শান্তির জন্য সংগ্রামী দেশ স্বাধীন এর পরে চাকুরী, পদোন্নতি ব্যবসাসহ সবক্ষেত্রেই মুক্তিযোদ্ধা ও অমুক্তিযোদ্ধা এর মধ্যে তুমুল বিরোধ লক্ষ্যনীয়, এবং এটা খুবই স্বাভাবিক। ’৭৫ এর পরে মোশতাক, সায়েম, জিয়া, সাত্তার ও এরশাদ নামকাওয়াস্তে মুক্তিযোদ্ধা মূলত যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ভুমিকাকে মুল্যায়ন ও পুরস্কৃত করেছে। দীর্ঘদিনের লুটপাটকারীদের অর্থ লগ্নির টাকায় ক্ষমতায় এসে বিএনপিও ’৯১ সালে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামের ভুমিকাকে এবং সাথে নামকাওয়াস্তে মুক্তিযোদ্ধা মূলত যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ভুমিকাকে মুল্যায়ন ও পুরস্কৃত করেছে। ’৯৬ সালে ভোট ও ভাতের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এসে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি ও মানুষ, ’৭৫ এর প্রলয়ের পরেও প্রতিবাদকারী এবং এরশাদ বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামের ভুমিকা ও ’৯৬ সালের ভোট-ভাতের লড়াইয়ের ভুমিকাকে মুল্যায়ন করে।
সদ্য হওয়া ১/১১ এর সুনামির পরে আওয়ামীলীগ এর নেতৃত্বে মহাজোট ক্ষমতায় এসে পূর্বের সাথে সদ্য ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক সুনামির বিরুদ্ধে যারা দাঁড়িয়ে ছিল মশাল হাতে তাঁদের সেই সাহসী ভুমিকাকে মুল্যায়িত করছে।
মজার ব্যপার হলো সেটা শুধু রাজনীতির ময়দানেই সীমাবদ্ধ। এখানে ’৭২-’৭৫ এ বঙ্গবন্ধুর শাসনকালের সাথে কিছু বিষয়ের মিল দেখা যায়। ঐ সময়েও দেখা গেছে, যেসব রাজনৈতিক নেতারা (হোক আওয়ামীলীগ বা ছাত্রলীগ বা অন্য দলের) যুদ্ধের সময়ে দূরে দূরে ছিল তারা পিছনসারিতে চলে গিয়েছিল এবং এটা খুবই স্বাভাবিকও বটে। কিন্তু সামরিক বা বেসামরিক আমলাতান্ত্রিক ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা, অমুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধবিরোধী, পাকিস্থানফেরত সকলেই যারযার যায়গা করে নিয়েছিলেন। অবশ্য সেটার একটা উপযুক্ত কারণও ছিল এই, প্রশাসনে লকবলের অপর্যাপ্ততা।
তদুপরি এটা যে সঠিক হয়নি পরবর্তী ঘটনা তাই সাক্ষ্য দেয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পরেও দেখা যাচ্ছে সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। রাজনীতির মাঠে যারা ষড়যন্ত্রকারীরুপে চিহ্নিত তারা পিছনসারিতে পড়লেও ফাঁকেফোঁকরে অনেকেই যায়গাও করে নিয়েছে, হয়ত এটা রাজনীতির গোপন খেলা। কিন্তু যে আমলা মহাশয়রা তখন সচিবালয়ে বসে তথাকথিত ফখরুদ্দীন- মইন উদ্দিন সরকারকে চার পা এগিয়ে সহযোগিতা করেছেন, তারা এখনো বহাল তবিয়তে উপরন্তু পদন্নোতিসহ সকল ক্ষেত্রেই তাঁদের ভুমিকায় মানুষ বলতে শুরু করেছে বর্তমান সরকার আমলা শাসিত সরকার।
আমি আরেকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই, সেটি হলো ১৯৭১ সালে যুদ্ধে যাওয়ার পর্যাপ্ত বয়স হওয়া স্বত্বেও অনেকেই যায়নি।
অথচ ইতিহাসে যতটুকু জানা যায় তাতে নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় সারাদেশের মানুষ তখন স্বাধীনতার স্পৃহায় উদ্বুদ্ধ ছিল। অনেকের হয়ত পর্যাপ্ত বয়স হলেও পর্যাপ্ত সুযোগ ছিলনা। নিতান্তই প্রাকৃতিক বা পারিবারিক সমস্যা ব্যতিরেকে শুধু শুধু যারা ঘরে বসে কিংবা পাকিস্থানী সরকারের অধীনে ও নির্দেশে সরকারী বা বেসরকারী চাকুরী করেছে অথবা নিদেনপক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতাও করেনি অথবা যেকোনভাবেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে যেকোন ধরনের কাজের সাথে সম্পৃক্ততা রাখেনি কেনো, বিবেকের দায়বদ্ধতা থেকেই তাঁদের সেটা ব্যাখ্যা দেয়া উচিত।
আমার মতে উপরোক্ত বিষয়গুলোর পাশাপাশি '৭১ পরবর্তী প্রজন্ম আমরা যারা আমাদের উচিত নিজস্ব লেখালেখির মাধ্যমে বা ফেসবুকে লিখে হলেও অন্তত নিজের পরিবারের '৭১ সময়কালীন পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে পারি। তাতেই অনেক স্বচ্ছতা বেরিয়ে আসবে।
কারন একজন মিথ্যা লিখলে তাঁর পাশের বাড়ির বা পারিবারিকভাবে পরিচিত অন্যকেউ হয়ত ভুলটা ধরিয়ে দিতে পারবে এমনকি প্রতিবাদও করতে পারবে। এভাবেই মুক্তিযুদ্ধ কে কেন্দ্র করে সকল সত্য-মিথ্যার উদ্ঘাটন করলে ইতিহাস অনেকটাই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারবে। এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে ইতিহাস বিকৃতি তথা ভুল ইতিহাস রচনার দায় থেকে মুক্ত হতে পারব।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।