিও করলো না ! আমি আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলাম কিন্তু হুরু সাহেব বললেন -অবশ্য আমি উপর রাগ রাখি নি ! কেন বলবো? -কেন ? -ওদের একজকন আমাকে রিক্সায়ালার ছেলে বলে গালি দিয়েছিল । সেখান থেকেই আমি আমার নতুন ছবির থিম পেয়েছি ! ওদের কে আমি দেখাতে চাই রিক্সায়ালারও মানুষ ! -তাহলে তো রিক্সায়ালা যখন হিরু নাম রাখা উচিৎ ছিল ! -তা অবশ্য ছিল । কিন্তু তখন আবার আমাকে রিক্সা চালাতে হত ! ওটা আমার জন্য খানিকটা কষ্ট কর হয়ে যেত ! আমি আরো কিছু বলতে চাচ্ছিলাম কিন্তু হিরু সাহেব বলল যে তার ট্রেনিং এর সময় হয়ে গেছে ! আমি আর পল্টু ভাই বাইরে বেরিয়ে এলাম । (পুরো বক্তব্য কাল্পনিক । জীবিত মৃত কিংবা অর্ধমৃত কারো সাথে এর কোন সম্পর্ক নাই)  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।