আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তাহাদের গল্প

আমি অনেক ছোট একটা মানুষ। রাত দশটা। টুং টাং শব্দ তুলে শায়লার মোবাইলটা বাজছে। একটা বই পড়ছিল শায়লা। বিরক্ত হয় বেশ।

এখন আবার কে ফোন করল? হ্যালো? শায়লা? আপনি কে? তুমি কি শায়লা? হ্যা। আপনি কে? ভাল আছ? আশ্চর্য, কে আপনি? জবাব দিচ্ছেন না কেন? আমাকে চিনবে না। মনে কর তোমার বন্ধু? ধেত্তেরী, যত ঝামেলা। ফোনটা কেটে দিয়ে আবার বইয়ের মাঝে ঝাপ দেয় শায়লা। পরদিন সকালবেলা।

রিকশা থেকে ডিপার্টমেন্টের সামনে নামলো শায়লা। ওইতো সবাই বসে আছে, কদমগাছটার নিচে। দ্রুত পায়ে এগিয়ে যায় ও। কিরে, ক্লাস হবে না এখন? নাহিদ ওর দিকে ঘুরে একটা মিচকি হাসি দিল। হাসিস ক্যান? ক্লাস হবে না কেন? অবশ্যই হবে।

হাসিমুখে জবাব দেয় নাহিদ। অবশ্য সে ক্লাস কি আর তোর করা হবে...এবার নিশা। মানে কি? ক্লাস করব না কেন আমি? বিরক্ত হয়ে ওঠে শায়লা। কেন আবার......ওই দেখ, জিসান ভাই!! কই? চরকির মত পাক খেল শায়লা। পিছনে কেউ নেই।

আবার ঘুরল ও। কই জিসান ভাই? কোমরে দুই হাত চলে গেছে শায়লার। তোর এক্সপ্রেশনটা দেখলাম। এইবার মিচকি হাসি নিশার মুখে। তোর খবর আছে আজকে! হুমকি দেয় শায়লা।

ওর ওপর খেপিস না শায়লা। জিসান ভাই আজ সত্যিই এসেছে। সুমন জানায় এইবার। সত্যি? কই? লাইব্রেরীতে দেখলাম। তাই নাকি? আমি গেলাম তাইলে!! প্রায় দৌড়ে চলে যায় শায়লা।

পেছনে সবাই হাসে। প্রথম দিন ক্যাম্পাসে এসেই জিসান ভাইয়ের প্রেমে পড়ে গেছে শায়লা। এমন ড্যাশিং, হ্যান্ডসাম, সর্বগুনে গুণান্বিত ছেলের প্রেমে অবশ্য বেশিরভাগ মেয়েই পড়বে। কিন্তু বেশি হ্যান্ডসাম বলেই বোধহয় জিসান ভাই মেয়েদের পাত্তাই দেয় না। শায়লা দু’একদিন কথা বলতে গেছে এটা-সেটা অজুহাতে।

কথা বলার সময় দিব্যি হেসে কথা বলবে, চোখের আড়ালে গেলেই যেন চিনতে পারে না। শায়লাও অবশ্য হাল ছাড়ে নি, চেষ্টা চালিয়ে গেছে জিসান ভাইয়ের চোখে পড়ার। তাতে লাভ হয়নি খুব একটা, শুধু মাঝখান থেকে সবাই জেনে গেছে ওর পাগলামির কথা। শায়লার মাঝে মাঝে মনে হয় একমাত্র জিসান ভাই বাদে সবাই মনে হয় এখন জানে। দৌড়ে লাইব্রেরীতে এসে এদিক ওদিক তাকায় শায়লা।

যাকে খুঁজছে সে কোথাও নেই। মনটা খারাপ হয়ে যায় ওর, তাহলে নাহিদ, সুমন ওরা ওর সাথে ফাযলামি করছিল? শালা! মন খারাপ করেই লাইব্রেরী থেকে বেরিয়ে আসে শায়লা। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে, ক্লাস করার দরকার নেই আজ। হাটতে হাটতে ডিপার্টমেন্টের সামনে এসে দাঁড়ায় ও। রিকশা খুঁজতে থাকে।

