আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নরসিংদীর ভোট,প্রথম আলোর নিবন্ধ এবং কিছু প্রশ্ন

নরসিংদীর ভোট,প্রথম আলোর নিবন্ধ এবং কিছু প্রশ্ন শওগাত আলী সাগর আইন বিষয়ক লেখালেখিতে একটি ভিন্নমাত্রা সংযোজন করেছেন প্রথম আলোর মিজানুর রহমান খান । অন্য অনেকের মতোই আমি তার লেখা মনোযোগ দিয়েই পড়ি। আইনের, বিচারাঙ্গনের নানা বিষয় নিয়ে তার চুলচেরা বিশ্লেষন যে কোনো পাঠকেরই ভালো লাগার কথা। আমার অন্তত লাগে। কিন্তু আজকের প্রথম আলোতে (১৯ জানুয়ারি ২০১২) মিজানুর রহমান খান তার নিয়মিত কলাম ‘সরল গরলে’ ‘নরসিংদীর ভোট, লোকমান হত্যা ও কিছু প্রশ্ন’ নামে যে নিবন্ধটির অবতারনা করেছেন তাতে আইনের বিশ্লেষনের চেয়েও লোকমান পরিবারের 'কুকীর্তিকে' জনসম্মুখে তুলে আনার চেষ্টাটাই প্রকট হয়ে উঠেছে।

মিজান এবং প্রথম আলো লেখাটা প্রকাশের জন্য যে দিনটি বেছে নিয়েছেন সেদিনই নরসিংদীতে ভোট গ্রহন চলছে। ধারনা করা যায়, মিজান চেয়েছেন নরসিংদীর ভোটাররা তার লেখাটি পড়ে নির্বাচনে অন্যতম মেয়র প্রার্থী কামরুলের প্রতি একধরনের ঘৃনা মনে তৈরি করে ভোট কেন্দ্রে যাবেন এবং লোকমান হত্যামামলার এজাহারভূক্ত আসামীকে ভোট দিয়ে আসবেন। প্রথম আলোও মিজানের সেই চাওয়াটাকে ‘এণ্ডোর্স’ করেছে। নরসিংদীর জনপ্রিয় মেয়র লোকমান হত্যামামলায় এখনো অভিযোগ দাখিল করতে পারে নি পুলিশ। তার আগেই এজাহারভূক্ত আসামীরা একে একে জামিনে বেরিয়ে এসেছে।

এসে জোটবদ্ধ হয়ে বাদীর বিরুদ্ধে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছে। উচ্চ আদালত,নিম্ন আদালত থেকে জামিন নিয়ে, এমনকি আদালতের রায় নিয়েও মিজান বিভিন্ন সময় চমতকার সব বিশ্লেষন করেছেন। কিন্তু লোকমান হত্যামামলার এজাহারভূক্ত আসামীরা কিভাবে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পন করেই জামিন পেয়ে গেলো, সেই জামিনের আইনি ভিত্তি কি, প্রশাসনের ভূমিকা কি তা নিয়ে মিজানকে কখনো লিখতে দেখিনি। এমন কি আজ যখন নরসিংদীর নির্বাচন নিয়ে তিনি লিখলেন, সেই লেখাতেও এই প্রশ্নটা তিনি সযত্নে এড়িয়ে গেছেন। বরং 'এজাহারভুক্ত ১৪ আসামির মধ্যে ১২ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন'- এমন বক্তব্য দিয়ে প্রচ্ছন্নভাবে আত্মসমর্পন নাটকটাকে আড়াল করার চেষ্টাও করেছেন।

এই জামিন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোকপাত করলে মিজানুর রহমান খানের আজকের লেখাটার উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা কোনো প্রশ্ন তুলতাম না। লোকমানের প্রতি মিজানের এক ধরনের অপছন্দ আমরা তার লেখাতেই টের পাই। শহর নরসিংদীকে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসিয়ে দিয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাওয়ার বিষয়টিকেও তিনি স্বৈরশাসকের কীর্তির সঙ্গে তূলনা করে খেলো করে দিতে চেয়েছেন। ‘যতো ভালো কাজ করো, তুমি একদা গডফাদার ছিলে’- এই ধরনের একটা মানসিকতা নিয়ে লেখাটা লিখেছেন মিজান। আর সেটি করতে গিয়ে লোকমান এবং কামরুলের সন্ত্রাসী ততপরকার বয়ান দিয়ে লোকমান পরিবারের একটি অপরিচ্ছন্ন চিত্র তুলে ধরতে চেয়েছেন তিনি।

