মিসরে সামরিক হস্তক্ষেপের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির অপসারণ ও সংবিধান স্থগিত করার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার আল-জাজিরার খবরে বিশ্ব নেতাদের ও সংস্থার একাংশের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র
মুরসির অপসারণের কিছু সময় পরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এক বিবৃতিতে জানান, তিনি এ ঘটনায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। শিগগিরই বেসামরিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করার আহ্বান জানান তিনি।
ওবামা বলেন, ‘জটিলতা ছাড়া গণতন্ত্রে উত্তরণ হয় না, কিন্তু শেষ পর্যন্ত জনগণের ইচ্ছায় সত্যের প্রতিষ্ঠা ঘটে।
মিসরের সাধারণ জনগণ যা চায় ও যা তাদের প্রাপ্য, যারা সেই ইচ্ছার মূল্য দেবে, তারাই কেবল একটি সত্, যোগ্য ও প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার হতে পারে। ’ তিনি আরও বলেন, মিসরে গণতন্ত্রের উত্তরণে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সঙ্গে মিলিতভাবে কাজ করবে।
মুরসিকে হটানোর পরপরই কায়রোয় অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের মিসর ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে ওই বিবৃতিতে জানানো হয়।
যুক্তরাজ্য
মিসরের বর্তমান পরিস্থিতিতে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্য।
ক্ষমতা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সামরিক হস্তক্ষেপের সমালোচনা করেছে দেশটি। এ ঘটনাকে ‘অভ্যুত্থান’ বলতে নারাজ যুক্তরাজ্য।
দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হেগ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার রাজনৈতিক সংকট নিরসনের উপায় হিসেবে সামরিক হস্তক্ষেপকে কখনো সমর্থন করে না যুক্তরাজ্য। ’ দ্রুত নির্বাচনের আয়োজন করা ও সমস্যা সমাধানে দেশটির রাজনৈতিক দলগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘জনগণের রায়ে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক একটি সরকারই কেবল দীর্ঘ মেয়াদে স্থিতিশীলতা বয়ে আনতে পারে।
’
ফ্রান্স
মিসরে ক্ষমতার পালাবদলের পর দ্রুতই দেশটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার ঘোষণা দেওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে ফ্রান্স। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী লরাঁ ফেবিয়াস বলেন, ফ্রান্স আশা করে জনগণের শান্তি, ব্যক্তি স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রতি সম্মান রেখে দ্রুতই একটি সময়সীমা নির্ধারণ করা হবে, যাতে করে মিসরের জনগণ স্বাধীনভাবে তাদের নেতা ও ভবিষ্যত্ বেছে নিতে পারে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন
মিসরে শিগগিরই গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইইউর পররাষ্ট্রনীতি-বিষয়ক প্রধান ক্যাথেরিন অ্যাস্টন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমি সব পক্ষকে দ্রুত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানাই। গণতন্ত্রে উত্তরণের পথ হিসেবে প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে এবং সংবিধানকে অনুমোদন দিতে হবে।
’
অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী কেভিন রাড বলেন, মিসরে যত দ্রুত সম্ভব পূর্ণ গণতন্ত্র দেখতে চান তাঁরা। মিসরে অবস্থানরত সব অস্ট্রেলিয়ান নাগরিককে ওই দেশ ত্যাগ করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
সৌদি আরব
সৌদি আরবের বাদশা আবদুল্লাহ মিসরের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান আদলি মানসুরকে অভিনন্দন জানিয়ে গতকাল একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে বলা হয়, ‘মিসরের এই সংকটময় সময়ে সৌদি জনগণের পক্ষ থেকে আমরা আপনাদের অভিনন্দন জানাই। আমরা প্রার্থনা করি, আপনাদের ওপর যে দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে, তা যেন পালনে আপনারা সমর্থ হন।
’
সংযুক্ত আরব আমিরাত
মিসরের সেনাবাহিনীর উদ্যোগের প্রশংসা করে দেশটির রাজনৈতিক পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। দেশটির রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সংবাদ সংস্থা ডব্লিউএএম জানায়, সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ান আশা প্রকাশ করেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে মিসরের জনগণ এই সংকটকালীন মুহূর্ত পার করতে সক্ষম হবে।
সিরিয়া
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ গতকাল মিসরের জনগণের সরকারবিরোধী আন্দোলনের প্রশংসা করেছেন। সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মুরসির অপসারণকে তিনি ‘রাজনৈতিক ইসলামের’ সমাপ্তি বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্বে যারাই ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে, তাদের এমনই পরিণতি হবে।
’।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।