আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এতটুকু ফাঁকি

এক সুমির মনে সংশয়। ছেলেটি যদি রাজী না হয়। লজ্জায় মুখ দেখানো যাবে না। মাত্র কয়েক দিনের পরিচয়। তবে চেহারার দিকে তাকালে মনে হয় না বলবে না।

এ ধরনের প্রস্তাবে কোন অবিবাহিত পুরুষই না বলতে পারে না। এটা তার কাছে সৌভাগ্যের ব্যাপার। তবু সুমি প্রথম দিন কথাটি বলতে পারল না। শুধু সাহস করে কাছে বসল। সারা রাত ভাবল।

সকালে ছেলেটির রুমে গেল। পাশা-পাশি রুম। সুমিরা এক মাসের জন্য ভাড়া নিয়েছে। মাস প্রায় শেষ। কিন্তু সুমির মনের আড়ালে যে অভিপ্রায় তা আজও পূরণ হল না।

ছেলেটি নীরবে বসে আছে। হয়তো কিছু ভাবছে। সুমি বলল,"আসি। " ছেলেটি উঠে দাঁড়াল। তত সময় সুমি রুমে ঢুকে গেছে।

ছেলেটির পাশে বসল। ছেলেটির জ্যোতির পরিবর্তন হয়েছে। হবে না কেন? সুমি সে ধরনের ব্যবস্থা করে গেছে। এত বেশি ঢিলা গলার ব্লাউজ সুমি আগে কোন দিন পরেছে কিনা মনে নেই। চেহারার মসৃণতার সাথে সাজের বিশেষ একটা মিল রয়েছে।

বুকের আঁচল বার বার পড়ছে আর তুলছে। হাসিতে উত্তেজনার গন্ধ। আজ বললেও ছেলেটির না বলার কথা ছিলনা। দু’জনের কেবল নীরবে চেয়ে থাকাই সার হলো। সুমি উঠে এল।

ছেলেটার সারা অঙ্গে যেন ঝাঁকি লাগল। ওর শিরা উপশিরার রক্ত উচলে উঠছে। চোখে মুখে উত্তেজনা। সব কিছু ভেঙ্গে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে। পরের দিন ছেলেটা সুমিদের রুমে এল।

রুমটি একেবারে ফাঁকা। সুমি অবাক হলো। বলল, "ভিতরে আসুন। " ছেলেটি ভিতরে এল। সুমি মিষ্টি হাসি দিয়ে তাকে অভ্যর্ত্থনা জানাল।

ফ্যানটা আগেই ছাড়া ছিল। টিভি ছাড়ল। সুমি চা বানাতে গেল। ওর চোখে কামনার তিয়াস। সারা দেহে ভয় আর আনন্দের কঁম্পন।

সুমি মনে হয় কাত হয়ে পড়ে যাবে। সারা পৃথিবীটাকে মনে হলো ভুলের খেলাঘর। সুমি বুঝল, সকল কাজেই ফাঁকি চলে। মিথ্যার আড়ালেও দাঁড়িয়ে থাকে চরম সত্য। তার আনন্দ বেদনার মাঝে প্রকাশিত হয়।

সুমির মাথায় একটা বুদ্ধি এল। চা'য়ের ভিতর ওষুধ মিশিয়ে দিলে মনে হয়ে ভাল হয়। একটা বড়ি চা'র ভিতর গুড়ো করে দিল। কথা বলতে বলতে সুমি বুঝল ভাইমেক্সে কাজ করতে শুরু করছে। ছেলেটির পাশে গিয়ে বসল।

ছেলেটি কোন কথা বলল না। সাহস করে কাঁধের উপর হাত দিল। তারপর জড়িয়ে ধরল বুকের সাথে। সুমির এত দিনের আশা আজ পূর্ণ হলো। কাপড়-চোপর ঠিক করে বাথ রুমে গেল।

খুশিতে একটা গানও ধরল। ছেলেটি এখনও বসে আছে। সুমি ছেলেটির দিকে আবারও অবাকে তাকিয়ে তাকাল। ছেলেটি সুন্দর, সুশ্রী, সুঠাম। এমন ছেলে খুবই কম মেলে।

ছেলেটি চলে যেতে চাইল। সুমি দরজা পর্যন্ত এলো। বলল, "কাল আবার আসবেন। আমি আপনার অপো করব। " সুমির মুখে খৈ ছিটানো হাসি।

সারা বুক এখনও কাঁপছে। ছেলেটির স্পর্শ যেন সারা শরীরে লেগে আছে। এমন নব উত্তেজনার কথা সুমি প্রায় ভুলেই গেছে। সুমি বিছানায় এল। খুব হাসি পেল কিন্তু সে হাসি কেবলি চোখের জলে ডুবে গেল।

