"হরি আছেন পূর্বে, আল্লা আছেন পশ্চিমে, তুমি তোমার হৃদয় খুঁজে দেখ- করিম ও রাম উভয়েই আছেন হৃদয়ে; এ জগতের সমস্ত মানব-মানবীই তাঁর অংশ। " (সন্ত কবীরের গান; তর্জমা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর) উৎসর্গ
নকশালবাড়ি-র শহিদদের পূণ্য স্মৃতির উদ্দেশে
ব্রতী নেই, ব্রতীরা থাকে না।
ব্রতীদের ঘর থাকে, মন খারাপ করে দেওয়া বিষন্নতা নিয়ে;
ব্রতীদের সাইকেল পড়ে থাকে এককোণে বারান্দার,
পড়ে থাকে বর্ষাতি যা আর কেউ ব্যবহার করে না,
সবকিছুই থাকে শুধুব্রতীরা থাকে না।
ব্রতীদের দেশ নেই মা নেই বাপ নেই ভাই নেই বোন নেই
সবই আছে আবার কিছুই নেই
তাই তাঁদের গুলি খাওয়া "সমাজবিরোধী" লাশ শেয়াল কুকুরে খায় ঈশ্বরের বড়ই করুণা
তাই তাঁদের জন্য কোথাও কেউ নেই
সুজাতাদের স্বপ্নে ব্রতীরা কেবল পড়ে মৃত্যুর বিষাদ কবিতা
সুজাতারা ভুলে যান জন্মদিনের দিনে
ব্রতীরা মরে যায়
ব্রতীদের মরে যেতে হয়
সমাজের "কল্যাণের" কারণে
রাষ্ট্রের "শান্তির" স্বার্থে
ব্রতীদের মরে যেতে হয় সকলের অগোচরে
ব্রতীরা শিশিরের শব্দের মতো ঝরে যায়
ব্রতীরা মরে যায়
সুজাতারা,
বোকা মায়েদের দল,
ঘর গোছান
ব্রতীরা আসবে তো
পড়ার টেবিল গোছান
ব্রতীরা আসবে তো
বিছানা পরিপাটি করে রাখেন
ব্রতীরা আসবে তো
ব্রতীরা আসে না
ফিরে আসে না
ব্রতীরা ফিরে আসার জন্য আসে নি এই পৃথিবীতে ...
ছোটবেলায় ব্রতীদের ঘুম ভেঙে গেলে
ভয় পেত তারা
মাকে খুঁজত
সুজাতারা আসতেন
বুকে টেনে নিতেন
"কি হয়েচে খোকা, ভয় পেয়েচো বুঝি?এই তো মামানি... ভয়ের কি?"
কিন্তু এখন সুজাতারা যখন খোঁজেন
ঘুম ভেঙে গেলে
ব্রতীদের
ব্রতীরা আসে না
সুজাতারা ভয় পান
কষ্টে
এক ধরণের কাঁদতে না পারার কান্নায়
সুজাতারা অসহায়ের মতো ব্রতীদের খোঁজেন
"বাবা, কই তুই। আমার ভয় করে।
ব্রতী ফিরে আয়। আমার ভয় করে। "
ব্রতীরা ফেরে না...
ব্রতী নেই, ব্রতীরা থাকে না;
সমাজ রাষ্ট্র তার সুন্দর চকচকে বিন্যাসে
ব্রতীদের থাকতে দেয় না
কারণ ব্রতীরা মুখোশ চেনে
বিন্যাসের আপাত আলোর আড়ালে যে জঘন্য আঁধার
ব্রতীরা তা চেনে
ব্রতীরা তা চেনাতে চায়
তাই ব্রতীদের লাশ পড়ে থাকে
এখানে সেখানে
ভদ্র মানুষের দল মন্তব্য করে
দেশটায় কোনো ডিসিপ্লিন নেই।
দার্জিলিং কবে যাচ্চেন বেড়াতে, বলুন তো?
ইয়ং জেনারেশন ইজ টু মাচ ভায়োলেন্ট।
ব্রিটিশ পিরিয়ডে আমরা সো মাচ হ্যাপি ছিলাম!
ঠিক বলেচেন, আসলে উই ডোণ্ট ডিজার্ভ ইন্ডিপেন্ডেন্স, বুজলেন।
ঠিক ঠিক, কুত্তার পেটে ঘি হজম হয় না, হে হে হে।
আরে রেভোলিউশন তো একটা ইল্যুশন, আমাদের নেগোসিয়েশান নিডেড, বুজলেন মশাই।
তা যা বলেচেন দাদা।
এই রক্ত গরম ছেলেমেয়েগুলোর জন্যই কান্ট্রিটার ডেভেলাপমেন্ট আটকে আছে।
ব্রতীদের লাশ পড়ে থাকে
তার উপর নোংরা কুয়াশার মতন মন্তব্য...
কিন্তু সুজাতাদের অপেক্ষা শেষ হয় না
সুজাতারা অনন্তকাল অপেক্ষা করে
কলকাতায়
ঢাকার মধ্যবিত্ত ফ্ল্যাটে কোনো এক রুমে কারো পড়ার টেবিলে রাখা উপন্যাসের পাতায়
সুজাতারা অপেক্ষা করে
সুজাতাদের অশ্রু এত সহজে শুকায় না
সুজাতাদের অপেক্ষা এত সহজে শেষ হয় না
মায়েদের অপেক্ষা এত সহজে শেষ হয় না তো!
(মহাশ্বেতা দেবীর ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত উপন্যাস "হাজার চুরাশির মা"-এর ছায়া অবলম্বনে।
) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।