বাস্তব জগৎ আর স্বপ্নের সমন্বয়কারী আমরা এক-একজন এক একটি বিষয়কে এক এক ভাবে দেখি বা দেখতে চেষ্টা করি। সেটা যদিও অপরপক্ষের প্রকাশের ধরণ, ভঙ্গি বা প্রকাশের ক্ষমতার উপরও নির্ভর করে। তাই সঠিক সময়ে সঠিকভাবে অপরজনের অনুভূতি বুঝতে পারাটাও সব সময় সম্ভবপর হয়ে উঠে না। অনেকসময় আবার সকল কিছুর উরধে মানুষের ইচ্ছাটাই বড় হয়ে দাড়ায়। মানুষ এক বিচিত্র সৃষ্টি, কখন কোন অনুভূতি,ইচ্ছা বা আকাঙ্খা গ্রহন করতে তার মন চায়, সেটা বুঝাও দায়।
যাইহোক, এইসব বলছি, কারণ আজ আমি চাচ্ছি একটু অন্যভাবে অপরকে বা কিছু অচেনা মানুষদের পর্যবেক্ষণ করতে। হয়তোবা এইটাও কোন অনুভূতি বা ইচ্ছার কারনেই করতে চাচ্ছি, যদিও আমি চাচ্ছিলাম "সকল অনুভুতির উরধে। " আমিও সেই মানুষ নামক বিচিত্র সৃষ্টির অংশ বিধায় সেটা যদিও সম্ভবপর হবে না, তবে ক্ষুদ্র একটা চেষ্টা করে দেখতেই বা কি দোষ! তাহলে শুরু করি পর্যবেক্ষণ। দেখা যাক কি হয়।
শুরুটা করলাম ঘর থেকে বের হওয়া দিয়ে।
হোস্টেলের করিডোরে যখন বের হলাম, তখন একজনকে রান্না করার জন্য যেতে দেখলাম। চোখে-মুখে তার নতুন দিনের ছাপ এখনো কাটেনি, অথচ রান্না করার জন্য রেডি হয়ে গেছে। বলা-বাহুল্য দিনটা তার খাওয়া দিয়েই শুরু হতে যাচ্ছে, খারাপ কি!
দু'পা যেতে না যেতেই করিডোর পেড়িয়ে নিচের মেইন গেটে পৌঁছে গেছি। রীতিমতন সেখানে চাবি রাখার কক্ষে বসে পাহারা দিচ্ছেন একজন লোক। চোখের সামনে তার সি সি টিভি এর পরদা।
যদিও আমার সন্ধেহ যে, কোনদিনও সেই পর্দায় চোখ যায় কি না। যাইহোক, সে মানুষটা ভালো বলেই মনে হয়। একবার একটি বিষয়ে তার কাছ থেকে জানতে চেয়েছিলাম। তাকে ভালো মানুষ বলার কারণটা এখানেই নিহিত। এত আগ্রহের সাথে কাউকে কিছু বুঝানোর উদ্দেশে হয়তো আমি অন্তত কখনো এরকম চেষ্টা করতাম না।
হোস্টেলের গেঁট থেকে বের হয়ে, মাথায় টুপিটা লাগিয়ে, তুষার- বৃষ্টির মধ্যেই সামনে এগিয়ে যাচ্ছি। আপাতত কাউকেই দেখতে পাচ্ছি না। তবে, কিছু পার্ক করা কালো গাড়ি এর তুষারপাতের দরুন সাদায় রুপান্তরিত হতে দেখলাম। প্রতিদিন দেখি,কিন্তু আজকে একটু পর্যবেক্ষণ করার ইচ্ছা হচ্ছে। ইচ্ছা হচ্ছে বুঝার, কিভাবে তার মালিক বাহিরে যেতে হলে, গাড়িটা পরিস্কার করার ঝামেলাটা পোহাতে হয়।
বলতে বলতেই একজন সেটা করা শুরু করে দিল। যাইহোক, বেপারটা খুব একটা কঠিন না। নিমেষের মধ্যেই সে সেটা করে ফেলল। আমি আবার হাঁটা শুরু করলাম।
একটু সামনে যেতে চোখ পড়ল একজন মানুষের উপর।
সে রীতিমতন এই বরফের মধ্যে জ্যাকেট গায়ে শুয়ে আছে। তার অবস্থাটা বুঝতে খুব একটা দেরি হল না। তরল-পানীয়ের দেশ এইটা এবং ইহা তাহার ফলাফল।
লোকজন যে যার মতন হেঁটে যাচ্ছে। কেউবা অনেক ব্যাস্ততার সাথে, কেউবা নিরাশ ভঙ্গিতে, কেউবা অনুভুতিহীনভাবেই হেঁটে যাচ্ছে।
কেউ কেউ আমার দিকে তাকাতেও ভুল করছে না। তাদের কাছে আমি "বিদেশী" বলে কথা। অবশ্যই মানুষের কৌতূহল থাকে, আর মাঝে মাঝে এতে নিজেকে অন্যরকম ভাবতে ভালোই লাগে
রাস্তায় ছেলে এর তুলনায় মেয়ে এর পরিমাণ সাংঘাতিক হারে বেশি। বেশি হওয়াটাই স্বাভাবিক। "военная служба" বা "military service" এখানকার ছেলেদের জন্য যে বাধ্যতামূলক।
অনেক বন্ধুদের দেখেছি,তারা এটা নিয়ে চিন্তিত। আর মেয়েদের প্রোফাইল- গর্বের সাথে লিখে রাখে
দেখা যায়- " Военная Служба : Ну, Я Девушка! ;-) " অর্থাৎ " Military Service: Well, I'm a girl ;-)" এবং "Семейное положение: В активном поиске" অর্থাৎ "Marital status: Actively Searching"। যাইহোক, খারাপ না
সামনে পড়ল একদল ছাত্রছাত্রী। তারা রাস্তার পাশের পার্কে দৌড়াদৌড়ি করছে। এটা তাদের একটা ক্লাস।
শরীর ফিট রাখার জন্য স্কুল, কলেজ বা ভার্সিটি এর সবারই এটা বাধ্যতামূলক। ক্লাসটা কাজের (চিন্তাগত দিক দিয়ে), বাস্তবতার দিক দিয়ে আলস্য সব সময়ই এগিয়ে থাকে। যাইহোক।
এইখানের বাচ্চাগুলো মনে হয় সব থেকে সুখী। (এটা যদিও সব দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
) মা-বাবা অথবা ভাই-বোন তাদেরকে এই বরফের মধ্যে দিয়ে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। আর বাচ্চাগুলো ভিতরে আরামে আছে আর চারিদিকে বিস্ময়ের চোখে তাকাচ্ছে। চারিদিকে তাকানটাই এদের মেইন কাজ। যেই পর্যবেক্ষণের কাজটা আমি আমি করে যাচ্ছি। হয়তোবা সৃষ্টিকর্তা তাদেরকে পৃথিবীতে পাঠানোর সময় বলে দিয়েছেন, " একটা নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত তোদের মেইন কাজ চারিদিকে তাকানো।
পরবর্তীতে তোদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হবে। তাকানোর আর সুযোগ পাবি না। "
হয়তোবা আমিও কোন কিছুর উরধে থেকে তাকানোর সুযোগ পাচ্ছি না। তবুও চেষ্টা করেই যাচ্ছি........
" World Is A Strange Place, If You Know It ! ! "
শান্তনু সেন। বেলা ৪ টা বেজে ৪ মিনিট।
১৩-০১-২০১২, শুক্রবার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।