I'm searching that I've lost...
দৃষ্টিশক্তি অর্থাৎ চোখ অথবা সন্তান। একজন মাকে যেকোনো একটিকে বেছে নিতে বললে কোনটা নেবেন ?
আমির সেরকম বাছাইকৃত সন্তান।
স্কুলে পড়ে। বন্ধুরা স্কুলে তার মাকে নিয়ে বিদ্রুপ করে। ভিষন খারাপ লাগে ওর।
ছোট্ট আমির বুঝতে পারে না কেন আম্মুকে সবাই কানা বলে। আম্মুতো আমাকে দেখতে পায়। খাবার বানায়, ঘুম পড়িয়ে দেয়, সবকিছু করে। তবুও কি আম্মু অন্ধ!
অভিমানি আমির বাসায় ফিরে আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে। আম্মু আমি আর স্কুলে যাব না।
কেন বাবা, কি হয়েছে?
আমির ভাল করে মাকে দেখে। সত্যি কি আম্মু দেখতে পায় না? বলবে কি বলবে না, দ্বিধাদ্বন্দে ঠোট কাঁপে। ছোট্ট শিশুটির সে সময়ের এক্সপ্রেশন দেখে চোখের পানি ধরে রাখা কঠিন।
আম্মু, সবাই বলে তুমি নাকি অন্ধ, দেখতে পাও না । তুমি তো আমাকে দেখতে পাও, বলো পাও না?
মাকে নিরুত্তর দেখে সন্দেহ হয়।
বিভিন্ন ভাবে পরখ করে দেখতে চেষ্টা করে অন্যদের কথা ঠিক কিনা। মা বাইরে বেরুবে বলে তৈরী হচ্ছে। আরে আরে, আম্মু করছো কি? দুই রংয়ের দুটো জুতা পড়েছো কেন?
আমির বুঝতে পারে অন্যদের কথাই ঠিক,তার মা দেখতে পায়না।
আমিরের বাবা ব্যাবারটা উপলব্ধি করেণ। মা বেরিয়ে গেলে কাছে ডাকেন আমিরকে।
এসো আমার সাথে ভিডিও দেখবে। স্ক্রিনে তার মায়ের ছবি। হাসি হাসি মুখে তাকিয়ে আছেন। আমির উৎফুল্ল হয়ে ওঠে। বাবা দ্যখো, আম্মুর ছবি।
আম্মু তাকিয়ে আছে।
আমাদের দেখছে....... আম্মু দেখতে পায়.......
তোমার আম্মু দেখতে পেতো, তুমি জন্ম নেবার আগে। এটা তুমি জন্মানোর আগে ভিডিও করা। তখন তার চোখ ভাল ছিল। তোমার জন্মের সময় তোমার মা অসুস্থ হয়ে যান।
ডাক্তার তোমার মাকে বলেন-তার চোখ অথবা তুমি দুটোর একটি বাঁচানো যাবে। তোমার মা তোমাকে বাচিয়েছেন।
অশ্রুসিক্ত আমির বাবাকে জড়িয়ে ধরে ঢুকরে কেঁদে ওঠে। দর্শকের চোখেও বোধহয় নোনাজ্বল দেখা যায়। ।
পরিচালক ক্যামেরার চোখ বন্ধ করে দেন। ফিল্মি ভাষায় যাকে বলে ‘প্যাকআপ’।
৩৮ মিনিটের ছবিটির পরিচালক লিলা মিরহানদি। কোনো কমপ্লেগজিটি নেই, সরল গল্প। কিন্তু কি চমৎকার উপস্থাপন।
এটা ঠিক যে, ভিসুয়ালাইজেশনে এক্সট্রা অর্ডিনারী কিছুই নেই। তবে গল্পের আকর্ষনে সে শূন্যতা বোধ হয় না। বাচ্চাদের দিয়ে অভিনয় করানো বাস্তবিকই কষ্টসাধ্য। সে তুলনায় ৫/৬ বছরের আমিরের এত পারফেক্ট অভিনয় সত্যিই চমকে দেয়। যেমনটা ঠিক জাফর পানাহির ছবি দি হোয়াইট বেলুনের দুই শিশু চরিত্র আলী আর রাজিয়া।
অথবা মাজিদ মাজিদির দি কালার অব প্যারাডাইসের অন্ধ মোহাম্মদ (বাস্তবিকই অন্ধ), চিলড্রেন অব হ্যাভেন এর আলি। ইরানী নির্মাতারা বরাবরই অপেশাদার শিল্পীদের দিয়ে spontaneously অভিনয় করিয়ে নেন। এটা তাদের পারঙ্গমতা। আব্বাস কিয়ারোস্তামীর কোস আপ তো পুরোপুরি একটা ন্যাচারাল ফিল্ম।
