যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গোলাম আযমকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
এর আগে বুধবার সকাল ১০টায় তিনি কয়েকজন আইনজীবীর সঙ্গে ট্রাইব্যুনালে হাজির হন গোলাম আযম। এরপর তাকে হুইল চেয়ারে করে হাজতখানায় নেওয়া হয়। এখানে তার সঙ্গে রয়েছেন তার বড় ছেলে ব্রি. জেনারেল (অব.) আজমী। তিনিও কাঠগড়ায় বসেন তার বাবার সঙ্গে।
সকাল সাড়ে ১০টায় যথা সময়ে শুরু হয় শুনানি প্রক্রিয়া। শুরুতেই গোলাম আযমের করা জামিন আবেদনের ওপর শুনানি নিচ্ছেন ট্রাইব্যুনাল। গোলাম আযমের পক্ষে শুনানি করছেন তার আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক।
এদিকে ট্রাইব্যুনালে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ১০ প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আইন-শৃংখলা বাহিনী সূত্র। এছাড়া ডিবি পুলিশ, এসবি, এনএসআই রয়েছে নিরাপত্তা জোরদার করতে।
এদিন সকাল থেকেই হাইকোর্টে ১নং গেট ও মাজার গেটে দিয়ে সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পরিচয়পত্র ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহায়তাদানকারী রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা গোলাম আযমকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বুধবার সকালে হাজির করা হয়েছে।
এর আগে গোলাম আযমের বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী যতো অপরাধ হয়েছে তার সবকিছুর দায়ভার একক এবং যৌথভাবে গোলাম আযমের।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গত সোমবার গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আমলে নেন এবং তাকে বুধবার ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন।
আদেশে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে হাজির না হলে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হবে। ’
গোলাম আযমের বিরুদ্ধে গত ১২ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে ট্রাইব্যুনালের কাছে তাকে গ্রেপ্তারের আবেদন করা হয়। ২৬ ডিসেম্বর অভিযোগ অবিন্যস্ত এবং শ্রেণীবদ্ধ নয় বলে রাষ্ট্রপক্ষের কৌশুলীদের কাছে সেটি ফিরিয়ে দিয়ে গত ৫ জানুয়ারি পুনরায় অভিযোগ দাখিলের দিন ধার্য্য করে দেন ট্রাইব্যুনাল। ৫ জানুয়ারিতে দেয়া অভিযোগপত্রে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী ৬২টি অভিযোগ আনা হয়। ৬২টি অভিযোগের মধ্যে রয়েছে হানাদার বাহিনীকে সহায়তা ও তাদের সঙ্গে চক্রান্ত করার জন্য ছয়টি, তাদের সঙ্গে পরিকল্পনার তিনটি, উস্কানি দেওয়ার ২৮টি, তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার ২৪টি এবং ব্যক্তিগতভাবে হত্যা ও নির্যাতনের একটি অভিযোগ।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি রানা দাশগুপ্ত বাংলানিউজকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের অনেক আগ থেকেই পাকিস্তানি সামরিক জান্তার সঙ্গে গোলাম আযমের যোগাযোগ ছিলো। আর ওই অবস্থায় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইট শুরু হয়। অপারেশন সার্চলাইটের তিন দিন পরই খাজা খয়েরউদ্দিনকে আহ্বায়ক করে ১৪০ সদস্যের শান্তি কমিটি গঠন করা হয়।
তিনি আরও জানান, তাদের দৈনন্দিন কাজ তদারকি করতে ৬ সদস্যের একটি কমিটিও করা হয়। আর ওই কমিটির দুই নম্বরে ছিলো গোলাম আযমের নাম।
রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘জামায়াতের এই সাবেক নেতার নেতৃত্বেই দেশের বিভিন্ন স্থানে শান্তি কমিটি, রাজাকার, আল বদর, আল শামস ও মুজাহিদ বাহিনী গঠন করা হয়। ’
এসব সংগঠনকে অস্ত্র সরবরাহ করা এবং এ বিষয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কাছে সুপারিশ করার দায়িত্ব গোলাম আযমই পালন করতেন বলেও জানান তিনি।
রানা দাশগুপ্ত আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় এক ঈদের দিন গভীর রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেল থেকে ৩৮ জনকে এনে কৈরতলা এলাকায় হত্যা করা হয়। গোলাম আযম এ ঘটনায় সম্পৃক্ত ছিলেন। ’
মানবতাবিরোধী অপরাধ তদন্ত সংস্থা গত ৩১ অক্টোবর গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ৩৬০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন এবং আনুষঙ্গিক নথিপত্র রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলিদের কাছে জমা দেন।
১ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা গোলাম আযমের বিরুদ্ধে প্রসিকিউটরের কাছে এ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
৩৬০ পৃষ্ঠার এ তদন্ত প্রতিবেদনে মোট ৪০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিবেদনটির সঙ্গে ১০ হাজার পৃষ্ঠার নথিপত্র উপস্থাপন করা হয়েছে।
অপরদিকে, ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে জামিনের আবেদন করেছেন গোলাম আযম। জামিন আবেদনে তার বার্ধক্যজনিত এবং স্বাস্থ্যগত অবস্থাকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে বলে বাংলানিউজকে জানান তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।