আনাড়ী রন্ধন শিল্পীর ব্লগ B-)। ব্লগের বাজে-মানহীন লেখাগুলোর মাস্টার পিস দেখতে চাইলে এই ব্লগারের পোষ্ট গুলো পড়ে দেখতে পারেন। কথা দিচ্ছি, নিরাশ হবেন না। B-) বরাবরের মতন আজো পরীক্ষার হল থেকে বের হবার আগে বৃষ্টি নামলো। একেবারে ঝুম বৃষ্টি যাকে বলে।
হল থেকে বের হয়ে গেটের সামনে করিডোরে দাড়িয়ে আছে অহনা আর এ্যানী। দু'বান্ধবীর গলায় গলায় ভাব, মানিক জোড় যাকে বলে। ক্লাশ ওয়ান থেকে সেই যে পথ চলা শুরু ভার্সিটি লাইফেও কিভাবে যেনো দু'জনে এখনো একসাথে রয়ে গেছে তাই কেউ কেউ ওদের বলে জমজ বান্ধবী। একজন আরেক জনকে ছাড়া অসম্পূর্ণ! এখন এমন একটি অবস্থা দাড়িয়েছে যে স্যার-ম্যাডামরাও একজনকে ছাড়া আরেকজনকে দেখলে জিজ্ঞেস করেন জমজ বান্ধবীর আরেকজন কোথায়। ওরাও ব্যাপারটি খুব উপভোগ করে।
আজ প্ল্যান ছিলো পরীক্ষা দিয়ে দুজনে খাওয়া দাওয়া করবে। আগের দিন এ্যানী খাইয়েছে আজ অহনা খাওয়াবে। বৃষ্টি দেখে এ্যানী একটু শংকিত হলেও অহনা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ খাবেই। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি মাথায় নিয়েই বের হয়ে গেলো হল দুজনে। মনভরে খাওয়াদাওয়া করে খুশীমনে বাসায় ফেরে দুজনে যদিও অহনার মন একটু খারাপ অনেক দিন এ্যানীর সাথে দেখা হবেনা এ্যানী ওর বড় আপার বাসায় যাবে, কবে ফিরবে ঠিক নেই।
আজ দুজনে পরীক্ষার হলে বসে যা মজা করল যা হাসাহাসি হলো তা মনে করে দুজনে একচোট খুব করে আবার হেসে নিলো রিক্সায় বসে।
> আআআ....ধ্রুব চলে গেছেএএ....এটা কি হলোওওও.... অহনার ছোটখাটো চিৎকার শুনে এ্যানীর প্রশ্ন
>> আরে কি হইসে?
> আর বলিস না ধ্রুব'র দেয়া কলমের কালিটা শেষ হয়ে গেলো, শালা নিজেতো চলে গেছে শেষ পর্যন্ত কলমের কালিটাও....আমার প্রিয় কলমটা.... বিলাপের সুরে বলে দুজনের একসাথে হাসি।
পরীক্ষার খাতায় না লিখে হাসাহাসি দেখে আশেপাশের ছেলে-মেয়েরা অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলো ওদের দিকে।
একরাশ আনন্দ নিয়ে যে যার বাসায় ফিরে যায়।
*********************************
>মা দেখো কি চমৎকার বৃষ্টি হচ্ছে
>> হমম ভেজার মতন বৃষ্টি, ভিজতে পারলে ভাল লাগতো
> কতদিন বৃষ্টিতে ভিজি না, যাই বাড়ীওয়ালার বাসায় গিয়ে চাদের চাবি চেয়ে নিয়ে আসি।
পরক্ষনেই বাড়ীওয়ালার চেহারাটি চোখের সামনে ভেসে উঠতেই মিইয়ে গেলো অহনা। গতবছরও বৃষ্টি একদমই পছন্দ করতো না অহনা, এই বছর খুব কম বৃষ্টি হওয়ার ফলেই কিনা কে জানে বৃষ্টির জন্যে ছটফট করতে থাকে। বৃষ্টি ওর খুব ভাল লাগে। ছাদে যেতে না পেরে মনটা ছটফট করতে থাকে এক দৌড়ে বারান্দায় গিয়ে দাড়ায় ভেজার আশায় কিন্তু সেখানে সুবিধা করতে পারেনা। মন খারাপ করে বাইরে তাকিয়ে থাকে আর আর ভাবে এই শহরেই আর থাকবেনা চলে যায় তার কল্পনার জগতে
" ছিমছাম গোছানো নিরিবিলি একটি মফস্বল শহর যার এক কোনে বিশাল জায়গা জুড়ে পাচিল ঘেরা দোতলা বাড়ীটিতে তার বাস।
বৃষ্টি নামলেই একছুটে উঠোনে নেমে যেতে পারে কিংবা কোন এক পূর্ণিমা রাতে নারকেল পাতার ছায়ার সঙ্গে খেলতে পারবে। বাধা দেয়ার কেউ থাকবে না সেখানে। মধ্যদুপুরে যখন শহর নিরিবিলি থাকবে বাসার পাশের কলেজ ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াবে সে। অথবা ঝুম বৃষ্টিতে কলেজের স্টাফ কোয়ার্টারের ভেতর দিয়ে ভিজতে ভিজতে চলে যাবে কুমোর পারা পর্যন্ত। বৃষ্টি শেষে বাসায় ফেরার পথে কুমোর বাড়ীর বউয়ের সাথে গল্প করে একগাদা মাটির বাসন-খেলনা নিয়ে ফিরবে।
কোনদিন হয়ত বর বকা দিবে। অহনা ভাবে দিলে দিবে হু কেয়ারস্ । এই খেলনাপাতি কেনার মাঝে যে কি মজা আছে তা তো আর কলেজের ঐ প্রফেসর বুঝবে না!"
মাঝে মাঝে অহনার খুব মন খারাপ হয়ে যায় এই শহরে পরে আছে বলে। ইট পাথরের এই খাঁচা থেকে বের হয়ে মুক্ত ভাবে কোথাও যেতে চায় যেখানে থাকবেনা গাড়ীর প্যাঁ পোঁ, মানুষের হাউকাউ শুধু থাকবে রিক্সা-ভ্যান আর সাইকেলের টুংটাং। মাঝে সাঝে গাড়ীর হর্ণ শুনে অবাক হয়ে দেখবে শহরে নতুন এসে বাচ্চা ছেলের গাড়ী দেখার মতন করে।
শহরের রাস্তায় হাটাচলা করা যায় নাকি! এদিক দিয়ে রিক্সা তো সেদিক দিয়ে প্রাইভেটকার! প্রাইভেটকারের হর্ণ শুনলে অহনার মেজাজ খিচড়ে যায়, পেছন ফিরে বলেই ফেলে, প্যাঁপাইয়েন্না তো! শব্দটা বলে একদিন নিজেই হেসে খুন হয়ে যায় প্যাঁপাইয়েন্না হাহ হা...কি শব্দ!
কলিংবেলের অনবরত টিংটং আওয়াজে ধ্যান ভংগ হয়ে যায় অহনার, ভাইয়া এসেছে। ছেলেটাকে এত বকাবকি করি তাও শিক্ষায় হয় না মানুষ যেনো দরজায় বসে থাকে খোলার জন্যে। সামান্য দেরী একদম সহ্য হয়না। ধ্যাত! কি মজার জগতেই না ছিলাম এতক্ষন! রাগে গজগজ করতে করতে দৌড় দেয় অহনা দরজা খুলতে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।