বাঙলা কবিতা যাদুর সুটকেস / শাহনাজ আ'লামি ----------------------------------- একটা সুটকেস নিয়েছিলাম সাথে, হালকা, খুবই হালকা, দুই বা তিন সেট শিশু-পরিচ্ছদ, শাদা রঙের একটা জর্জেটের পোশাক, রঙ জ্বলে যাওয়া আবছা এটা ফটো, আমার মায়ের, মাথায় স্কার্ফ পরা, আর নওরোজ উদযাপনের প্রথাগত যাবতীয় দ্রব্যসামগ্রীর একটা সম্পূর্ণ তালিকা, তুচ্ছ কোনও জিনিসও বাদ পড়েনি; আর এসবই হলো যা কিছু রয়েছে আমার, কিংবা বলা চলে, যা যা আমার আছে মর্মে গণ্য করে লোকে, আমার এই সুটকেসের ভেতরে, যেটা নিয়েই আমি ছেড়ে এসেছিলাম অবারিত সূর্যালোকের সেই ভূখণ্ড। আমরা সুটকেসটা ছিলো, কিংবা ধারণা করতো লোকে, খুব, খুবই হালকা-পাতলা গোছের! অথচ ভাবো, কত বড় একটা ভুল ধারণা এটা! নিশ্চয় পেশাদার যাদুকরের প্রদর্শনীগুলো দেখে থাকবে তোমরা; তারা জামার হাতার ভেতরে আঙুলগুলোকে চালান করে দেয় আর বের করে আনে, যা কিছুর নামই তোমরা উচ্চারণ করো না কেন: পাখি, খরগোশ আর সকল বর্ণের রুমাল; প্রায় ফাঁকা, আমার এই শূন্য সুটকেসটিও ছিলো সেরকম। এখন প্রায় গোটা একটা জীবতকাল পেরোতে চললো আমার এই একমাত্র সুটকেস থেকে ঠিক সেগুলোই বের করছি যা যা পেতে চাই আমি: ইস্পাহানের নগরপ্রান্তে নয়নাভিরাম বসন্তকাল আর এর উল্লসিত তরুবীথি; সিরাজের বহুবর্ণিল শরৎ ও হেমন্তকাল আর তার অগণিত কমলাগাছের সুবাস; প্রাচীনতম উৎসবের রাজধানী পার্সিপোলিয়ার ধ্বংসাবশেষ; ঐতিহাসিক পাথর-খোদাই সমেত বাগেস্তান পর্বত; রাজমহিষী শিরিনের প্রাসাদ; গালিচা-নগরী না'ইনের অদূরের সেই এক হতভাগ্য গ্রাম : চ্যাম; ছোট্ট সেই চাষী-কন্যা ফাতিমার ছিন্নবস্ত্র, আর তার মতই এক ঝাঁক বাচ্চা-কাচ্চা, ওরা সবাই আছে আমার এই একই সুটকেসের ভেতরে। সুটকেস থেকে বের করে আনি ওদের; পাশে বসে গল্প করি; বাস করি ওদের সাথে; আর যখনই অন্য কেউ এসে হাজির হয় ওরা সব দৌড়ে ঢুকে পড়ে সুটকেসটার মধ্যে, যে সুটকেসটাকে, লোকে ভাবে, খুবই হালকা হয়তো বা আর প্রায় ফাঁকা। যখন আমার শেষ বাসনা জারি করবো, আমি চাইবো, ওই সুটকেসটাকেও সমাহিত করা হোক আমার সঙ্গে। সন্দেহ নেই, ওরা বলবে: " তার জীবনটাই ছিলো একটা পাগলামি; আর তার শেষ ইচ্ছাটাও নির্বোধোচিত! এটা কী ধরনের ইচ্ছা! পরলোকে কার দরকার পড়বে তুচ্ছ একটা সুটকেসের? " যা খুশি বলতে দাও ওদের! মোটের ওপর, বলতে গেলে, প্রণয়ের এক বাজিগরের রহস্য কেই-বা বোঝে, বলো? এটাই কি সত্য নয় যে, প্রেম ঐশ্বরিক রহস্যাদির এক নাক্ষত্রিক পরিমাপক? ------------------------------------ শাহনাজ আ'লামি (১৯২১-২০০৩) : নির্বাসিত ইরারনী কবি। জন্ম ১৯২১ সালে ইস্পাহানে। ১৯৫৪ সালে, ইরানে সামরিক অভ্যূত্থান ঘটলে তিনি দেশ ত্যাগ করে তদানীন্তন পূর্ব জার্মানীতে চলে যান এবং আমৃত্যু বার্লিনে বসবাস করেন। --------- বাঙলায়ন : রহমান হেনরী --------
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।