কিছু না। ১
“একটা টি’শার্ট এর দাম কত হবে ? ” পুলক ভাই জিজ্ঞেস করলেন ।
“১২০০ টাকা । ” কোন ভাবাবেগ ছাড়াই বলে দিলাম ।
“ ফাজিলের ফাজিল ।
থাপড়াইয়া গালের দাঁত একটাও ফেলবো না । তবে এমন অবস্থা করবো যাতে দাঁত রাখতেও পারবি না, ফেলতেও পারবি না । ”
“ভাই কই থেইকা কিনবেন, সেটাই ব্যাপার । দাম ১২০০ ও হইতে পারে আবার ৮০ টাকাও হইতে পারে । ”
“সেটা বল ।
বাংলাদেশ টিমের টি’শার্ট কি এই দামে পাওয়া যাবে । ”
’টাইম ওয়েস্ট’, ক্রিকেট বিষয়ে এমন হিটলারি মনোভাবের লালনকারি পুলক ভাই বাংলাদেশ দলের টি’শার্টের দাম জিজ্ঞেস করছে ! আমরা বেশ বিস্মিত ।
বাবলু বললো “ ভাই, টি-২০ ম্যাচ কয় ওভারে হয় এসব প্রশ্ন ফেলে সরাসরি টি’শার্ট এর দাম, কাহিনি কি ? ”
জুয়েল দারুন এক সুযোগ নিলো “ ভাই, কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক পরীক্ষায় না ক্রিকেট বলের ওজন লিখেছিলেন আধা কেজি । ”
আমাদের প্রায় পৌনে এক গ্লাস হাসির শেষে পুলক ভাই থমথমে মেজাজে বললেন “ আপনাদের জোকস শেষ হলে এবার কাজের কথায় আসি”
“জি ভাই, টি-20 ম্যাচে এক ওভারে ২৭ বল হয় । বল এর ওজন কমপক্ষে সাড়ে পাঁচ কেজি ।
আর কি জানতে চান?” বাবলু রসিকতা করেই বললো ।
“ এত কিছু জানতে হবেনা । শুধু বল কম দামে টি-শার্ট কোথায় পাবো ?”
“ হকার্স মার্কেট”
“চল, কিনে আনি”
“ জ্বি ভাই, চলেন”
সবাই রওনা দিলাম হকার্স মার্কেটের দিকে রওনা হলাম । বেশ খোঁজার পর পুলক ভাইয়ের সাইজের একটা টি-শার্ট মিললো । পুলক ভাইকে বেশ আনন্দিত মনে হল ।
তিনি এবিপি হোটেলে গিয়ে আমাদের বললেন “মন বেশ ভালো । তোরা যা খুশি খেতে পারিস”
টেকনিক্যালি কম খরছে টি-শার্টের আকিকা দেয়ার যে গভীর ষড়যন্ত্র পুলক ভাই করেছেন তা সহজেই ধরে ফেলেছি । কিন্তু আমরা তিন উচ্চ শ্রেনীর খাদকের কাছে খাবার যাই হোক সেটা গলদগর্ম করাই প্রধান কর্তব্য । ফলে মাত্র ৮০ টাকার টি-শার্টের জন্য আকিকা বাবদ পুলক ভাইকে গুনতে হল ১৮২ টাকা । মাথায় হাত পুলক ভাইয়ের ।
হঠাৎ হঠাৎ পুলক ভাইয়ের এমন আচরনে আমরা বিস্মিত হওয়া ছেড়ে দিয়েছি । ক্রিকেট নিয়ে পুলক ভাইয়ের এমন উঠে পড়ে লাগার কাহিনি তাই আমাদের তেমন আর কৌতুহলি করে তুললো না । যা হবার হবে । তবে অবাক লাগলো যখন তিনি রাতে ফোন করে বললেন “স্টেডিয়াম যাব , যাবি ? ”
“কনসার্ট আছে নাকি?”
“না । খেলা দেখতে”
“মানে”
“বাংলাদেশ পাকিস্তান ম্যাচ”
“ওকে”
“টিকেট কোথায় পাবো”
“ভাই টিকেট ছাড়াও যাওয়া যাবে”
“তাই নাকি ! কেমনে?”
