আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বর্তমান মিশর সংকট ও মুরসির অবস্থান

I want to make me as a blog writter. তিউনিসিয়ায় একজন ফল বিক্রেতার আত্বহুতির মধ্যে দিয়ে আরব ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোতে যে গণ আন্দোলন শুরু হয়েছিল তার প্রবল দমকা হাওয়া লেগেছিল মিশরে। ১৯৮১ সালে ইসরাইলের সাথে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরে বিক্ষুব্ধ সৈনিকের হাতে আনোয়ার সাদাত প্রাণ হারানোর পর তখনকার ভাইস প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেই সময় থেকে শুরু করে তিনি যে জরুরী অবস্থা জারী করেছিলেন তা ৩০ বছর ধরে অব্যাহত ছিল। দুর্নীতি কলুষিত প্রশাসন, অর্থনীতির ভঙ্গুর অবস্থা ও বেকারত্বের মাত্রা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে মিশরের সাধারন মানুষ এই নির্যাতন,নীপিড়ন ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে রুখে দাড়ায়। এই মোবারক বিরোধী আন্দোলনে মুলশক্তি হিসেবে আবির্র্ভূত হয়েছিল দীর্ঘ দিন নিষিদ্ধ থাকা সংগঠন “মুসলিম ব্রাদারহুড” ও মিশরের প্রতিবাদী জনতা।

গত বছরের ফেব্রুয়ারীতে এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল। টানা ১৮ দিনের আন্দোলনে পতন ঘটে ৩০ বছরের স্বৈরশাসক হোসনি মোবারকের। এরপর দেশটির ভঙ্গুর অর্থনৈতিক অবস্থার পুনর্গঠন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনয়নের জন্য প্রয়োজন ছিল দ্রুত গণতান্ত্রিক নির্বাচনের। এর ধারাবাহিকতায় গত ২৪ জুন দেশটির মানুষের জন্য ঘটে বড় বিজয়। মুসলিম ব্রাদারহুডের সর্মথিত প্রাথী ডঃ মুরসি ৫১.৭৩ শতাংশ ভোট পেয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

স্বৈরশাসনে জর্ড়জড়িত দেশটির গণতান্ত্রিক নির্বাচনের পর জনগনের মনে অনেক আশার সঞ্চারিত হয় এবং প্রেসিডেন্ট মুরসির সামনে অনেক গুলো চ্যালেজ্ঞ চলে আসে। তারমধ্যে অন্যতম ছিল সেনাবাহীনির ক্ষমতা কমিয়ে আনা,স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরী করা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা ইত্যাদি। আর এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য মুরসি সরকারের উচিত ছিল উন্নয়ন মুলক কাজের পাশাপাশি গতিশীল প্রশাসন গঠনের চেষ্টা করা ও সাধারণ মানুষের আশা আকাঙ্খা পূরনের দিকে দৃষ্টিপাত করা। কিন্তু সে প্রচেষ্টাকে পিছনে রেখে মুসলিম ব্রাদারহুহের নেতৃত্বদানকারী ও মিশরের বর্তমান প্রেসিডেন্ট মুরসি নিজের ক্ষমতাকে সুসংহত করার জন্য ২২ শে নভেম্বর এক ডিক্রি জারি করেন এবং তিনি ঘোষনা করেন নতুন সংবিধান প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত এই ডিক্রি অব্যাহত থাকবে। মুরসি বলেছেন যে মিশরের প্রয়োজনীয় সংস্কার ও মোবারক ও তার সহযোগীদের বিচারের জন্য এ ডিক্রি জারী করা হয়েছে।

এই ডিক্রি জারীর ফলে মিশরে বিক্ষোভ শুরু হয়। এছাড়াও গত বৃহস্পতিবার মিশরের প্রথম গণতান্ত্রিক সরকার নতুন সংবিধানের খসড়া প্রণয়ন করেন এবং সংসদে এটি অনুমোদন করিয়ে নেয়। ফলে খসড়া প্রণয়ন কমিটিতে বিরোধী দল ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু খ্রীষ্টানদের যে প্রতিনিধি ছিল তারা সকলে এই সংবিধান কে “অগণতান্ত্রিক” আখ্যা দিয়ে কমিটি থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেন। উদারপন্থী নেতা মুরসি এই অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রতিবাদে মিশরের জনগণ রাজধানী কায়রো সহ বেশ কয়টি শহরে বিক্ষোভ ও আন্দোলন করে যাচ্ছে। এর সাথে যোগ দিয়েছে ২২ টি ভিন্ন ধারার রাজনৈতিক দল ও মোবারক পন্থী সমর্থকরাও।

অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট সমর্থকরা পাল্টা বিক্ষোভের ডাক দিলে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এরই মধ্যে সেখানে ৬ জন নিহত ও কমপক্ষে ৫ শ’ জন আহত হয়েছে। ্এছাড়াও প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ জনগণ ঘেরাও করে রেখেছে ও সেখানে ট্যাংক মোতায়েন করা হয়েছে। কিন্তু তাই বলে জনগনের বিক্ষোভ শেষ হয়ে যাবে তা বলা যায় না। মুরসি ক্ষমতায় এসে মিশর কে গনতন্ত্রের পথে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন।

কিন্তু সেদিনের মুরসি ও আজকের মুরসি কে এক মনে হয় না। কারণ জনগনের বিক্ষোভ তা প্রমাণ করে দিয়েছে। তবে এই ডিক্রি ও সংবিধান প্রণয়ন এবং ১৫ ডিসেম্বর যে গণভোটের কথা বলা হয়েছে তা কি মুরসির ক্ষমতা সুসংহত করার জন্য না এর পেছনে অন্য কোন কারণ রয়েছে তা ভেবে দেখা দরকার। কারণ যে উদারপন্থী মুরসি জনগণের রায়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে মিশরের হাল ধরলেন তিনি কি সত্যিই তার ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এই ডিক্রি জারী করেছেন না মিশর কে সত্যিকারের একটি ইসলামিক রাষ্ট্রের দিকে নিয়ে যেতে চান? মুরসি ইসলামী আদর্শে বিশ্বাসী একজন নেতা এবং তিনি যে দল থেকে নির্বাচিত হয়েছেন তাতে করে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ও ইসলামী শরীয়াহ আইনের উৎস হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বামপন্থি ও ধর্মনিরপেক্ষ নেতারা এটাকে মেনে পারছেন না।

ফলে তার মুরসিকে ২য় ফারাও বলে অভিহিত করছেন এবং আন্দোলনে মদদ যোগাচ্ছেন। মুরসি ক্ষমতায় আসার পর এই অল্প সময়ের মধ্যে যে নীতি গুলো গ্রহন করেছেন তা তার দুরদর্শীতার পরিচয় বলে মনে হয়। কারণ যদিও মুরসি পশ্চিমা বিরোধী মনোভাব ধারণ করেন তারপরও তিনি ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোর সাথে ভাল সম্পর্ক রাখার কথা বলেছেন। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে তিনি চীন ও তুরস্ক সফর করেছেন। আর এ থেকে বোঝা যায় যে তিনি পশ্চিমাদের উপর সরাসরি নির্ভরশীল না হয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য মুসলিম বিশ্বকে গুরত্ব দেওয়ার পাশাপাশি পূর্বমূখী নীতি গ্রহন করেছেন।

এছাড়াও তিনি ক্ষমতা গ্রহনের পর সেনাবাহীনির ক্ষমতা অনেকটা কমিয়ে এনেছেন। তাছাড়া ফিলিস্তিনিদের প্রতি তিনি তার শক্ত অবস্থার কথা ঘোষনা করেছেন এবং তার মধ্যস্থতায় ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে অস্ত্রবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। তাছাড়াও ফিলিস্তিন কে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের মর্যাদা প্রদানের ক্ষেত্রে অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে ফিলিস্তিনের পক্ষে ভোট দেন এবং গুরত্ব পূর্ন ভূমিকা পালন করেন। এই নীতি গুলো তার যথার্থ ছিল। কিন্তু তিনি ডিক্রি জারী করে মিশরের জনমণে আঘাত হেনেছেন।

