টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার হিংগানগর গ্রামের ৭শ’ পরিবার শীতল পাটি বুনে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন। বংশ পরস্পরায় প্রায় ২শ’ বছর ধরে তারা শীতল পাটি বুনার পেশায় নিয়োজিত আছেন। সরকারী কোন সহযোগীতা না পাওয়া ও মধ্য সত্বভোগীদের দৌরাত্বের কারনে অনেকেই তাদের বাপ দাদার এ পেশা ছেড়ে দেয়ার চিন্তা ভাবনা করছেন।
টাঙ্গাইল শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিনে সিলিমপুর পার হলেই হিংগানগর গ্রাম। গাছ-গাছালী দিয়ে ঘেরা ছায়া সু-শীতল এই গ্রামের সবাই হিন্দু ধর্মালম্বী।
দুই এক ঘর মুসলমানও আছে। প্রায় ৪ হাজার লোকের বসবাস এই গ্রামে। বেত চাষ ও শীতল পাটি বুনেই এরা সংসার চালান। পুরুষের পাশাপাশি গ্রামের সব মহিলারাও পাটি বুননের কাজ করে থাকেন। যাদের জমি নেই তারা অন্যের জমিতে বর্গা চাষ করেন।
এতে করে ওই গ্রামে প্রায় ৬শ’ একর জমিতে বেতের চাষ করা হয়।
হিংগানগর গ্রামের শীতল পাটির কারিগর বাদল চন্দ্র দে বলেন, শীতল পাটির বেতি তৈরী ও বুনন অত্যন্ত কঠিন কাজ। তবে একবার বীজতলা রোপন করলে তা বড় হওয়ার পর ৬০ বছর পর্যন্ত বেত কাটা যায়। সাধারনত বীজতলা রোপন করার ৪ বছর পর থেকে বেত কাটা শুরু হয়। প্রথমে বেত কেটে রোদ্রে শুকাতে হয়।
এরপর বেতী আটি বেধে ২ দিন টগ জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়। তারপর সিদ্ধ করে রোদ্রে শুকিয়ে চিকন বেতী উঠিয়ে বুনতে হয় শীতল পাটি। নিপেন চন্দ্র দে জানান, একটি পাটি বুনতে যে মুরতা লাগে বর্তমানে তার বাজার মুল্য ১শ’ ৩০ টাকা, বুননে খরচ ১শ’ ৩০ টাকা, বেতী তৈরী কাটার মুজুরী ও রংয়ের খরচ ২শ’ ২০ টাকা। একটি পাটি বুননে মোট ৪শ’ ৮০ টাকা খরচ হয়। যা বিক্রী হয় ৫শ’ থেকে ৫শ’ ২০ টাকায়।
বৃদ্ধ সুবল চন্দ্র দে বলেন, বাপ দাদার আমল থেকে আমরা পাটি বুনে আসছি। আগে ভাল লাভ হতো। বর্তমানে যে ভাবে জিনিস পাতির দাম বেড়েছে সে ভাবে পাটির দাম বাড়েনি। এখন সংসার চালানো কঠিন। সন্ধ্যা রানী দে বিয়ে হওয়ার পর থেকেই স্বামীর বাড়ীতে প্রায় ৫০ বছর ধরে শীতল পাটি বুননের কাজ করছেন।
তিন ছেলে মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন। তারাও শীতল পাটি বুনে জীবিকা নির্বাহ করছে। তিনি জানান, নিজের জমি না থাকায় মহাজনের কাজ চুক্তি ভিত্তিতে করে থাকি। একটি পাটি বুনতে ২ দিন সময় লাগে। মুজুরি পান ১শ’ ৩০ টাকা ।
এই টাকা দিয়েই অতি কষ্টে সংসার চালান।
এদিকে হিংগানগর গ্রামে সপ্তাহে মঙ্গলবার ও শুক্রবার শুধু পাটির হাট বসে। ঢাকা, চট্রগ্রাম, রাজশাহী, নরসিংদী, ময়মনসিংহ, জামালপুরসহ অন্তত ৩০টি জেলার পাইকারী ক্রেতারা পাটি কিনে নিয়ে যায় এই হাট থেকে। স্থানীয় মহাজনদের ঋণ পরিশোধ করতে অনেকেই বাধ্য হয়েই কম দামে পাটি বিক্রী করছে। এছাড়াও মহাজনেরা অধিক মুনাফা লাভের আশায় গরীব বেত চাষিদের লোন দিয়ে কম দামে পাটি ক্রয় করছে।
ফলে ফায়দা লুটে নিচ্ছে মধ্য সত্বভোগীরা। এতে করে বেত চাষিরা আরও সর্বস্বান্ত হচ্ছে। চট্রগ্রাম থেকে আসা শীতল পাটি ব্যবসায়ী হেমন্ত সরকার জানান, প্রায় ৩০ বছর ধরে হিংগানগর থেকে পাটি নিয়ে চট্টগ্রামে বিক্রী করছি। এখানকার পাটি অত্যন্ত মসৃন ও দেখতে খুবই সুন্দর তাই এর চাহিদা ব্যাপক। জামালপুরের পাটি ব্যবসায়ী গোফরান মিয়া বলেন, উত্তরবঙ্গে হিংগানগরের পাটির ব্যাপক কদর রয়েছে।
তাই এখান থেকে পাটি কিনে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।