“ দেয়াল বেয়ে উঠতে হবে ।
কিন্তু আপনার এই সাইজ নিয়ে সেই রিক্স নেয়া ঠিক হবে না ।
বল বয় হওয়া যায় । যদিও এই বয়সে আপনার সাথে ঠিক বল বয় যায় না । ”
ফাজলামো করিস । থাপড়াইয়া গালের দাঁত ফালায়া দিমু ”
ভাই সরি ।
ভাই হোমড়া চোমড়াদের সাথে তো আপনার এখন বেশ উঠাবসা । তাদের থেকে মাগনা টিকেট পেতে পারেন”
“না না টিকেট কিনবো । সকালে আমার থেকে টাকা নিয়া দুইটা টিকেট কিনে নিস । ”
“ভাই জুয়েল বাবলু ওরাও যাবে । তাদের ব্যাপারটা”
“যা যা ,চারটা কিনে নিস”
আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে, খুশির খবর জানিয়ে দিলাম বাবলু আর জুয়েলকে ।
বাবলু বেশ খুশি.মাগনা টিকেট পাওয়াতে । বিপত্তি হল জুয়েলের । হেলবেশিয়ায় তার ৩১তম ফার্স্ট ডেট । বেচারা পড়লো ঝামেলায় । একদিকে পুলক ভাইয়ের আদেশ শিরোধার্য , অন্যদিকে ফার্স্ট ডেট ।
২
আমরা স্টেডিয়ামে পৌছালাম খেলা শুরুর মিনিট দশেক পর । বিগত ঘন্টাখানেক সময়ের একটু বর্ননা দেয়া দরকার । আগে থেকে প্ল্যান ছিলো জিইসি থেকে সবাই একসাথে যাবো । জিইসি এসে দেখি পুলক ভাই বিলবোর্ড সমান দুইটা প্লাকার্ড নিয়ে হাজির । একটাতে লেখা “আমরা বাঘ” আরেকটাতে লেখা “বুমবুম আফ্রিদি” ।
পুলক ভাইয়ের অবস্থা ‘যেদিকে বৃষ্টি সেদিকে ছাতা’ প্রবাদকে রিমিক্স করতে বাধ্য করলো । নতুন প্রবাদ “ রেইনকোট ও ছাতা দুইটাই আছে, বৃষ্টি যেদিক থেকেই আসুক । ” যা হোক, স্টেডিয়াম এলাকায় এসে পুলক ভাইয়ের কিছু জিনিষ সংগ্রহ করলেন, যেমন বাংলাদেশের পতাকা, মুখে বাঘের উল্কি আঁকলেন । “তোরাও উল্কি লাগা” পুলক ভাই বললেন । কিন্তু আমরা কেউ উল্কি লাগালাম না ।
স্টেডিয়ামের ভেতরে ঢুকতেই জুয়েলের বুকের বামপাশের ব্যাথা বেড়ে গেল । কারনটা সিম্পল । দেখি জুলকারনাইন মেহদী আর তনিশা আমাদের ঠিক নিচের সারিতে বসা । তাদের দেখে পুলক ভাই শুধু বললেন “ফাজিলের ফাজিল, বান্দরের বান্দর ”। যা হোক, মহা উৎসাহ নিয়ে বসলাম খেলা দেখতে ।
পুলক ভাই উনার “আমরা বাঘ” লেখা প্লাকার্ড তুলে স্টেডিয়ামে থাকা বিরাট টিভি স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলেন । কিন্তু হায়, বাট আলাস । টিভি পর্দায় গ্যালারিতে বসা তরুনীদের দেখানো হচ্ছে , চার ছয় হলে অথচ বরাবরের মত পুলক ভাই এখানেও উপেক্ষিত । তারপরও হাল ছাড়লেন না পুলক ভাই । এর কিছুক্ষন পর শুরু হল বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের আসা যাওয়ার মিছিল ।
আফ্রিদি বল করতে আসার আগেই বাংলাদেশী বাঘের দল অল আউট । হায় বিমর্ষ বাঘের চেহারাও তো আসা উচিত টিভি পর্দায় । মানে বাঘের উল্কি আঁকা চেহারাটা । পরের অধ্যায় আরো যাচ্ছেতাই ।
সবারই মন খারাপ ।
পুলক ভাই বললেন “১৫০০ টাকা জলে গেল । হারামজাদা সবগুলোরে ফাঁসির মন্ঞে নিয়া জুতাপেটা করা উচিত । ”
বলতে না বলতেই বেজে উঠলো পুলক ভাইয়ের ফোন । ওপাশ থেকে সোমা আপু বললো “পুলক , তুমি টিভি স্ক্রিনে । উল্কিটা দারুন হইছে” ।
মুহুর্তেই পাল্টে গেল সব । এবার পুলক ভাই বললেন “ আরে মন খারাপ করিস না । তোদের এই একটাই সমস্যা, তোরা অল্পতেই হতাশ হয়ে যাস । খেলায় হার জিত থাকেই । এসব মেনে নিতে হয়” ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।