আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইলেকট্রনিক্স এর খুঁটিনাটি পর্ব ২( ভোল্টেজ -কারেন্ট শেষ পর্ব + রেজিস্টর নিয়ে আলোচনা )

আউলা মাথার বাউলা পোলা। প্রথম পর্ব এখানেঃ ইলেকট্রনিক্স এর খুঁটিনাটি - পর্ব ১(সূচনা সাথে ভোল্টেজ ও কারেন্ট এর ধারনা। ) আগের পর্বে ইলেকট্রিক ভোল্টেজ আর কারেন্ট নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আজকের আলোচ্য বিষয় রোধক বা রেজিস্টর। এটি এমন এক ধরনের ডিভাইস যা কিনা কোন সার্কিটের বা সোজা কথায় কোন পরিবাহীর ভিতর দিয়ে তড়িৎ প্রবাহে বাধা দান বা রোধ (ইংরেজিঃ ইম্পিড বা রেজিস্ট) করে।

এর ধর্মকে বলা হয় রেজিস্ট্যান্স, বাংলায় রোধ। অনেক সময় ইম্পিড্যান্স ও বলা হয়। আসলে প্রত্যেকটি পদার্থেরই নির্দিস্ট পরিমানে রোধ থাকে। এটা পদার্থের একটা ধর্ম। এখন আলোচনা আরও আগানোর আগে ভোল্টেজ আর কারেন্ট নিয়ে কিছু বিষয় আরো একটু পরিষ্কার হওয়া দরকার।

গত আলোচনাতেই বলা উচিত ছিল কিন্তু পোস্ট বেশি বড় হওয়ার ভয়ে লিখিনি। যাই হোক, আগের পর্বে বলা হয়েছিল ভোল্টেজ হল কারন আর কারেন্ট হল ফলাফল। তবে এখানে একটা ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে যে, ভোল্টেজ থাকলেই যে কারেন্ট পাওয়া যাবে তা কিন্তু নয়। অবশ্যই যে দুই বিন্দুর মধ্যে ভোল্টেজ ডিফারেন্স বা বিভব পার্থক্য আছে তাদেরকে কোন পরিবাহী দিয়ে সংযুক্ত করতে হবে। তবেই কারেন্ট পাওয়া যাবে।

আমরা জানি ভোল্টেজ ডিফারেন্স তৈরি হয় দু’টি পদার্থের ভিতরে চার্জের তারতম্য হলে। কোন পদার্থ এবং তার পরমাণু সবসময় চায় নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকতে। অর্থাৎ সমান সংখ্যক পজিটিভ আর নেগেটিভ চার্জ নিয়ে থাকতে। তাই যখনই চার্জের পার্থক্য ঘটে তখনই সেখানে একটা শক্তির আবির্ভাব ঘটে যার ফলে পরমাণুটি চায় প্রয়োজনীয় পরিমানে আধান অন্য কারও সাথে আদান প্রদান করে (সোজা কথায়, তড়িৎ প্রবাহ ঘটিয়ে) আবার নিষ্ক্রিয় অবস্থায় ফিরে যেতে। এই শক্তিই ভোল্টেজ।

কিন্তু ভোল্টেজ যখন চার্জের কারেন্ট বা প্রবাহ ঘটাতে যায় তখন অনেক রকম বাধার সম্মুখীন হয়। ধরা যাক, ভিন্ন ভোল্টেজের ২টি পদার্থ অন্য কোন পদার্থের মাধ্যমে রাখা আছে। তখন সেই মাধ্যমের পরমানুগুলি তাদের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ রোধ দিয়ে চেষ্টা করবে কারেন্টকে বাধা দেয়ার। যেমন, বাতাসের রোধ অনেক বেশি। মেগা ওহম বা দশ লক্ষ ওহমের চেয়েও বেশি।