সান্ত্বনাহীন কান্নার অতলে সে ডুবে যাচ্ছে। চোখের জল মুছল না। হঠাৎ দরজায় আবার শব্দ হলো। সুমি, চোখের জল মুছে দরজা খুলল। সুমন আসছে।

সুমির চোখে সেই হাসি। ঠোঁট শাপলার মত ফুটে উঠছে। এই জন্যই হয়তো বলে, "নারীর চোখে জল মুখে হাসি। " কে বলবে এ নারী একটু আগেও কেঁদে ছিল। সুমির হাসিতে শব্দ হলো।

সুমনের গলা জড়িয়ে যেন ঝুলে পড়ল। সুমি এম.বি.বি.এস.। দশ বছর আগে সুমনের সাথে তার বিয়ে হয়। সুমন ব্যাংকার। ধনী বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে।

সুমিকে একবার দেখেই প্রস্তাব পাঠিয়ে বিয়ে করেছিল। সুমি তখন বুঝেছিল, জীবনে সত্যিকারে প্রেম না এলে বুঝা যায় না অন্যান্য প্রেম কত নেহাত ছিল। সুমি ছিল সুমনের প্রেমের পুজারী। সুমন ছিল সুমির জানের জান। দিনগুলো ছিল স্বপ্নের, সাধনার আর সুন্দরের।

সুমনের একবার অনেক বড় রোগ হলো। সুমি সকল টেস্টের সাথে ডি.এন.এ. টেস্টটিও করে । সুমনের বাচ্চা জন্মানোর কোনই মতা নেই। আজ দুই বছর হলো আজও তা সুমনকে জানায় নি। গোপন অভিপ্রায় পূরণের জন্য তিন দিনের পথ এসেছে।

গাড়িতে এসে স্বামীর পাশে বসল। গাড়ি ছাড়ল। সন্ধ্যার ছায়া নেমে আসছে। চারিদিকে অন্ধকারের আঁওয়াজ। সুমি সুমনের দিকে তাকাল।

কত নিস্পাপ চেহারা। এমন একজন নিস্পাপকেও সুমি আজ ফাঁকি দিল। নিজেকে বিলিয়ে দিল অন্যের মাঝে। তবু যদি মা হতে পারে। নারীত্বের পূর্ণ মর্যাদা পাবে।

সংসারে হাসি ফুটবে। এতটুকু ফাঁকি পৃথিবীর কেউ জানল না। এতটুকু কষ্ট নিয়ে সুমি সারা জীবন কাটাবে। এতটুকু ফাঁকি তার ভালোবাসার অঁঙ্গনে চিরকালের দাগ হয়ে থাকল। এতটুকু ভুল সুমির প্রতি অঙ্গ প্রতঙ্গকে ত-বিত করল।

সুমির চোখের জল গড়িয়ে পড়ল। জোছনার আলোয় সে জল উজ্জ্বলে জ্বলে উঠল না। সুমি মা হতে চলছে। সারা শরীরে মসৃণতার আভা। সুমি যেন আরো বেশি সুন্দরী হয়ে উঠছে।

চোখে মুখে কেমন যেন থমথমে ভাব। দেহ যেন ভারী হয়ে আসছে। বুকের মাংস যেন ফুলে উঠছে। সুমন সুমির সকল ডিউটি বন্ধ করে দিল। "আজ থেকে তোমার সকল কাজ বন্ধ।

তুমি শুধু বিশ্রাম নেমে। " "তাই নাকি?'' ''তাই নাকি আবার কি? ওগুলো সব বাদ। তোমার কেবল নতুনের স্বপ্ন বোনা। '' সুমন সুমির কোল ঘেঁষে বসল। কাঁধের উপর দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিল।

মুখের সাথে কিছু সময় মুখ ঘঁষল। ''এই বলতো আমাদের কি হবে?'' "জানি না। তুমি বল। " "বাচ্চা কি আমার পেটে যে আমি বলব?" সন্তান হওয়ায় বাবার চেয়ে মা'র বেশি কষ্ট হলেও বাবা কিন্তু বেশি খুশি হয়। সুমনের দায়িত্ব যেন বেড়ে গেছে।

ও কি করবে আর কি না করবে তা বুঝে উঠতে পারছে না। ওর চোখে কেবল একটি নতুনের স্বপ্ন। সে স্বপ্ন সকল পুরুষের। "আমাদের মেয়ে হবে। এবার তুমি বল, কি নাম দেব?" "ওটাও তুমি বলবে।