কারণ যে মিশরের যে জনতা বঞ্চনা আর অথনৈতিক মুক্তির জন্য মোবরকের পতন ঘটিয়েছে আবার তারা তার পূনরাবৃত্তি দেখতে চায় না। আর মুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরে পাওয়ার পর মানুষ তার অধিকার আদায়ের জন্য রাস্তায় নেমে আসবে এটাই স্বাভাবিক। তাই মুরসি যদি তার স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যই এ ডিক্রি জারী করে থাকেন তবে তার জন্য মোবারকের পথই অপেক্ষা করছে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মুরসির এ ডিক্রি ক্ষমতা কুক্ষিগত করার কৌশল নয় বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন। দুর্নীতির করাল গ্রাস থেকে মুক্ত হয়ে মিশর কে গণতান্ত্রিক পথে নেওয়ার জন্য প্রয়োজন একটি শক্তিশালী সংবিধানের।

তাই বলা যায় মুরসি যদি গণতান্ত্রিক পথে উত্তরণের জন্য এটি করে থাকেন তবে তিনি ভূল করছেন না বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন। তাহলে এখন প্রশ্ন যে জনগণের বিক্ষোভ কি অযৌক্তিক? জনগণ কি আন্দোলন না করে ধৈর্য্য ধরতে পারত না? হয়তোবা পারত। কিন্তু যে কোন বিক্ষোভ বা আন্দোলনের পিছনে কিছু ভাল বা খারাপ উদ্দেশ্য থাকতে পারে। আর যদি সেটা হয় রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে তবে সেখানে বড় ধরনের নাশকতা মুলক ষড়যন্ত্র থাকতেই পারে এটাই স্বাভাবিক। মুসলিম ব্রাদারহুডের শুরু থেকেই লক্ষ্য ছিল মিশরে ইসলামের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করা।

আর যখন এই সুযোগ হাত ছানি দিয়ে তাদের হাতে ধরা দিল ঠিক তখনি যেন আবার মিশর সংকটের পথে যা্েচ্ছ। এই আন্দোলন ও বিক্ষোভ শুধু মুরসির ডিক্রি কে ধিক্কার জানানোর জন্য না এর পেছনে কোন ইহুদিবাদী ষড়যন্ত্র মদদ যোগাচ্ছে সেটাও দেখার বিষয়। কেননা পৃথিবীর শুরু থেকেই দেখা যায় যে যেখানেই ইসলামের প্রসার শুরু হয়েছিল সেখানেই পশ্চিামাদের লোলুপ দৃষ্টি ও ইহুদিবাদী চক্রান্ত শুরু হয়েছে। ঠিক মিশরের ক্ষেত্রেও এমনটা ঘটছে কি না সেটাও দেখার বিষয়। কেননা ইতোমধ্যে প্রেসিডেন্ট কে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মিশরের জাদরেল তিন নেতা মোহাম্মদ এলবারাদি, আমর মুসাহামদেইন ও সাবাহির নামে মামলা করা হয়েছে।

প্রসিকিউটর জেনারেল তালাত ইব্রাহিম বলেছেন, ইসলামপন্থি সরকারের বিরুদ্ধে “ইহুদিবাদী ষড়যন্ত্রের” শুরু হয়েছে। এছাড়াও আমরা দেখেছি ২০০৪ সালে আফগানিস্থানের ক্ষমতা থেকে সন্ত্রাসাদের অপবাদ দিয়ে তালেবান কে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা হয়েছে। কিন্তু এখন এই পরিস্থিতিতে মুরসির অবস্থান কি হবে এবং তার করণীয় কি তা দেখার বিষয় বলে বিশ্লেকগণ মনে করেন। তিনি কি সত্যিই নিজের ক্ষমতা বাড়াতে চান না জনগণকে সাথে নিয়ে মিশর কে গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান? যদি সেটাই হয় তবে মুরসির এখন উচিত দল মত নির্বিশেষে সকল বাম, ধর্মনিরপেক্ষ ও অন্যান্য উদারপন্থি রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনায় বসে সংবিধান প্রণয়ন করা এবং তার অবস্থান সম্পর্কে জনগণকে অভিহিত করা। যাতে মিশরের জনগণ যে আশা নিয়ে মোবারকের পতন ঘটিয়েছিল তাদের সে প্রত্যাশা গুলো পূরণ হয়।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.