ফলে কোন ব্যাটারিকে বাতাসে রাখা হলে তার ২ প্রান্তে ভোল্টেজ ডিফারেন্স থাকা সত্ত্বেও বাতাসের বাধার কারনে কোন কারেন্ট পাওয়া যায়না। আমরা যখন অনেক কম (প্রায় নগণ্য) রোধের তার দিয়ে ব্যাটারির ২ মাথা যুক্ত করি কেবল তখনই কারেন্ট পাওয়া যায়। সেই সময় ব্যাটারির নেগেটিভ প্রান্ত (ইলেকট্রন বেশি) থেকে পজিটিভ প্রান্তের (ইলেকট্রন কম) দিকে ইলেকট্রন (নেগেটিভ চার্জ) প্রবাহিত হয়। এই প্রবাহ ততক্ষণ চলে যতক্ষন না ২ প্রান্তের আধান এর তারতম্য শুন্য হয় অর্থাৎ ভোল্টেজ পার্থক্য শুন্য হয়। ব্যাপারটাকে পাইপ ও ট্যাপ দিয়ে যুক্ত ২টা পানির ট্যাংকের সাথে তুলনা করা যায় যাদের পানির লেভেল ভিন্ন।

এখন এদের ভেতর বিভব বা লেভেলের পার্থক্য আছে। যদি ট্যাপ খুলে দেয়া হয়, তাহলে পানির লেভেল উভয় ট্যাংকে সমান না হওয়া পর্যন্ত উঁচু লেভেলের ট্যাংক থেকে নিচু লেভেলের ট্যাঙ্কে পানির প্রবাহ চলতে থাকবে। এবার রোধ প্রসঙ্গে আসি। আসলে কারেন্ট চলার সময় প্রবাহী ইলেকট্রনগুলার সাথে মাধ্যমের অণু পরমাণুর সংঘর্ষ হয়। ফলে ইলেকট্রনের গতি বাধা পায়।

এই সংঘর্ষের পরিমানের উপর নির্ভর করেই বিভিন্ন পদার্থের রোধ ভিন্ন ভিন্ন হয়। আমরা জানি পরিবাহীর রোধ নগণ্য, তাই কোন ব্যাটারির ২ প্রান্ত সরাসরি পরিবাহী দিয়ে যুক্ত করলে তার ভেতর দিয়ে বিপুল পরিমান কারেন্ট চলে, যেহেতু বাধা খুবই কম। অনেক সার্কিটে কারেন্ট এর মান অনেক সময় কম বেশি করতে হয় তাই শুধু পরিবাহী হলে চলেনা। এ জন্য রোধক ব্যাবহার করতে হয়। বাজারে বিভিন্ন ধরনের ও মানের রোধক পাওয়া যায়।

এদের আলোচনায় পরে আসছি। তার আগে রোধ বা রেজিস্ট্যান্স এর সাথে কারেন্ট ও ভোল্টেজের সম্পর্ক স্থাপনকারী একটা গুরুত্বপূর্ণ সূত্র জানতে হবে। এটা আবিষ্কার করেছিলেন বিজ্ঞানী জর্জ সাইমন ওহম(১৭৮৬-১৮৫৪)। তার নামানুসারে একে ওহমের সূত্র বলা হয়। সূত্রটি এরকমঃ স্থির তাপমাত্রায় কোন পরিবাহির ভেতর দিয়ে যে তড়িৎ প্রবাহ চলে তা পরিবাহির ২ প্রান্তের বিভব পার্থক্যের সমানুপাতিক।

চিত্রঃ উপরের ছবিতে AB হল পরিবাহী। ২ প্রান্তের বিভব বা ভোল্টেজ Va ও vb । তাই ভোল্টেজ ডিফারেন্স হল v= va - vb। কারেন্টকে সাধারনত I দিয়ে প্রকাশ করা হয়। উপরের পরিবাহিতে I কারেন্ট চললে সুত্রানুসারে, বা, I = GV এখানে G হল সমানুপাতিক ধ্রুবক (গনিতের নিয়মে সমানুপাতিক চিহ্ন উঠে যেয়ে সমান চিহ্ন বসলে সেখানে একটা ধ্রুবকও বসাতে হয়) ।