" "নাম দেব,"মুনিরা"। তোমার নামের কোন অংশই রাখব না। কারণ, আমার মেয়ে হবে আমার মত। " সুমন চলে গেল। সুমির চোখ দিয়ে কেবলি বেদনার অশ্রু ঝরছে।

ভাবল, "হায়! জীবন, তুমি কিসে বেশি খুশি? ভালোবাসায়, না কি ফাঁকিতে? এই মানুষটাকে ফাঁকি দিয়ে আমি কি ভাবে সারা জীবন বেঁচে থাকব। এতো একদিনের নয়, এক জন্মের। এ জীবনে ওর ভালোবাসার এ তদাগ উঠাতে পারব না। " সুমন আজকাল খুব বেশি অফিস ফাঁকি দিতে শুরু করছে। সুমির পাশে বসে কেবল নতুন শিশুর ভবিষ্যৎ ভাবে।

সুমির চোখে মুখে শুধু হাত বুলায়। আর নীরবে তাকিয়ে থাকে। দিন ফুরিয়ে আসছে। শুভ দিনটি হাত ছানি দিচ্ছে। সুমিকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

সুমন বলল, "তা হবে না। প্রয়োজনে আমার বাড়ি হাসপাতাল বানাব। হাসপাতালের ডাক্তার দিয়ে আমার বিশ্বাস নেই। " "তুমি কি পাগল হয়েছে?" "কেন? আমি আবার কি করলাম। " "পাগলামী করছ।

হাসপাতালে আমার কোন অসুবিধা হবে না। " অনেক কিছুর পর সুমনকে রাজী করানো গেল। সুমিকে হাসপাতালে নেয়া হলো। সুমনের চোখে ঘুম নেই। শুধু ছোটা ছুটি।

সুমি তাকে পাশে বসাল। ডান হাতটা হাতের ভিতরে নিল। নীরবে অপলক তাকিয়ে থাকল। সে চোখে কোন ফাঁকি নেই, কোন ঘৃণা নেই, কোন অভিযোগ নেই। সুমি বলল, "তুমি কি সারা জীবনই আমাকে এমন ভালোবেসেছো? কোন দিনই ফাঁকি দাওনি?" সুমন মাথা ঝাঁকিয়ে "না" জবাব দিল।

সুমি কান্না চেপে রাখতে পারল। ডুকরে কেঁদে উঠল। বলল, "এ সন্তান আমি চাই না। শুধু তোমার ভালোবাসা চাই। শুধু তোমাকে চাই।

বিশ্বাস করো, শুধু তোমাকে হলেই আমার চলবে। " সুমির কান্না বেড়ে উঠল। সুমনকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরল। "তুমি কি পাগল হয়েছ? এই আমি বললাম, তোমার কিচ্ছু হবে না। " সুমন বুঝল না সুমি কি বলতে চাইল।

সুমিও বলতে পারল না। সত্যের আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে এক চরম মিথ্যা। হাসপাতালের বেডে সুমির একটা ছেলে হলো। ভাগ্যের দেবতাও সুমনকে ফাঁকি দিল। সকল ফাঁকিকে ঠেলেও সে খুশি হল।

সে বুঝল না বেদনার দেয়াল কত উঁচু। ছেলেটির মুখে প্রথম 'মা' ডাক ফুটল। সুমন তাকে কোলে নিয়ে কতগুলি চুমু খেল। নামটা সুমিই দিয়েছে 'ঈসা'। ঈসা নবী যেমন বাবা ছাড়া জন্মে ছিল।

সুমনের কোলে ছেলেটি ঘুমিয়ে গেছে। সুমি ছেলেটির দিকে তাকাল। বার বার সে ছেলেটির কথা মনে পড়ল। মনের গহীন জঙ্গলে লুকিয়ে আছে ছেলেটি। ছেলেটির কথা মনে পড়তেই সুমির সর্ব অঙ্গ জ্বলে ওঠে।

বুক চাপরে বেরিয়ে আসে কান্না । সে কান্না নীরবে নিভৃতের। বার বার তাকে ভুলতে চায় কিন্তু ভুলতে পারে না। সেদিনের সে আনন্দটুকুর সুখ সারা জীবনের দুঃখ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মনের সুপ্ত কোণে। তার সেই দলিত নিঃপেশিত ণটুকু মনের বাগানে ফুল ফোটাতে অনেক কাটা ছড়িয়ে গেছে।

