আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিশ্চয়তার মুখে হাজার হাজার শিক্ষার্থী

গত ২৩/০১/২০১২ তারিখে দৈনিক সিলেটের ডাক (http://www.sylheterdakbd.com) এ প্রকাশিত সাইয়েদ আহমদ শহীদ (ছাত্র শাবি) এর লিখা কলাম পোস্ট করা হল--- শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিখ্যাত ওলি হযরত শাহজালালের নামে প্রতিষ্ঠিত সিলেটবাসীর গর্বের ধন, শিক্ষার হৃদপিন্ড। শাহজালালের বাণীর মতোই শান্ত নিরিবিলি এক ক্যাম্পাস।

নানা কারণে এটি সারাদেশের মধ্যে বিশিষ্ট এক শিক্ষালয়। সুদীর্ঘ ছায়াঢাকা প্রবেশ পথ, সুউচ্চ শহীদ মিনার, পাহাড় ঘেরা সবুজে ছায়া এক শান্তির নীড়। পুরো ক্যাম্পাসটি যেন একখন্ড সবুজ বাংলাদেশ। সারাদেশের শিক্ষাঙ্গনগুলো যখন নানা কারণে একের পর এক বন্ধ হয়েছে তখনও এটি তার আপন গতিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল। আমাদের ভিসি স্যার ড. সালেহ উদ্দিন সেদিন গর্ব করে বলেছিলেন ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় একদিনের জন্যও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার কারণে বন্ধ থাকেনি’।

আমরাও আমাদের বন্ধুরা যারা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে তাদের সাথে গর্ব করে বলি, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সবচে’ সেরা বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা চার বছরের অনার্স চার বছরের মধ্যেই শেষ করবো, তোমাদের মতো পাঁচ-ছয় বছর লাগবেনা। কারণ গত ৪ বছরে ছুটির দিন ছাড়া আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম একদিনের জন্যও বন্ধ থাকেনি। কিন্তু আমাদের এ গৌরব আর বেশিদিন টিকলোনা। ১১ জানুয়ারি ২০১২, তখন সন্ধ্যা নামি নামি করছে।

হলবাসী ছাত্রদের কেউ কেউ পরীক্ষা দিয়ে, কেউ ক্লাস শেষ করে ক্লান্ত দেহে ফিরে আসছিলো হলে। কেউ গেছে টিউশনে আবার কেউবা হলে অলস সময় কাটাচ্ছিল। এমন সময় হঠাৎ শোনা গেল ভয়ার্ত চিৎকার আর ভাংচুরের শব্দ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই শত শত ছেলে রামদা, চাপাতি নিয়ে রুমগুলো ভাংতে লাগলো আর সবাইকে পিটাতে লাগলো। ওরা শিবির হঠানোর শ্লোগান দিচ্ছে।

কিন্তু শিবির আর সাধারণ ছাত্রের মধ্যে কোন ভেদাভেদ রইলনা, যাকে যেখানে পাচ্ছে পিটাচ্ছে আর হল ছাড়তে বলছে। আমরা যারা সাধারণ ছাত্র প্রাণভয়ে দরজা জানালা বন্ধ করে রুমের ভিতরে অবস্থান নিলাম। ওরা দরজা ভেঙ্গে ভেতরে আক্রমণ করে আমাদের পিটালো। আমাদের চোখে তখন মৃত্যু ভয়, শত অনুনয়-বিনয়ও ওদের টলাতে পারলোনা। কোনক্রমে পৈত্রিক প্রাণটা রক্ষা পেলো।

কিন্তু ওরা আমাদের রুমগুলো তছনছ করে দিল। আমরা জানে বেঁচে গেলাম, কিন্তু ওরা আমাদের সবশেষ করে দিল। ডিজিটালাইজেশনের যুগে নিজেকে সময়ের সাথে এগিয়ে রাখবো বলে টিউশন আর বাবার কষ্টের টাকা দিয়ে যে ল্যাপটপ কম্পিউটারটি কিনেছিলাম ওরা চোখের সামনে তা নিয়ে গেলো। কাপড়-চোপড়, গ্লাস, ফ্যান থেকে শুরু করে যা নেয়া যায় সবই নিল, আর বাকীগুলো ভেঙ্গে খান খান করে দিলো। সারা জীবনের অর্জন সার্টিফিকেটসহ গুরুত্বপূর্ণ সব কাগজপত্রে আগুন ধরিয়ে জ্বালিয়ে দিলো।

অন্ধকার করে দিল পুরোটা জীবন। কিন্তু আমাদের অপরাধ কি ছিল আজও আমরা তা জানিনা। কিন্তু ঘটনা এখানেই শেষ হয়নি। হল ছাড়া হয়ে ছাত্র শিবির আবার হল দখল নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তারা ক্যাম্পাসের বাইরে ছাত্রলীগের যাকে পাচ্ছে তাকেই পিটাচ্ছে।

ছাত্রলীগ ও ক্যাম্পাস ও হলগুলোতে শসস্ত্র মহড়া দিচ্ছে। তারা শিবিরকে আর হল কিংবা ক্যাম্পাসে উঠতে দিবে না। আবার শিবিরও তাদের ক্ষতিপূরণ এবং সহাবস্থানের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন গাড়ি বাইরে বেরুলে হামলা চালাচ্ছে, আহত হচ্ছে বিভিন্ন জন, কিন্তু বিপাকে পড়েছে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা। ছাত্রলীগ আর শিবিরের সংঘর্ষের ভয়ে তারা যেতে পারছে না ক্যাম্পাসে।

ফলে কার্যত অচল হয়ে গেছে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়। গত ১১ জানুয়ারী থেকে বন্ধ আছে ক্যাম্পাস। অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীর শিক্ষাজীবন। এ অবস্থা চলতে থাকলে নিশ্চিত সেশনজটের কবলে পড়বে শাবি, এমন আশংকাই করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাই এ অবস্থার নিরসন দরকার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।

ঘটনার পেছনে মূল দায়ী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে তাদের যথাযথ শাস্তি এবং ক্ষতিগ্রস্থ শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণ দেয়াটাও জরুরী মনে করছেন শিক্ষকবৃন্দ। বর্তমান সরকারের গত তিন বছরের শাসনামলে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ঝামেলা ও অস্থিরতা বাড়লেও সিলেটের এ বিশ্ববিদ্যালয়ে গত তিন বছরে কোন সমস্যা হয়নি। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানেই ছিল ছাত্র সংগঠনগুলো। কিন্তু হঠাৎ কোন কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হল তাও খতিয়ে দেখা দরকার বলে ভাবছেন অনেকে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঝামেলা এড়াতে বাড়িতে চলে যাচ্ছে।

আর ওদিকে অভিভাবকরা আছেন উদ্বেগ-উৎকন্ঠায়। তারা ভয় পাচ্ছেন তাদের সন্তানদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে। পুরো ক্যাম্পাসে বিরাজ করছে রাজ্যের আতংক। আর এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে সিলেটের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতেও। এ অবস্থা আর বেশিদিন চলতে পারে না।

তাই শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি তাদের শিক্ষাজীবন যাতে দীর্ঘায়িত না হয়। আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরব ধরে রাখতে চাই। আর শান্তিপ্রিয় সিলেটবাসী এ ক্যাম্পাসে আর রক্তপাত দেখতে চান না। তাই কর্তৃপক্ষের উচিত যত দ্রুত সম্ভব এর সুষ্ঠু সমাধান করা। ----সাইয়েদ আহমদ শহীদ (শাবি)  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.