রাস্তাঘাটে আমাদের দিকে কোন ঠিকানা বিহীন 'পথশিশু'' আমাদের দিকে ২টা টাকার জন্য হাত পাতলে আমরা সাধারণত কি করি? কারো যদি খুব দয়া হয় তাঁকে ২টা টাকা আর যদি ভালো না লাগে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেই আবার কেউ কেউ তাড়িয়ে দেয়ার সাথে বোনাস হিসেবে তারে একটি লাথিও দেই। প্রথমটা তাঁর ভাগ্য সারাদিনে না জুটলেও ২য় টা (তাড়িয়ে দেয়া ও লাথি) তাঁর প্রতিদিন জুটবেই । এই পথশিশুদের কোন খোঁজ কি আমরা কোনদিন কেউ নিয়েছি? কোনদিন কেউ কি জানতে চেয়েছি? না, কোনদিন জানতে চাইনি। আজ আপনাদের তেমনই এক 'পথশিশু'র গল্প শুনাবো ও তাঁর জীবনের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো ও দেখাবো।
''কদম আলী'' র জন্ম আমাদের দেশেরই একটি গ্রামে।
তাঁর বাবা ছিলেন ঐ গ্রামের চেয়ারম্যান। কদম আলীর বাবা ৪০ বিঘা জমি নিজের করে নেয়ার জন্য কদম আলীর মাকে বিয়ে করে যা ছিল চেয়ারম্যান সাহেবের ২য় বিয়ে। বিয়ের পর কদম আলীর মাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে কদম আলীর নানার কাছ থেকে পাওয়া কদম আলীর মায়ের ৪০ বিঘা জমি চেয়ারম্যান নিজের নামে লিখে নেন। এরপর .কি ?
এরপর যা হবার তাই। লোভী চেয়ারম্যান সম্পত্তি পাওয়ার পর কদম আলীর মায়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা দুর্নাম দিয়ে বাড়ী থেকে বের করে দেয়।
কদম আলীর বয়স তখন ১ বছর। সেই ১ বছরের শিশুকেও লোভী চেয়ারম্যান গ্রহণ করেনি। নিরুপায় ও অসহায় কদম আলীর মা ১ বছরের সেই শিশুকে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করতে থাকে। এভাবে কেটে যায় ৪ বছর। কদম আলীর বয়স যখন ৫ তখন একদিন ভিক্ষা করতে গিয়ে সেই বাড়ীর গৃহিণীর অনুরোধে ভিক্ষা ছেড়ে ঐ বাড়ীতে গৃহপরিচারিকার কাজ নেয়।
কিন্তু সেদিন রাতেই ঐ বাড়ীর চরিত্রহীন গৃহকর্তা কদম আলীর মাকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করে কিন্তু শেষ পর্যন্ত কদম আলীর মায়ের সাহসিকতার কারনে গৃহকর্তার সেই অসৎ ইচ্ছা পূরণ হয়নি। তাই পরেরদিন গৃহকর্তা নিজেকে ভালো মানুষ সাজিয়ে কদম আলীর মায়ের নামে মিথ্যে দুশ্চরিত্রের অপবাদ দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। এরপর গ্রামেরই এক লোক চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ঢাকায় এনে কদম আলীর মাকে একটি পতিতাপল্লিতে বিক্রি করে দেয়। সেদিনই পতিতাপল্লীর সর্দারনী কদম আলীকে মেরে তাড়িয়ে দেয়। কদম আলীর স্থান হয় রাস্তায়।
পরের দিন কদম আলী লুকিয়ে তাঁর মায়ের সাথে দেখা করতে গেলে জানতে পারে তাঁর মা আত্মহত্যা করেছে । এরপর কদম আলীর শুরু হয় জীবনের সাথে এক চরম যুদ্ধ যেখানে মানুষের লাথিগুঁতো হয় তাঁর প্রতিদিনের সঙ্গী। এভাবে একদিন কদম আলীর জীবনের ২৫ টি বছর কেটে যায়। কদম আলী মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য বিশ্ব বিখ্যাত কমেডিয়ান চার্লি চ্যাপলিন এর মতো গোঁফ রাখে। কদম আলী জীবনের তাগিদে নিজের তৈরি বড়ি বিক্রি করতে থাকে।
