আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

“ঘৃণা লজ্জা ভয়, তিন থাকিতে নয়”

অর্থ নয়, কীর্তি নয়...আরো এক বিপন্ন বিস্ময়/আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভেতরে খেলা করে আউটডোরে পৌঁছেই দেখি ছাউনি ওয়ালা করিডোরটার কাছে আমারণ অনশন চলছে। পোষাক দেখে মনে হল নার্স। টিকিট কাউন্টারে তেমন ভিড় নেই। টিকিট করে মেডিসিন বিভাগে চলে গেলাম। প্রস্তাব এল “আপনি নিজেও করতে পারেন, আমার সাহায্য নিয়েও করতে পারেন।

সাহায্য নিলে হয়তো একটু তাড়াতাড়ি হবে। সেক্ষেত্রে আপনার কিছু এক্সট্রা পেমেন্ট হবে। ” আজকের মধ্যেই রিপোর্টটা হাতে পেলে ভাল হয়। এক্সট্রা পেমেন্টের প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলাম। তারপরেই সবকিছু সহজ হয়ে গেল।

দেখলাম কয়েক ঘণ্টার জন্য খুব কাছের একজন মানুষ পেয়ে গেলাম। কাছের মানুষের সাথে ফর্মালিটি চলে না। তাই আমাকেও অনেক ফর্মালিটি থেকে রেয়াত দেওয়া হল। ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল। ১৫ কোটি মাথা।

মাথাপিছু আয়ের ডলারের অংকটা টাকায় কনভার্ট করলে যত বড়ই দেখাক, তা আধমরা জনগোষ্ঠীর পকেটকে কোনভাবেই ভারী করতে পারেনা। তাই সরকারি হাসপাতালের লম্বা করিডোরে তার চেয়েও লম্বা লাইন। লাইনের ফর্মালিটির মধ্যে না গিয়ে আমাকে সরাসরি এক্সরে রুমে নিয়ে যাওয়া হল। আমার আগে একজন বুড়ো মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন। থাকলেনই বা।

ওটা ফর্মালিটি। তাকে দাঁড় করিয়ে রেখে আমার এক্সরে করা হল। দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে তার। এক সময় বসে পড়লেন তিনি। আমি নির্বিকার চিত্তে শুধু নব্য আপন জনকে অনুসরণ করে গেলাম।

চিত্ত এত সহজে চঞ্চল হওয়াটা দুর্বলতার লক্ষণ। তারপর বাকি থাকল ব্লাড স্যাম্পল নেওয়া। আমাকে নিয়ে যাওয়া হল দোতলায়। অনেক মানুষ বসে আছে। ক্লান্তি-ক্লিষ্ট মানুষ, ব্যধি-পীড়িত মানুষ, রোগীর সাথে আসা মানুষ, রক্ত দিতে আসা মানুষ, রক্ত খেকো মানুষ।

অপেক্ষমান মানুষের ভীড়ে সদ্য যোগ দেওয়া আমার হাত থেকে রক্ত নেওয়া হচ্ছে। রক্তপিপাসা মিটলে সিরিঞ্জ থামল। ঘণ্টা দেড়েক পরে এসে সবগুলো রিপোর্ট নিয়ে যেতে বলা হল। ফুরফুরে মেজাজে শহীদ মিনার চত্বরে বসে কিছু জরুরী ফোন সেরে নিলাম। এখনো অনেক কাজ বাকি; কাগজপত্র সত্যায়ন (কারণ এখানে কোন কাগজে কখনোই সত্যি কথা লেখা থাকে না), চরিত্র সম্পর্কিত গণ্যমান্য ব্যক্তির সুপারিশ ইত্যাদি।

ফোনে ফোনে সব কাজ এগিয়ে রাখাই ভাল। একবার দোয়েল চত্বর পার হয়ে কার্জন হলের কাছটা একটু ঘুরে এসে রিপোর্টের কী অবস্থা খোঁজ নিতে চলে গেলাম। বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না। রিপোর্ট হাতে চলে এল। আমার হাতে রিপোর্ট পাচার করে দিয়েই তিনি আবার ব্যস্ত হয়ে গেলেন আমার হবু কলিগদের ফর্মালিটির দূরত্ব ঘোচাতে, কারণ আমরাই দেশ ও দশের কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করতে যাচ্ছি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।