গল্প আকরাম প্রথম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত রোল নম্বর এক রাখে। হঠাৎ বাবা মারা যাওয়ার পর পড়ালেখায় মনযোগ দিতে পারে না। বাবা কাউকে কিছু বলে যেতে পারেনি। খাতা থেকে নাম দেখে জানতে পারে কে কত টাকা পাবে বা উনি কত টাকা পাবেন। খাতায় ঋন এর টাকার সাথে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়।
আকরাম এস.এস.সি. পরীা পাশ করে একবার পরীক্ষা দিয়ে। জি.পি.এ. ফাইভ অর্জন করে। শুধু ফাইভ না। গোল্ডেন ফাইভ। কিন্তু এইচ.এস.সি. পরীায় পাশ করতে তিন বার পরীক্ষা দিতে হয়।
তার কিছুই করার ছিল না। তখন পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছয় জন। লেখাপড়া বাদ দিয়ে পরিবারের দেখা শুনা তার জন্য অবশ্য কর্তব্য হয়ে দাড়ায়। কারন দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সে বড়। দুই ভাই ও দুই বোন থাকার ভিন্ন কারন আছে।
তার বাবা মা চেয়েছিল দুই সন্তান নিতে। প্রথমে মেয়ে সন্তান হয়। তারপরও মেয়ে সন্তান হয়। তাই বাবা মা ছেলে সন্তানের আশায় আবার সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। এবার ছেলে সন্তান হয়।
কিন্তু জমজ ছেলে সন্তান। তাই দুই সন্তানের স্থলে সন্তান সংখ্যা দাড়ায় চারএ। তার জন্মের কয়েক সেকেন্ড পর যে ছেলে সন্তান হয় সে প্রতিবন্ধি হয়ে জন্ম নেয়। তবুও সে স্বপ্ন দেখে আমি না পারলেও আমার এক ভাই ও দুই বোন পারবে। তারা সুশিায় শিতি হবে।
ভাল চাকরি করবে। সমাজের ও দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনবে। তাই পড়ার ব্যাপারটা এখন তার কাছে মান সম্মান রা করার মত। এখনও লেখাপড়া করার অথিক আগ্রহ থাকায় ব্যবসা বা অন্য কিছু করার সাহসও করতে পারে না। তাছাড়া লেখাপড়া ছাড়া এই মুহূর্তে অন্য কিছু জানে না।
আকরাম বিভিন্ন সমস্যার সাথে যুদ্ধ করে সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি হয়। পরিবার চালানোর পাশাপাশি লেখাপড়া করা বিরাট আর্থিক সংকট ও ধৈর্যের পরীক্ষা হয়ে দাড়ায়। লেখাপড়া করতে হলে কলেজে আসতে হয়। কলেজে আসলে আর্থিক সমস্যা বেশি হয়। কারন কলেজে আসলে আর্থিক উপার্জনের জন্য সময় দিতে পারে না।
তাছাড়া বাজার করার বাড়তি চাপও সামলাতে হয়।
সে পথ খুজতে থাকে কি করলে লেখাপড়ায় এবং আর্থিক অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাবে। সিদ্ধান্ত নেয় প্রাইভেট পড়াবে। কারন প্রাইভেট পড়ালে লেখাপড়ায় বাড়তি উপকার হবে। আর আর্থিক দিকটাও সামাল দেওয়া যাবে।
কিন্তু চর্চা না থাকায় প্রাইভেট পড়াতে পারে না। পূর্বের অনেক কিছু ভুলে গেছে। তাই অনেক কিছু নতুন করে শিখতে হবে। এত কিছু শিা নেওয়ার সময় নাই। তার অবস্থা গ্রাম্য প্রবাদের মত হয়।
শুয়াইয়া কিলাইলে যেই কিলাইয়া শুয়াইলে সেই। এমন অবস্থার মুখোমুখি হয়।
অবশেষে কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। শুধু পরীক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কয়েক মাস পর পরীা দেওয়ার সময়টুকু পায় না।
তার বাবার কোন ভাই ছিল না। বাবা মারা যাওয়ার পর তিন চার বছর এলাকার লোকেরা যেভাবে দেখত এখন সেভাবে দেখে না। এলাকার লোকেরা বলে সে বড় হয়েছে নিজের বোঝ নিজে বোঝতে চেষ্টা করুক। আর কত। নিজে দাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকলে কয়েক বার পড়লে সব শিখতে পারবে।
এখন তার কাছে শুধু ভাগ্য না। এলাকার মানুষগুলোকেও নিষ্ঠুর মনে হয়। সবাই জানে ভাল করে লেখাপড়া করছি। অন্য কিছুতে মনোযোগ দেইনি। আমাকে শিখতে সময় লাগবে।
এই মুহূর্তে সব কিছু শিখতে পারব না। সব কিছু শিখতে চাইলে আমার বয়স অন্তন বাইশ হওয়া দরকার। এই মুহূর্তে সব কিছুতে মনযোগ দিতে চাইলে ভাল করে একটা কিছু শিখতে পারব না। সে হাড়ে হাড়ে টের পায় বিপদ যখন আসে তখন চারদিক থেকে আসে।
আকরামের বাবার তিন বোন ছিল।
দাদা দাদী ছেলের আশায় এক এক করে তিন মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। তারা ছেলে সন্তানের আশায় আবার সন্তান নিতে চায়। চার নম্বরে আকরামের বাবার জন্ম হয়। আকরামের বাবা থাকতে ফুফুরা খুবই ভাল ছিল। বাপের বাড়ি ঘন ঘন আসত।
বাবাও কিছু মনে করত না। কারন ছোট থাকতেই বাবা মারা যায়। আপন বলতে তিন বোন এবং বোনের ছেলে ও মেয়ে ছিল। আকরামের বাবা মারা যাওয়ার পর তারা বিষাক্ত হয়ে পড়ে। বাপের বাড়ির পাওনা নিতে তারা ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
অথচ তার বাবা থাকতে যে কোন বোনের বাড়িতে গেলে মাছ কিংবা মাংস নিত। ভাগিনা আসলে কাঁচা বাজার পর্যন্ত কিনে দিত। আর কথা ছাড়াই মৌসুমের ফল দিত। দেখলে বোঝা যেত তার (আকরামের) বাবা তিন বোনকে স্ত্রী সন্তানের চেয়ে বেশি ভালবাসত। আকরামকে সাহায্য করার মত কেউ নেই।
মামা বা খালা টাকা ও বুদ্ধি দিতে পারে। কিন্তু বদলি কোন কাজ করে দিতে পারে না। এতে করে তার উপর চাপ আরও বেড়ে যায়। তাই কোন মতে মা ভাই বোন নিয়ে বেচে আছে। ভাই বোন লেখাপড়া করবে।
সে অনেক বার ঠকেছে ঠকছে। কিন্তু চুপ করে থাকে। তার মাথায় অনেক চিন্তা-ভাবনা ঘুরপাক খায়। তার প্রায়ই মনে পড়ে দুইটি ঘটনা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।