আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন রাজাকার সবসময় রাজাকার, কিন্তু একজন মুক্তিযোদ্ধা সবসময়ের জন্য মুক্তিযোদ্ধা নন

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের বিষয়টি এত জটিল যে আমি প্রায়ই ভাবি এ বিষয়ে কিছু লেখার মত ক্ষমতা আমার আদৌ আছে কি না। তাই এ প্রসঙ্গে কোন একাডেমিক তর্কে না যেয়ে আমার ব্যক্তিগত অনুভূতির কথা এখানে ব্যক্ত করি। জুয়েল একটা ভাল সূচনাকাল দিয়েছে। ৪০ বছর আগে যখন মুক্তিযুদ্ধে ভারত আমাদের মিত্রশক্তি ছিল। আমরা প্রায়ই একটা কথা বলি যে একজন রাজাকার সবসময় রাজাকার, কিন্তু একজন মুক্তিযোদ্ধা সবসময়ের জন্য মুক্তিযোদ্ধা নন।

তাহলে এই কথাটাই একটু ঘুরিয়ে তো এমন করে বলাই যায় যে মুক্তিযুদ্ধে আমাদের শত্রুদেশ পাকিস্তান সবসময়ের জন্যই শত্রু, কিন্তু মিত্রদেশ ভারত সবসময়ের জন্য মিত্র নয়। এমনকি মুক্তিযুদ্ধে ভারতের মিত্রতা কতটা আমদের প্রতি ভালবাসা থেকে উতসারিত আর কতটা তাদের নিজস্ব দায় থেকে সে নিয়ে বিতর্কের ঘোর অবকাশ আছে। ভারতের কূটনীতি নিয়ন্ত্রণ করে সাউথ ব্লক। নামে সাউথ হলেও কাজে নর্থ… অর্থাৎ উত্তর ভারতীয়রাই এর নিয়ন্ত্রা। ঐতিহাসিকভাবেই সেই মুগল আমল থেকেই উত্তর ভারতীয়রা বাঙ্গাল বিদ্বেষী আর এটা যে শুধু আমাদের ক্ষেত্রে তা নয়, পশ্চিম বাংলার ক্ষেত্রেও তা সমানভাবে প্রযোজ্য।

পশ্চিম বাংলার অনগ্রসরতার জন্য মমতা যতই বামফ্রন্টকে দুষুন না কেন আসল কালপ্রিট ঐ উত্তর। কিছুটা ব্যতিক্রম ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী… হয়তো শৈশবে শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্র সান্নিধ্যে থেকে তার মানস গঠনে কিছু পরিবর্তন এসেছিল। তাঁকেও বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নিতে অনেক লড়াই করতে হয়েছে উত্তরের ক্ষমতাশালীদের সাথে। আর পাকিস্তান ভেঙ্গে গেলে ভারতের যে ব্যাপক সুবিধা তা ইন্দিরাকে এই সুবিধা এনে দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হবার অব্যবহিত পরেই আমরা কী লক্ষ করলাম? ভারত তার লুটেরা চেহারা নিয়ে আবির্ভূত হল… আর সময়ের পরিক্রমায় এই চেহারা নোংরা থেকে নোংরাতর হচ্ছে।

ভারতের এই অনাচারই তাদের আমাদের চিরশত্রু পাকিস্তানের কাতারে নামিয়ে দিয়েছে যার সুবিধা নিচ্ছে আমাদের স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি। ভারতের অপকর্মের সুবাদে দেশে নব্য পাকিদের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে, কিন্তু এই সুযোগ তো ভারতই করে দিয়েছে। আমরা বড় মানুষ কাকে বলি? যিনি অন্যের স্বার্থে নিজের স্বার্থ বিসর্জন দিতে পারেন। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আমরা এতটা চাই না… যে আমার পাওনা অধিকারটুকু ঠিকমত দেয় তাকেই আমি বন্ধু বলে মানতে রাজি। কিন্তু এক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান কোথায়? উদারতা তো বরং আমরাই দেখিয়ে চলেছি, কিন্তু আমাদের ন্যূনতম অধিকারটুকুও কি আমরা আদায় করতে পারছি? তাহলে তাদের মিত্র ভাবি কি করে??? তাহলে আমাদের কী করণীয়? আমরা ধরেই নেই যে আওয়ামী লীগ ভারতের মিত্র।

আওয়ামী নেতা কর্মীদের অনেকেই এমন ভাবেন। তাদের কাজ কর্ম কথা বার্তা বডি ল্যাঙ্গুয়েজে হর হামেশা এটা ফুটে ওঠে। যে টিপাইমুখ নিয়ে খোদ ভারতে বিতর্ক চলছে সেখানে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ক্লিন চিট দেয়া বা বিনা শুল্কে ট্রানজিট চালুর মত আত্মঘাতী হাজারটা উদাহরণ দেয়া যায়। কিন্তু ভারত কি আওয়ামী লীগকে মিত্র ভাবে? মোটেই না, তা ভাবলে তারা এমন কিছু করে দেখাত যাকে পুঁজি করে আওয়ামী লীগ মানুষের কাছে যেতে পারত… বোঝাতে পারত যে ভারতের মিত্রতা আমাদের জন্য কতটা জরুরি। কিন্তু তা হচ্ছে না।

কেন? কেননা ভারত জানে যে বাংলাদেশে যে দলগুলো তথাকথিত ভারত বিরোধিতা করে তারা আসলে ভারতপ্রেমী। বাইরের ছদ্মাবরণ তাদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার একটা ছাপ্পা মাত্র। সে কারণে বাংলাদেশের ক্ষমতায় কে আসীন তা নিয়ে ভারত অত বেশি উদ্বিগ্ন নয়। সে কারণে আওয়ামী লীগ কিছু আদায় করে নেয়া তো দূরের কথা, জামদানি ইলিশ নিয়ে সদা তটস্থ না জানি দাদা আবার কখন অন্যের তরকারি চেখে দেখেন। শেখ হাসিনার অনেক বেফাঁস কথার মাঝে একটা সত্য কথা বেরিয়ে পড়েছিল, 'সেবার গ্যাস দেই নি বলে ক্ষমতায় যেতে পারি নি'।

তাই এবার আর অদেয় কিছু নেই...ন্যূনতম বার্গেইন পাওয়ারও আওয়ামী লীগের নেই, কেননা অন্যরাও তো ভারতের কৃপা পেতে মুখিয়ে আছে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারত-মার্কিন মিত্রতা একে আরো প্রকট করে তুলেছে। দেশে যদি এমন ছোট একটি দলও পাওয়া যেত যারা পাকিস্তান-ভারত-মার্কিন-চীন বাদ দিয়ে কেবলমাত্র এবং কেবলমাত্র বাংলাদেশকে ভালবাসত তাহলে আজকের অনেক হিসাবই অন্যরকম হতে পারত। কী করবে ভাই? ঐ যে নীলদর্পণে পড়নি, বেঁধে মারে সয় ভাল? ...by : Rahmatullah Imon. ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.