সে ফুলের সুগন্ধ তাকে একটুও বিমোহিত করেনি কিন্তু কাটার আঘাতে সারা শরীর জর্জরিত করছে। প্রতিটি রক্ত কণায় যেন বিষ মিশিয়ে দিয়ে গেছে। সুমিকে গড়ে তুলেছে ভিন্ন মানুষে। সুমি আবার ঈসার দিকে তাকায়। সুমনের চেহারার সাথে কোনই মিল নেই।

সুমির চেহারার সাথে অনেকটা। সুমি খোলা জানালার দিকে গেল। সন্ধ্যার আঁধার নেমে আসছে। আকাশের বুকে লাল আলোর ঝঁলকানি। এলোমেলো মেঘ গুলি উড়ে চলছে অজানার সন্ধানে।

সুমন পিছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরল। একটা ভয় আর আতংক সুমির সমস্ত শরীরকে কাঁপিয়ে তুলল। ওর শরীরে কোন শক্তি নেই। ও ভাবল, ''সন্তান না হলেও এর চেয়ে ভাল থাকতাম, সুখে থাকতাম। " সুমন মুখ ঘুরিয়ে দেখল ওর চোখে জল।

দুই সুমি নীরবে আকাশ পানে তাকিয়ে আছে। সুমনের জ্যোতিতে লুকানো হাসি। সুমির বড় কষ্ট হচ্ছে। না বলা কথাটি জল হয়ে গা ঘেমে নামছে। "তুমি ভয় পাচ্ছ কেন?'' "অন্যায়কারী চিরকালই ভীতু।

" "তাহলে কি মানুষের কিছু কিছু চাওয়া ভুল হয়?" সুমি মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ জবাব দিল। ঈসাকে সে দু'চোখে দেখতে পারে না। এক বিতৃষ্ণা ওর সমস্ত শরীরকে কাঁপিয়ে তোলে। "ওর কি দোষ বল। তুমিইতো ওর মাঝে সুখ চেয়েছিলে।

" সুমি যেন একে বারে ভেঙ্গে পরছে। ঈসা পাশে এসে সুমির আঁচল ধরে টানছে আর সুমনের দিকে তাকিয়ে মিটমিট হাসছে। সুমন ওকে কোলে তুলে নিল। "আমি জানি এ আমার সন্তান নয়। " সুমি ধপ করে বসে পড়ল।

এমন চরম সত্যটা সে কিভাবে জানল? পায়ের তলার মাটি যেন নীরবে সরে যাচ্ছে। সুমিও এমন একটা দিনের অপো করছিল। সত্য চিরকাল চাপা থাকে না। সে বেরিয়ে আসবেই। সুমি নীরবে সুমনের দিকে তাকিয়ে থাকল।

সে জ্যোতিতে কোন পাপ নেই, কোন ঘৃণা নেই। শুধু করুণার কামনা। "কিন্তু কোন দিন কি তোমাকে বুঝতে দিয়েছি? ওকে কি কম আদর দিয়েছি? কারণ, ওতো কোন দোষ করেনি, ও নিষ্পাপ। আজ ওর বয়স পাঁচ বছর। অনেক বড় একটা কেকের ওয়াডার দিয়েছি।

কতগুলি লোককেও দাওয়াত দিয়েছি। " সুমি নীরবে তাকিয়ে আছে। হরিণ যখন শিকারির হাতে ধরা পড়ে তখন তার সারা শরীর চিনচিন করে কাঁপে। একটা মৃত্যু ভয় আর বেঁচে থাকার ইচ্ছায় সে এমন করে। সুমিও তেমনি ।

"তোমার অভিসন্ধি আমি জানতাম। কেন তুমি এতো দূরে যেতে চাও। " সুমন আট বছর আগের কথা স্মরণ করল। সারা শরীর কেঁপে উঠল। সুমির প্রতি বিশ্বাস হারাল।

জানল সময় পেলে সকল বিশ্বাসই এমনি করে একদিন ভেঙ্গে যায়। টুকরো কাঁচের মত তা কেবল হৃদয়ে আঘাত করে। "সেদিন তুমি বাথরুমে গেলে হঠাৎ তোমার মোবাইল বেজে উঠল। আমি রিসিভ করলাম। ওপাশ থেকে একজন শুধু বলেই গেল।

আমি শুনলাম। বলল, "ডি.এন.এ. এর রেজাল্ট বদল হয়েছে। আপনার স্বামীর বাচ্চা দেওয়ার কোন সমস্যা নেই। আমি তোমাকে সন্দেহ করলাম। সন্দেহের দেয়াল বড় হল।