এই G কে বলা হয় পরিবাহীর তড়িৎ পরিবাহিতা বা প্রবাহের সক্ষমতা। কেন হয় তা I = GV সমীকরণ থেকে জানা যাবে। দেখা যাচ্ছে G যত বেশি তত কম ভোল্টেজেই বেশি কারেন্ট চলে, মানে বাধা কম। তো বুঝতেই পারছেন এর বিপরীত রাশি মানেই বাধা । তাই 1/G = R এবং এখানে R ই হল রোধ।

তাহলে, ওহমের সূত্র থেকে পাওয়া যাচ্ছে I = GV = V/R বা, V=IR । V=IR সমীকরণ থেকে দেখুন R যত বেশি, একই পরিমাণ কারেন্টের জন্য তত বেশি ভোল্টেজ লাগছে। রোধের একক ওহম এবং এটি পরিবাহীর দৈর্ঘ্য, প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল, উপাদান ও তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে। এস আই এককে, কোন পরিবাহীর ২ প্রান্তের ভোল্টেজ এর পার্থক্য V= 1V(volt) হলে আর তখন I = 1A(ampere) কারেন্ট চললে সেই পরিবাহীর রোধ কে 1Ω(ohm) বলে। সুতরাং, 1Ω = 1V/1A এর অর্থ হল, কোন পরিবাহির রোধ ৫০ ওহম বলতে বোঝায় ঐ পরিবাহীর ভিতর দিয়ে ১ অ্যাম্পিয়ার কারেন্ট চলতে হলে ২ প্রান্তে ৫০ ভোল্ট বিভব পার্থক্য লাগবে।

একই শর্তে পরিবাহীর পরিবাহিতাও হবে ১ একক, এস আই এককের হিসাবে যা হল সিমেন্স (S)। তাই, 1S = 1A/1V আচ্ছা এখন আমরা একটা গানিতিক সমস্যা দেখি। ধরা যাক, কোন পরিবাহীর ২ প্রান্তের ভোল্টেজ ডিফারেন্স ১০ ভোল্ট আর এর ভেতর দিয়ে ২ অ্যাম্পিয়ার কারেন্ট চলছে। তাহলে এর রোধ আর পরিবাহিতা কত হবে? এটা আপনারাই বের করেন। আগেই বলা হয়েছে রোধ বা রেজিস্ট্যান্স তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে।

তাপমাত্রা বাড়লে এটাও বাড়ে। কিন্তু প্রশ্ন হল কেন? কারন তাপমাত্রা বাড়লে পদার্থের অণু পরমাণু গুলার গতি বাড়ে। তারা আগের চেয়ে দ্রুত নড়াচড়া করে (তরল ও গ্যাসের ক্ষেত্রে) বা দ্রুত কাঁপতে থাকে (কঠিন পদার্থে)। স্বভাবতই এ অবস্থায় প্রবাহিত ইলেকট্রনের সাথে সংঘর্ষ বেশি হয়। তাই রোধও বাড়ে।

এই জন্যই ওহমের সূত্রে স্থির তাপমাত্রার কথা বলা হয়েছে যেন তা তাপমাত্রাজনিত রোধের পরিবর্তনের ফলে ভুল ফলাফল প্রদান না করে । আজকের মত এই টুকুই। সামনের পর্বে রেজিস্ট্যান্সের কালার কোড, আপেক্ষিক রোধ এগুলি নিয়ে আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ। সবাই ভাল থাকবেন। ----------------------------------------------------------------------- দৃষ্টি আকর্ষণঃ লেখায় কোন ভুল ধরা পড়লে মন্তব্যের ঘরে জানাতে অনুরোধ করছি।

বিঃ দ্রঃ লেখকের অনুমতি ছাড়া লেখার কোন অংশ অন্য কোথাও প্রকাশ করা যাবেনা। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.