হঠাত করেই ওর সামনে দিয়ে একটা রিকশা চলে যায়। জিসান ভাই বসে আছে তাতে। খুশিতে লাফিয়ে ওঠে প্রায় শায়লা, ওই তো! মনটা যেমন হুট করে খারাপ হয়ে গেছিল, তেমনি আবার সাথে সাথেই ভাল হয়ে যায় ওর। সেদিন বাসায় ফিরেও শায়লার মনটা অনেক ভাল হয়ে থাকে সারাদিন। সন্ধায় ছাদে দাঁড়িয়ে শহর দেখে ও, অনেকদিনের অভ্যাস।

সেদিনও তাই করে ও। কতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল খেয়াল নেই শায়লার। চমক ভাঙ্গে হাতের মোবাইলটার আওয়াজে। তাকাতেই দেখে কাল রাতের সেই নাম্বার। দ্বিধায় পড়ে যায় ও, রিসিভ করবে, নাকি করবে না? হ্যালো? শায়লা? আপনি আবার ফোন করেছেন কেন? মেয়েদের ডিস্টার্ব করতে খুব মজা লাগে, না? ওপাশে চুপ।

কথা বলেন এখন? গলা চড়ায় শায়লা। আমি তোমাকে ডিস্টার্ব করার জন্যে ফোন করিনি শায়লা। তাহলে? তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি? কি কথা? তুমি জিসানকে ভালোবাসো? থমকে গেল শায়লা। কে এই লোক? জিসান ভাইয়ের কথা জানল কিভাবে? কথা বল শায়লা। আপনি কে? জিসান ভাইয়ের কথা আপনাকে কে বলেছে? আমাদের ভার্সিটির কেউ আপনি? তোমার সব প্রশ্নের জবাব আমি দেব, কথা দিচ্ছি।

তবে এখন না। তুমি আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও। আমাকে বিশ্বাস করতে পারো, আমি তোমার কোন ক্ষতি করব না। আপনি ব্যাক্তিগত প্রশ্ন করছেন। এ ধরনের প্রশ্নের জবাব আমি দেব না।

প্লীজ শায়লা। এই কথাটা জানা আমার জন্যে খুব দরকার। প্লীজ। একটু ভাবল শায়লা। কথাবার্তা শুনে এ লোককে খারাপ বলে তো মনে হচ্ছে না।

আর যা জানতে চাইছে তা অনেকেই জানে, আরেকজন জানলে আর কি এমন হবে! হ্যা করি। তো? জিসান ভাইকে আমি পছন্দ করি সেটা সবাই জানে। ওপাশে আবার চুপ। হ্যালো? হ্যালো?? খানিকক্ষণ নিরবতা। তারপর আবার কথা শোনা গেল ওপাশে।

আর জিসান? জিসান তোমাকে পছন্দ করে? এবার সত্যিই ধাধায় পড়ে গেল শায়লা। কে এই ব্যাটা? ওর প্রেমে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছে এমন কোন রোমিও? প্রপোজ করার আগে খোঁজখবর নিচ্ছে? সেটা আপনি তাকেই জিজ্ঞেস করবেন, কেমন? আমার আর আপনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছে না। কোন কথা নেই ওপাশে। হ্যালো? মৃদু বীপ বীপ শব্দ করে লাইনটা কেটে যায়। এরপর কয়েকদিন এমনই কেটে যায় শায়লার।

কোন বৈচিত্র্য নেই, সারাদিন ক্লাস করা, বাসায় ফিরে খেয়ে দেয়ে মরার মত ঘুমানো। যে নাম্বার থেকে ফোন আসত সেটা সবসময় বন্ধ থাকে, ফলে ও আর বের করতে পারে নি কে হতে পারে সেই লোকটা। আস্তে আস্তে ফোনটার কথাও ভুলতে বসে ও। একদিন রাতে। ডিনারের পরে টিভি দেখছিল শায়লা।

এইসময় ফোনটা বাজতে শুরু করে। সেই পুরানো নাম্বার। (আগামী পর্বে সমাপ্য) আশা করি খুব তাড়াতাড়িই দিতে পারব! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।