দ্বিধা-দ্বন্দের সমীকরণ ! প্রিয়তা, অবশেষে লিখছি তোমায়, অবশেষে, কেননা না লিখার ইচ্ছেটাও কম ছিলোনা একেবারে ! লিখছি
তবুও, ইন্টার ভার্সিটির স্বপ্নরঙিন জীবন পেরিয়ে এলে, আসা অনাকাঙ্ক্ষিত সেই ব্যাধিটার পর ! এ
সময়টার ভেতরে কত জীবন ঝরে গেলো জীবনের এই নন্দন কানন থেকে কিংবা কত জীবনের আবির্ভাব
ঘটলো তোমার আমার চারপাশে তাঁর কোনো হিসেবই নেই আমার কাছে ! হিসেব পাবেনা অজস্র নির্ঘুম
রাত্রি গুলোর অনির্বাচিত প্লাবনেরও । আজ আমার প্রস্থানের এই মধ্যরাতে মাটির বুকে জন্ম নেয়া
ঘাসফুলগুলো অবিরাম ভিজছে শিশির ফোঁটায় আর জানালার পাশে বসে তোমাকে লিখছি বিদায়ের এই চিঠি ।
আজ এই সন্ধিক্ষণে, প্রস্থানের এই মধ্যরাতে আমার, স্মৃতির ক্যানভাসে কেবলই ভেসে ভেসে উঠছে দিনগুলো
আমাদের, আমাদের দিনগুলি সেই, ভেসে ভেসে উঠছে কেবলই ! মনে পড়ছে এই শহর কেবলই,
ইট-কাঠ-সিমেন্টেও বড় মমতা জমে যায়, আহা ! মনে পড়ছে বছর ছয়েক আগের সেই ডিসেম্বর, স্মৃতিময়
এই স্টেশান, মনে পড়ছে আমার সেই পদার্পণ । মনে পড়ছে, সেবার বরিশাল ছেড়ে আসা, সে রাতে
বরিশাল ছেড়ে আসা নাইটকোচেটা একেবারে শেষরাতে এসে পৌঁছেছিলো তুমিময় এ স্টেশানে । পৌঁছেছিলো
একেবারে শেষরাতে ।
তখনো শিশির ঝরছে, ঝরছে টুপটাপ স্বরে ! সে রাতে মিরপুর ১০ এ ফেরার রিক্সা
কিংবা সিএনজি না পেয়ে, ভোর অপেক্ষায় তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলাম শিশির ঝরে ঝরে ভিজিয়ে দিচ্ছিলো
কীভাবে পিচঢাল রাস্তা, ভিজিয়ে দেয় কিভাবে স্টেশানে থরে থরে দাঁড়িয়ে থাকা বাসগুলো। ল্যাম্পপোস্টের
সোডিয়াম আলোর সাথে গাঢ় আঁধারির মেলামেশা দেখে সেই রাতেই ভাবনায় প্রথম এসেছিলো-, এই বুঝি
জীবনেরই ধ্রুবচিত্র । সেই শেষরাত গড়িয়ে এলো এরপর এই মধ্যরাতে, আমার তোমার খানিকটা সময় পেরিয়ে !
জীবনের বাঁকে চলতে চলতে এরই কোন ফাঁকে যে হৃদয়ের কার্নিশে এসে বসেছিলে তুমি, বসেছিলে লিচুর
ডালে বসে যেমন চড়ুই ক্ষণেক, বসেছিলে তেমনই ক্ষণেক ; অতঃপর স্বপ্ন-সম্ভাবনার স্পর্শে কীভাবে
কীভাবে যে এঁকে গেলে ভালোবাসা, গেলে যে কখন কীভাবে এঁকে সেতো আমার কাছেই জন্মান্তরের
বিস্ময় ! কতকিছু হলো জীবনের এই খেয়াঘাটে এরপর ; হলো দু’জনায় ! কতকটা পথ এরপর একসাথে
হাঁটতে হাঁটতে তুমিও যেদিন একলা হাঁটতে শিখলে একলা হেঁটেই ছুঁলে বিপরীত মেরু, সেই দিন আমিও
বুঝেছিলাম জীবনগুলো কেনো বয়ে যায় মহাদেব সাহার যমুনাধারা, বয়ে যায় কেনো ! রক্ত আর মাংসের
দাহে সেইদিন কতটুকু জ্বলেছি কিংবা কতটুকু জ্বালাতে চেয়েছিলে, সেইসব হিসেবে না গিয়েই আজ রাতে,
এই মধ্যরাতে, আমি আমি চলে যাচ্ছি । চলে যাচ্ছি কী পেলাম কিংবা কী হারালাম সে হিসেবে না গিয়েও !
চিঠিটা যখন হাতে পৌঁছবে, দূরত্বের হিসেবে ব্যাবধান তখন তিনশত পঁয়ষট্টি কিলোমিটার । পাঁচ মিনিটের
দূরত্বে থেকেও যে আমরা পৌঁছেছিলাম মঙ্গল গ্রহের চেয়েও অধিক কোনো দূরত্বে সে দূরত্বের কাছে
এতো নিতান্তই নগণ্য ! সামান্য একটা টিকিটে দূরত্বের কী রূপই আর আঁকা যায়, কীইবা আর এঁকে যাচ্ছি
বলো ? তবুও এই সন্ধিক্ষণে, সন্ধিক্ষণে এই স্মৃতির জানালায় ফিরে ফিরে আসছে যৌবনের রঙে রাঙানো
ঝলমলে নকশাগুলো, ফিরে ফিরে আসছে আমাকে এক পলক দ্যাখার জন্য তোমার অন্তহীন অপেক্ষা,
অভিমান, অনুরাগগুলো ।
ফিরে ফিরে আসছে আমাদের পাঁচ বছর, ফিরে ফিরে আসছে ! আজ আমি এই
লেকের জলে ভাসিয়ে দিয়ে যাচ্ছি সেইসব অভিমান, অনুরাগগুলো, ভাসিয়ে দিয়ে যাচ্ছি সেইসব দিনরাত্রি
আমাদের, যাচ্ছি ! তোমার আমার এই দূরত্বটুকু অজস্র জীবনেও অতিক্রম হবেনা আর ; হবেনা কোনোদিনই
আমাদের ! দূরত্বের চেয়েও দূরত্বের এই দূরত্বটুকু আক্ষেপের কাঁটা হয়ে নাহয় এ জীবনে অনতিক্রম্যই থাকল !
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।