আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রবন্ধ : ৫ । বাংলাদেশের গল্পের বাঁক পরিবর্তন

হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে...

বাংলাদেশের সাহিত্যের ইতিহাস বলতে গেলে বিগত অর্ধ শতকের। এ সময়কালে বাংলাদেশের সাহিত্যের অর্জন কম নয়। বিশেষত কবিতায় শামসুর রাহমান আল মাহমুদ-এর মতো লেখকের জন্ম হয়েছে। বলা হয়ে থাকে কবি জীবনানন্দ দাশের পরে অনিবার্য পাঠ্য কবি শামসুর রাহমান। একইভাবে বাংলাদেশের কথাসাহিত্যের অর্জনও চোখে পড়ার মতো।

প্রয়াত সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস কিংবা জীবিত হাসান আজিজুল হক, শওকত আলী, সৈয়দ শামসুল হকের মতো লেখকগণ এখনো সক্রিয় রয়েছেন। সেলিম আল দীন তো বাংলা নাটকের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন। তিনি একক চর্চায় বুঝিয়ে দিয়েছেন, বাংলা নাটকের জন্ম ইউরোপের অনুকরণে হলেও বাঙালি জাতির নানা প্রাচীন রচনায় নাট্যগুণ বর্তমান ছিল। সেই অনাবিষ্কৃত দিক উন্মোচন করে বাংলাদেশের নাটকে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছিলেন তিনি। বাংলাদেশের ছোটগল্পেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধিত হয়েছে স্বাধীনতা উত্তরকাল পর্বে, বিশেষত এ সময় আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ও হাসান আজিজুল হকের মতো দুজন কথাশিল্পী বাংলাদেশের গল্পের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করেছেন।

উল্লেখযোগ্য এই পরিবর্তনকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়েছেন সদ্য প্রয়াত শহীদুল জহির। তিনি খুব বেশি লিখে যেতে পারেন নি, তথাপি অল্প কিছু গল্প ও গোটা চারেক উপন্যাস রচনা করেই বাংলাদেশের কথাসাহিত্যের নব দিগন্তের উজ্জ্বল আলোয় ভরে দিয়েছেন। কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হক, এই কথাশিল্পী সম্পর্কে এক মন্তব্যে জানিয়েছেন, তিনি 'বিশিষ্ট লেখক'। এছাড়াও তিনি মনে করেন 'সে রাতে পূর্ণিমা ছিল' উপন্যাস রচনার মাধ্যমে শহীদুল জহির 'কেল্লাফতে' করেছেন। এ মন্তব্যের মধ্য দিয়ে হাসান আজিজুল হক মূলত বোঝাতে চান-- শহীদুল জহিরের লেখনী শক্তির সবটুকু প্রকাশ পেয়েছে 'সে রাতে পূর্ণিমা ছিল' উপন্যাসে।

একজন লেখক যে সেরা লেখাটির জন্য অবিরাম লিখে যান, শহীদুল জহিররের 'সে রাতে পূর্ণিমা ছিল' তাঁর সেরা রচনা। এ হাসান আজিজুল হক প্রসঙ্গত আরো যুক্ত করে বলেন, তাঁর পরের উপন্যাস 'মুখের দিকে দেখি'তে ম্যানারিজম স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। অর্থাৎ তিনি বেঁচে থাকলে হয়তো আরো লিখতেন, তবে তা আদৌ আবর্তন পুনরাবর্তনের মাঝ থেকে বেরিয়ে আসতে পারত কিনা তা নিয়েও সন্দেহ পোষণ করেছেন হাসান আজিজুল হক। সে যাই হোক না কেন, একথা সত্য সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ এবং আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের লেখায় গল্পের যে ধারা গড়ে উঠেছিল, তার উৎকৃষ্ট রূপ ধরা পড়েছে শহীদুল জহিরের গল্পে। তাঁর 'ইন্দুর বিলাই খেলা' কিংবা 'ডুমুর খেকো মানুষ', 'ডলু নদীর হাওয়া' প্রভৃতি গল্প সেই উৎকৃষ্টতার স্বাক্ষর বহন করে আছে।

গল্পের মধ্যে অসংখ্য গল্প থাকা কিংবা ছোট্ট একটি লাইনের ঘটনাও যে গল্প হয়ে উঠতে পারে, তা শহীদুল জহিরের লেখনীতে প্রতীয়মান। একই ধারায় বাংলাদেশের সাহিত্যে আরো কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ এ সময়ের গল্পকার হচ্ছেন-- ইমতিয়ার শামীম, মামুন হুসাইন, সাহাদুজ্জামান, হুমায়ুন মালিক প্রমুখ। বাংলাদেশের এই গল্পের ধারা এঁদের হাতে ক্রমশ সমৃদ্ধ হয়ে উঠছে। বিশেষত, তাঁর গল্প বলার ধরনও তরুণ প্রজন্মকে যথেষ্ট আকৃষ্ট করছে, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। ইতোমধ্যে শূন্য দশকের তরুণ গল্পকারদের অনেকেই শহীদুল জহিরের গল্প বয়ন কৌশল কিংবা ভাষাগত কাঠামকেও আত্মস্থ করে নিজস্ব পথ তৈরি শুরু করেছেন।

সাহিত্য কোন বদ্ধ জলাশয় নয়; ক্রমাগত সাহিত্যের গঠনকৌশল নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলে। হয়তো ভবিষ্যতে আরো নতুন নতুন ফর্ম আসবে বাংলা গল্পে, এমন প্রত্যশা এখন তরুণ প্রজন্মের গল্পকারদের নিকট করা যেতেই পারে ... আমাদের তরুণ গল্পকারগণ হয়তো ভবিষ্যতে নির্মাণ করবেন বাংলা গল্পের আরো অভিনব কিংবা চমকপ্রদ বয়নকৌশল...

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৮ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।