আর সেটি করার জন্য বেছে নিয়েছেন নির্বাচনের দিনটিকে। মিজান লিখেছেন,’দেশের বহু স্থানের মতো নরসিংদীও নিষ্ঠুর বিরাজনৈতিকীকরণের শিকার। সৎ ও ভালো মানুষেরা দলের মধ্য থেকেও নির্জীব থাকাটাই নিয়তি মনে করছেন। ‘ কিন্তু এই পরিস্থিতি কিভাবে তৈরি হলো, কারা তৈরি হলো সে আলোচনায় তিনি যাননি। গেলে হয়তো পরিষ্কার হয়ে যেতে নরসিংদীর রাজনীতি কিভাবে এবং কতোটা ‘জাতীয়’ তকমাধারী নেতাদের পকেটে পড়ে আছে।

সেখানে এইসব জাতীয় নেতাদের ঈঙ্গিতে এবং পৃষ্ঠপোষকতায়ই নানা নামের গডফাদারও তৈরি হয়। মিজান সেই আলোচনা স্পষ্ট না করে পাঠকদের ধারনা দিতে চেয়েছেন, নরসিংদীর রাজনীতি ভালো মানুষদের নিস্ক্রিয় হয়ে যাবার দায়টা লোকমানদের মতো রবিনহুড রাজনীতিকদের। আরেকটি কথা, ১৬ বছর ধরে নরসিংদীতে যে দলের সংবিধান লংঘিত হয়েছে, সেটি কারা করেছে তা কিন্তু মিজান উল্লেখ করেন নি। সে সম্পর্কে তার জানা বা তথ্য নেওয়া যে খুব কঠিন হতো তা কিন্তু নয়। 'জাতীয় মাপের রাজনৈতিক' নেতারাই যে তাদের পছন্দের তোষামোদকারীদের নেতা বানানোর জন্য দলের নিয়ম, গঠনতন্ত্রকে পদদলিত করে রেখেছিলেন সেটি উল্লেখ করলে অবশ্য মিজানের এই লেখাটার আবেদন অনেকাটাইকমে যেতো।

কারন , মিজানের উদ্দেশ্যটা পরিষ্কার, পক্ষটাও পরিষ্কার। বুদ্ধিভিত্তিক তস্করভিত্তিও যে আমাদে সমাজকে অনেকটা পিছিয়ে রেখেছে সেটা কিন্তু জনগন এখন বুঝতে শিখেছে। আরেকটি কথা । এমপি হোষ্টেলে মানিক কমিশনার হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দিতে যে চুক্তি হয়েছিলো বলে মিজান উল্লেখ করেছেন, সেটি নিয়ে তিনি নিউজ করলেন না কেন? যেহেতু চুক্তিটি তার দেখার সুযোগ হয়েছে, কাজেই সেই এমপির নামও তো তিনি উল্লেখ করতে পারতেন। ভালো কিংবা খারাপ যে কোনো মানুষ খুন হলে সেই সেই খুনের সঠিক বিচার হওয়া দরকার।

একজন জনপ্রতিনিধির গডফাদার ইমেজ থাকলেই তিনি খুন হয়ে গেলে তার হত্যার বিচার চাওয়া যাবে না, কিংবা সেই বিচারকে প্রভাবিত করলেও চুপ থাকতে হবে- মিজান কি সেরকমটিই মনে করেন? লোকমান হত্যাকাণ্ডের বিচার হউক, প্রকৃত খুনীরা ধরা পড়ুক শাস্তি পাক এটা দেশবাসীর দাবী। আবার নিতান্তই রাজনৈতিক কারনে কোনো নির্দোষ ব্যক্তি সাজা পাক সেটাও কাম্য নয়। লোকমান হত্যার এজাহারে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের সবাইযে অপরাধী তেমনটি নয়। অন্তত সুষ্ঠূ গ্রহনযোগ্য তদন্তে সেটি প্রমানিত না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে দোষী বলা যাবে না। কিন্তু তদন্ত কাজটিই যদি করা হয় প্রশ্নবিদ্ধ উপায়ে তাহলে সত্যিকারের নির্দোষ ব্যক্তিটির প্রতিও মানুষ সন্দেহের চোখে তাকাবে।

এটাই স্বাভাবিক। মিজানুর রহমান খান নরসিংদীর নির্বাচন, লোকমান হত্যা নিয়ে লিখতে গিয়ে স্পষ্টত:ই একটি পক্ষ নিয়ে ফেলেছেন। আর একটি পক্ষের হয়ে কলম ধরতে গিয়ে জ্ঞানে অনেক তথ্য এড়িয়ে গেছেন, কিছু ভূল তথ্য ব্যবহার করেছেন। এই লেখার কাঠামো বিন্যাসের মধ্যেই একধরনের অস্থিরতা আছে- এটা তার লেখার মনোযোগী যে কোনো পাঠকেরই চোখ এড়াবে না। মিজান না হয়, কারো হয়ে কলম ধরলেনই, কিন্তু নির্বাচনের দিনে এই ধরনের একটি অসম্পূর্ণ ,পক্ষপাতমূলক এবং উদ্দেশ্যমূলক লেখা প্রথম আলো কিভাবে প্রকাশ করলো ? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.