খাওয়া,ঘুম আর আড্ডা , এই নিয়ে মোটামুটি ব্যস্ততা -ওঠ,এই ভাই ওঠ
-উমমমম,উঠতেছি।
-তাড়াতাড়ি ওঠ,জ়্বীন দেখতে যাবি বলে।
নানার ডাকে এইবার আমি লাফ দিয়ে উঠি। জ্বীন দেখার ইচ্ছা বহুদিন থেকে,এই সুযোগ তো আর হাতছাড়া করা যায় না।
ঘটনা তাহলে খুলেই বলি।
ফুটবল খেলতে যাইয়া ছোটভাইয়ের পা ভাঙছে। ডাক্তারী নিয়ম কানুন সব সম্পন্ন। ডাক্তার বলছে প্লাস্টার নিয়ে তিন মাস থাকা লাগবে। এরমধ্যে আমার নানা একদিন বলে তাদের পাশের গ্রামে নাকি এক লোক আছে যে জ্বীন হাজির করে এবং জ্বীনের মাধ্যমে সব ধরণের রোগ ভাল করে দেয়। যদিও এই যুগে এইসব কবিরাজের উপর আমার আস্থা নাই তবে জ্বীন দেখার খায়েশ থেকেই নানাবাড়ীতে আসা।
আগের দিন আমার আম্মু,নানা আর ছোট ভাই জ্বীন বাড়ী থেকে ঘুরে আসছে। আজকে আমরা যাব তেল পড়া না কি জানি দিবে সেইটা আনতে। আমি,বড় মামা আর নানা রওয়ানা দিলাম। পথিমধ্যে মামা আমাকে বলল সে যদি কোন কিছু জিজ্ঞাসা করে তাহলে সত্য কথা বলতে কারন জ্বীন নাকি সবার গোপণ খবর জানে। হায় হায় মামা এ কি কথা শুনাইলো।
মামার কথা শুনে আমি ভয়ানক টেনশনে পড়ে গেলাম আমার তো গোপন বিষয়ের অভাব নাই,এখন এগুলো যদি ফাঁস করে দেয় তাহলে মান ইজ্জত (যদিও বন্ধুরা বলে আমার নাকি এই জিনিসটার বড়ই অভাব)সব ছ্যাকা খাওয়া যুবসমাজের হ্নদয়ের মত ভেঙে খান খান হয়ে যাবেএকবার ভাবলাম বাড়ীর ছেলে বাড়ী ফেরত যাই,অযথা মান সম্মান খোয়ানোয় কাম নাই। কিন্তু বাড়ী গেলে জ্বীনের সাথে মোলাকাত করার এই সুবর্ণ সুযোগ আর পাওয়া যাবে কিনা এই চিন্তা করে সিদ্ধান্তটা বাতিল করতে হল। আমার নিজের উপর একটা রিস্ক নিয়ে দুরুদুরু বুকে জ্বীন বাড়ী পৌছলাম। যে ঘরটায় জ্বীন হাজির করবে সেখানে পৌছার পর বড়ই হতাশ হতে হল আমাকে। আমি মনে করছিলাম ঘরটা হয়তো চতুর্দিকে বন্ধ থাকবে,ভেতরটা অন্ধকার হবে।
একপাশে ধূপদানী আর একপাশে আগরবাতি জ্বলবে এবং আরও নানা উপকরণ থাকবে,বিভিন্ন গল্প উপন্যাসে আমরা যেরকম পড়ি আর কি।
কিন্তু কোথায় কি, মূল বাড়ীর আঙিনা থেকে একটু দূরে তিনদিকে খড়ের বেড়া দেওয়া টিনের চালের একটা ঘর। ঘরের সামনের দিকটা ফাঁকা,সেখানে একটা রঙিন কাপড় ঝুলানো। বুঝলাম এই কাপড় দিয়ে ভিতরটা আড়াল করে রাখা হয়। আমরা যখন ঘরের সামনে পৌছলাম তখন কাপড়টা উপরে উঠানো ছিলো।
ভিতরে একটা চকি,এছাড়া আর কিছু নাই।
কিছুক্ষন অপেক্ষা করার পর যার উপর জ্বীন হাজির করা হবে তিনি আসলেন। তিনি আমার নানার পরিচিত এবং তার প্রায় সমবয়সী। আমাদের সবার কুশলাদী জিজ্ঞাসা করলেন।
এবার আসল কাজ শুরু।