যে বড়ি খেলে মানুষ মারাও যাবেনা আবার সুস্থ হবেনা। তবে যতই অভাব অনটনে থাকুক না কেন কদম আলী কখনও মানুষের ক্ষতি করে কোন জীবিকা নির্বাহ করেনা। তাইতো গান গেয়ে বড়ি বিক্রি করার সময় নিজের মুখেই স্বীকার করে যে সে একজন ডিগ্রিছাড়া ডাক্তার।
এভাবেও বেশিদিন থাকতে পারেনি কদম আলী। পুলিশের ভয়ে সে বড়ি বিক্রি বন্ধ করে দিয়ে সিনেমা হলের টিকেট কিনে হলের সামনে বেশী দামে বিক্রি করে থাকে যাকে আমরা বলি ব্লেকার।
এখানেও একদিন পুলিশ তাঁকে ধরে নিয়ে যায়। এভাবে জীবনের তাগিদে পেটের দায়ে বারবার শুধু কাজ বদলাতে থাকে। কিন্তু আমাদের ভদ্র সমাজের মানুষদের কাছ থেকে কোনদিন কোন সহানুভূতি ,ভালোবাসা কিছুই পায়নি। এমনকি মানুষ হিসেবেও কারো ভদ্র সমাজের কাছ থেকে কোন মূল্য পায়নি। তবুও কদম আলী সারাটা জীবন যুদ্ধ করে যায়।
তাঁর আদর্শ ও নীতি কাছে আমাদের ভদ্র সমাজের মানুষদের ছদ্মবেশী নীতিও তুচ্ছ ! সে যা করতে পেরেছে তা আমাদের ভদ্রসমাজ করার সাহস পায়না শুধু নীতিবাক্য দেয়া ছাড়া। মৃত্যুর আগে কদম আলী জীবনের শেষবারের মত চেয়ারম্যান নামক ছদ্মবেশী ভণ্ড সমাজসেবক তাঁর জন্মদাতা পিতার মুখোমুখি হয় শুধু একটি প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার আশায়। যার উত্তর সে পায়নি। তবুও সে তাঁর নীতিকে বিসর্জন দেয়নি। তাই সে বাংলাদেশের পবিত্র সংসদে ঐ লোভী, চরিত্রহীন, ছদ্মবেশী সমাজসেবক কে জনপ্রতিনিধি হিসেবে চেয়ারম্যানকে বসতে দেয়নি।
সে জানে যে এই চেয়ারম্যান সংসদে গেলে সংসদ অপবিত্র হবে। বাংলাদেশের সংসদকে অপবিত্র হওয়ার হাত থেকে কদম আলী রক্ষা করে আর পৃথিবীর আদালতের কাছে একটি প্রশ্ন রেখে যায় - '' মানুষ হিসেবে জন্ম নিয়েও কেন একজন 'কদম আলী' এই সমাজে জন্ম নেয় যাদের জন্মটাই হয় আজন্ম পাপ"? কারা সেই জন্য দায়ী? সমাজ, রাষ্ট্র নাকি ব্যক্তি?
ওহ একটি কথা , আমি কিন্তু গল্পটার অনেক কিছুই বাদ দিয়ে ফেলেছি। কারন পুরো গল্পটা আমি ইচ্ছে করেই ভুলে গিয়েছি। কদম আলীর জীবনে আরও অনেক ঘটনা ঘটে । আপনাদের যদি তা জানতে ইচ্ছে হয় তাহলে দেখুন-
আমার ব্যক্তিগত অভিমত- দুর্দান্ত ও প্রিয় অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান এর লিখা ও অভিনীত চরম সুন্দর একটি ছবি।
যে ছবি আমাদের জীবনের কথা বলে, দেশের কথা বলে আর বলে মানবতা জাগ্রত করার কথা।
সবাইকে বোনাস-
এসব ভাতেমরা কাহিনী না লিখার জন্য অনুরোধ করতে পারেন এখানে গুঁতা দিয়া
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।