মেজর চরিত্রে কোন পেশাদার শিল্পী নেই এবং প্রায় পুরো সিনেমাটা প্রাকটিক্যাল ঘটনার ধারণকৃত চিত্র।
কেউ অভিনয় করেনি। আক্ষরিক অর্থে কেউ ডিরেকশন দেয়নি। তাহলে কি এটা ডকুমেন্টারী? না তাও বলা চলে না। কারণ সিনেমার যাবতীয় বৈশিষ্টই এতে বিদ্যমান। এরকম সিনেমা নির্মান কিভাবে সম্ভব? মেধার জোরেই এটা সম্ভব।
অর্থ এখানে তুচ্ছ। আমার ধারণা কম বাজেটে ভাল ছবি নির্মানে ইরানের সমকক্ষ নেই। অল্প বাজেটে বেশ ঝরঝড়ে ছবি বানিয়ে ফেলেন ইরানী নির্মাতারা। এবং তা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমাদৃত হয়। এমনকি ইরাণের ঘোরতর বিরোধী সম্রাজ্যবাদ আমেরিকায়ও অস্কার পায়।
সামিরা মাখমালবাফতো তার বাবা মুহসিন মাখমালবাফের একটি ছবির শুটিং থেকে বেঁচে যাওয়া ফিল্ম দিয়েই ১ঘন্টা ২৬ মিনিটের অসাধারণ ছবি দি অ্যাপেল বনিয়ে ফেললেন।
সত্যিই এটা তাদের ক্রেডিট।
আমরা প্রায়ই বলি-আরে ভাই ভাল ছবি বানাবো টাকা কই। কে প্রোডিউস করবে? এটা আসলে অজুহাত ছাড়া কিছুই না। নিজেদের দূর্বলতা গোপন করার ফন্দি।
কারণ, দেখা গেছে অনেকে বিগ বাজেট নিয়ে ছবি বানাতে নামে। শুটিং শেষে দেখা যায় ওল্ড ওয়াইন ইন নিউ বটল। শুধু কিছু বিদেশী সিন। যা দেখে মন্তব্য করা হয়- নাহ্ খরচ করেছে। এ রোগ শুধু আমাদের দেশে নয় অনেক দেশের অনেক নির্মাতাতের মধ্যেই আছে ।
আমেরিকানদের মধ্যে এমনও অনেকে আছেন বাজেটের রেকর্ড ব্রেক করে ছবি বানানো তাদের একটা নেশা। টাইটানিকের পরিচালক জেমস ক্যামেরূন তাদের একজন।
সিনেমা যদি হয় নিছক বানিজ্য। তাহলে এসব পরিচালকরা, ভূল বললাম এসব ব্যাবসায়ীরা সফল। এরা সফল শিল্প ব্যাবসায়ী (!)।
শিল্পের বানিজ্যিক প্রবৃদ্ধিতে অবদানের জন্য কাউকে নোবেল প্রাইজ দিলে বলিউডের অধিকাংশ পরিচালকই নোবেল পাবেন। হলিউডের বেশকিছু পরিচালকও এ সম্মান প্রাপ্তির দ্বাবিদার। কেননা তারা পাইওনিয়র যে।
একটা জিনিস এরা হয়ত জানেন না অথবা মানেন না যে, চলচ্চিত্র বানিজ্য নয় বরং চলচ্চিত্র হচ্ছে শিল্পের সর্বোচ্চ মাধ্যম। যেখানে রয়েছে সপ্ত কলার সংমিশ্রণ, যা অন্য কোন মাধ্যমে নেই।
সংস্কৃতির চরম প্রকাশ ঘটে শিল্পে। শিল্প নিয়ে বানিজ্য করা মানে সংস্কৃতিকে ক্রয়/বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে বাজারে উঠানো। যে জাতি সংস্কৃতির এরূপ অবমূল্যায়ন করে তারা শুধু নিজেদের নয় অন্যদের জন্যও ভয়ানক। ব্যতিক্রম আছে। আমাদের দেশেও বেশ কয়েকজন নির্মাতা রয়েছেন যারা এসব সংকীর্ণতার উর্দ্ধে।
তবে তাদের সংখ্য অপর্যাপ্ত।
যে ছবিতে বড় বাজেট দরকার সেখানে অবশ্যই খরচ করতে হবে। তবে আমাদের সীমবিদ্ধতার কথা মাথায় রেখে মেকিংএ নামা নিরাপদ। এবং সেক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা মেধা দিয়ে পূরন করার মানসিকতা রাখলে আমরাও সফল হতে পারি। মেধার বিকল্প মেধা।
।
Email: ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।