প্রথমে তিনি চকির উপর উঠে ডানদিকের এক কর্ণারে বসলেন। এরপর একজন লোক তার হাত দুটো পিছনে নিয়ে বেধে দিলো যা অন্যের সাহায্য ছাড়া খোলার উপায় নাই। আমাদের সামনের পর্দাটা ফেলে দেয়া হল। আমরা পর্দার এইদিকে বসে আছি। হটা্ৎ দেখি পুরো ঘর থরথর করে কেপে উঠলো।
আমি ভাবলাম ভুমিকম্প বোধহয় হচ্ছে। আমি লাফ দিয়ে উঠতে ধরব এই মুহূর্তে আমার হাত চেপে ধরে ফিসফিস করে নানাভাই বলল-জ্বীন চলে এসেছে।
পর্দার ওপাশ থেকে আওয়াজ আসলো-কার সমস্যা। নানা বলল- আমরা গতকাল আসছিলাম আমার মেজো নাতির জন্যে তেলপড়া নিতে, তো আপনি আজকে আসতে বলেছিলেন। ওর বড়ভাই সহ আমরা আসছি।
তখন জ্বীন বলল-নাতি পর্দার কাছে এসে দ্বাড়া। এদিকে আমিতো শেষ। এইবুঝি আমার সব গেলো। দুরূদুরূ বুকে পর্দার কাছে গেলাম। প্রথমে পর্দার ওপাশ থেকে আমার মুখটা ছুয়ে নিল।
মুখটা ছোয়ার কারণ বুঝলাম না। মানুষের হাতের মতই মনে হল। কিন্তু না,দেখি আমার ভালোমন্দ জিজ্ঞাসা করতেছে। নানা বাড়ীতে কয় দিন থাকবো জানতে চাইলো। এবার দেখি সে নিজে নিজেই বলল আমি কোথায় পড়ি,কিসে পড়ি।
তারপর পরিশেষে বলল-ওটা এখনো তৈরী হয় নি,সন্ধ্যায় এসে নিয়ে যেতে।
মনে মনে বললাম-দিনের বেলায় আসছি তাই তোমার ভাগ্যি,সন্ধ্যায় আসার রিস্ক আর নিতে চাই না। যাওয়ার সময় মাথা বাদে পুরো শরীরটা উনি সবাইকে দেখায়। পর্দাটা উনার গলা পর্যন্ত তুললেন। দেখি সাদা পাজামা পাঞ্জাবী পরে পা নিচের দিকে ছড়াইয়া দিয়ে চকির উপর বসে আছে।
কিন্তু যার উপর এসেছিলো তাকে দেখেছিলাম লুঙ্গি আর শার্ট পরে ভিতরে ঢুকতে। এছাড়া আর কোন কাপড় ভিতরে ছিলো না। যাওয়ার সময় পুরো ঘরটা আর একবার জোরে জোরে ঝাকি দিয়ে চলে গেলো। এবার পর্দাটা পুরোপুরি তুললে দেখি ঐ লোক(যার উপর হাজির করা হয়েছে) এখনো হাত বাধা অবস্থায় কর্ণারে বসে আছেন।
বি.দ্র.কয়েকটা বিষয় পরিস্কার করে দেই-
১. আগের দিন যখন আমার আম্মু আর নানা জ্বীনের সাথে কথা বলতেছিলো তখন আমার ভাই ঘুরে ঘরের পিছনে গিয়েছিলো উকি দিতে যে আসলেই জ্বীন আসছে কিনা ।
উকি দেওয়ার সাথে সাথে ভিতর থেকে বলছে কি নাতি আমাকে দেখতে চাও। যা সাধারন মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব ছিলো না।
২ উনি আমার পড়াশোনার ব্যাপারে বলে দিলো। কিন্তু ঐ এলাকায় আমি আগে কখনো যাই নি বা আমার নানাও উনাকে আমাদের ব্যাপারে কিছু বলেন নাই।
৩. যাকে জ্বীন বলতেছি তাকে দেখার সময় পাঞ্জাবী পাজামা পরা অবস্থায় দেখছি আর যার মাধ্যমে হাজির হয়েছে তিনি লুঙ্গি আর শার্ট পরা ছিলেন।
এত তাড়াতাড়ি কোন মানুষের পক্ষে পোশাক চেঞ্জ করা সম্ভব না। তদুপরি তিনি হাত বাধা অবস্থায় ছিলেন।
৪. সর্বোপরি এটি একটি সত্য ঘটনা। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।