কিন্তু তোমাকে বুঝতে দিলাম না। '' ''তবে, আমাদের বাচ্চা হতো না কেন?'' ''আমি তোমার সুবিধার জন্য ওষুধ খেয়ে বাচ্চা নিবারণ করতাম। কারণ, বাচ্চা হলে তুমি ঠিকমত অনুশীলন করে বড় হতে পারবে না। আমি তোমাকে কথা দিয়েছিলাম অনেক বড় করব। "আমাকে কেন বাধা দিলে না?" "ভালোবাসা পরিমাপ করার জন্য।

" "সে কয়েক দিন এত ভালবেসে ছিলে কেন?" "কারণ, তুমি ওতেই সুখী ছিলে। তোমার সুখ আমি নষ্ট করতে চাইনি। " "কি লাভ হল?" "আমার লাভ হয়নি কিন্তু.................। " "বল না। " "সন্ধ্যা সাতটায় সব জানবে।

" দিন শেষ হতে চলল। সুমি এখন কিছুটা শক্ত অনুভব করছে। ও এখন বিপদের সর্বোচ্চে। ওর আর শেষ হওয়ার কিছু নেই। সূর্যের লাল রংই বুঝিয়ে দেয় সামনে গোধূলি।

সন্ধ্যা আসে রাতের সন্ধিখনে। রাতের স্বপ্ন কেবলি বিরহের। বিকেল পাঁচটার পর থেকেই বাড়িতে লোক বাড়ছে। সারা বাড়িতে রং বেরঙ্গের রূপ সজ্জা। ঝিকিমিকি আলো সুমির চোখে স্বপ্ন ভঙ্গের ছবি আঁকছে।

সুমন অনেক বড় একটা কেক নিয়ে এসেছে। সারা বাড়িকে একাকার করে ফেলছে। ঈসার ঠোঁটে অফুরন্ত হাসি সুমিকে মনে করিয়ে দিল , "কোন কিছূ বেশি উজ্জ্বলে জ্বলে ঝলসে যাবার জন্য। " সাতটা প্রায় ঘনিয়ে এল। সুমি নীরবে বসে আছে।

সুমন কাছে এসে, "তোমার আবার কি হলো?" "কি হয়নি?" 'তাহলে বোঝ, এই আটটা বছর তোমাকে বুকে নিয়ে আমি কিভাবে জ্বলছি। " "তোমাদের সে মতা আছে। " 'মন থেকে সব কিছু মুছে ফেলা যায় না। তুমি রবে চিরদিন এ মনে। আর আমাকে তিলে তিলে নিয়ে যাবে মৃত্যুর দিকে।

ঈসা আমাকে যতটা সুখ দেয় তার বেশি দেয় কষ্ট। ওকে বুকে নিয়ে আমি কেবলি কষ্টই পাই। " এতো কাল পর আজ সুমনের চোখে জল। নীরবে সে জল গড়িয়ে গেল। কেকের সামনে দাঁড়িয়েছে সবাই।

হঠাৎ এক নবদম্পতি এল। সুমির মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। এ কারা? কিভাবে এল? সুমন তাদেরকে স্বাগত জানাল। পরিচয় করিয়ে দিল, "এর নাম শ্যামল। শ্যামল চক্রবর্তী।

যে একজন বিবাহিত মুসলিম মহিলাকে চিনতে পারেনি। তার প্রেমে পাগল হয়ে একদিন চরম ভুল করে। সে ভুলের ফসল আজকের ঈসা, আজকের জন্ম দিন। আর এ মহিলা হলো সুমনা হক লিলি, আমার দ্বিতীয় স্ত্রী। ও জানে আমার একটি স্ত্রী আছে।

আমি তাকে ফাঁকি দেইনি। " সুমির কাছে এসে, "তোমাকে বলেছিলাম না, আমাদের মেয়ে হবে। ও আমার মেয়ে মুনিরা। তোমার অভিসন্ধি বুঝতে পেরে আমি তোমাকে ফাঁকা সময় দিতে লাগলাম। ঘুরতে ঘুরতে দেখা হল লিলির বাবার সাথে।

মেয়ের অনাকাঙ্ক্ষিত ভবিষ্যৎ ভেবে কাঁদছিল। আমি তাকে সান্ত্বনা দিয়েছিলাম। ওকে বিয়ে করেছিলাম। " সুমি মেয়েটার দিকে হেঁটে গেল। ও অনেক মিষ্টি।

মায়া ঘেরা মুখখানা। ঠোঁট দুটি যেন ফুটে আছে সকালের শাপলার মত। ওকে কোলে নিয়ে কতগুলি চুমু খেল। সমাপ্ত ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.