আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফ্যাসিবাদ বস্তুটা কি?

“In a gentle way, you can shake the world.” ফ্যাসিবাদ মূলত মধ্যযুগীয় সামন্ততান্ত্রিক মুল্যবোধ গুলোকে পুঁজিবাদের মোড়কে নতুন ভাবে পরিবেশন করবার একটি আধুনিক ধারনা, যা পুঁজিবাদের একটি অবশ্যম্ভাবি পরিণাম। খুব সংক্ষেপে, ফ্যাসিবাদ হল সমাজে ক্ষমতাসীন ধনী এবং ক্ষমতার সুবিধাভোগীদের মাধ্যমে গরিব আর মেহনতি মানুষদের উপর অক্ষুণ্ণ রাজত্ব করার এক ব্যবস্থা, যেখানে সংসদীয়, আইনি এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমনভাবে অকার্যকর করে তোলা হয়, যেন মানুষের বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকারের দাবি গুলো ধীরে ধীরে গৌণ হয়ে ওঠে এবং অপ্রধান দাবী গুলো প্রধান হয়ে ওঠে। প্রাথমিক ভাবে ক্ষমতাসীন সুবিধাভোগীদের প্রতিনিধিত্বকারী দল বা সরকার প্রধান তাঁর আপাত জনপ্রিয়তার ছায়াতলে খুব সুচারু ভাবে এই নাগরিক অধিকার গুলো কে হরণ করেন, যেন একটি জনপ্রিয় মুখ্য দাবীকে কেন্দ্র করে সকলে ঐক্যবদ্ধ হয় এবং অন্য সকল দাবিগুলোকে গৌণ করে তোলে। জাতীয়তাবাদ, বা অমীমাংসিত জাতীয় দাবী, বা বর্ণবাদ, বা লিঙ্গ বৈষম্য, বা ধর্মীয় প্রণোদনা সাধারণত অধিকার হরণের আড়াল হিসেবে কাজ করে। এই পর্যায়ে ফ্যাসিবাদের কিছু আচরণ প্রবল জনসমর্থনও আদায় করে নেয়, কারন তা বিশেষ কিছু লোকের কর্মসংস্থান করে।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং কর্পোরেট ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান গুলো নিজ স্বার্থে ফ্যাসিবাদকে সমর্থন করে এসেছে সবসময়, কারন এই সময়টাতেই তাদের সরবচ্চ বিকাশ সম্ভব । তথাকথিত উন্নত বিশ্বে ফ্যাসিবাদ রূপ নিয়েছে রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদের, আর উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত দেশগুলোতে ফ্যাসিবাদ আবির্ভূত হয়েছে সামরিক উর্দিতে বা আপাত গণতন্ত্রের ছদ্মবেশে, আরও ক্রূর ভাবে। ফ্যাসিবাদের আরেকটি চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য হল মানবতাবাদী সংগঠন গুলো সক্রিয় বিরোধিতা, তাদের হাস্যকর করে তোলার অপচেষ্টা; একই সাথে রাজনৈতিক ভাবে সাধারণত ফ্যাসিস্টদের প্রথম টার্গেট হল কমিউনিস্টরা (এবং সম্ভবত কিছু নৈরাজ্যবাদী)। পুঁজিবাদ আর ফ্যাসিবাদ অবিচ্ছেদ্য; এ যেন বিজ্ঞাপনী ভাষায় -- দু'জনে দু'জনার এক অনাবিল অনুষঙ্গ। এমনকি ফ্যাসিবাদ যখন সুপ্ত, তখনও এর লক্ষণগুলো সুস্পষ্ট ভাবে লিঙ্গ বৈষম্য, জাতিগত বৈষম্য, জাতীয় নিরাপত্তার আড়ালে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি, চটুল জাতীয়তাবাদের মোড়কে ঢাকা থাকে।

পুঁজিবাদি সরকার গুলোর ফ্যাসিবাদি হয়ে ওঠার জন্য কোন বৈপ্লবিক পরিবর্তন প্রয়োজন হয়না, কারন ফ্যাসিবাদি ধারনা এবং ফ্যাসিবাদি অস্ত্র গুলো (পুলিশ, সহযোগী অঙ্গ সংগঠন, কালা কানুন, ইত্যাদি) পুঁজিবাদী একটি রাষ্ট্রে তৈরিই থাকে। রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক বিকাশের গতানুগতিক ধারাগুলো সীমিত হয়ে আসলে, বা অর্থনৈতিক মন্দা কালীন অবস্থায় যখন মুনাফার পথগুলো সঙ্কুচিত হয়ে আসে, ফ্যাসিবাদই হয়ে ওঠে পুঁজিপতিদের প্রধান অবলম্বন, যার পরবর্তী ধাপ হল যুদ্ধ বা যুদ্ধকালীন অবস্থা। সাম্প্রদায়িক সংহতির নামে ভীতি ও সন্ত্রাস কে প্রশ্রয় দিয়েই বেড়ে ওঠে ফ্যাসিবাদ। কুসংস্কার, যুক্তিহীনতা, লিঙ্গ বৈষম্য, ধর্মান্ধত্ব, বিজ্ঞান এবং সামাজিক উৎপাদনে অনীহা, গন মানসে আশাহীনতা ইত্যাদি অনুষঙ্গগুলো ফ্যাসিবাদের বেড়ে ওঠার উপাদান, এবং এই উপাদানগুলো একই সাথে তার মৃত্যুর ঘণ্টাধ্বনি। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৭ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.