তবু তুই রয়েছিস বলে, ঘাসফুলে জল দোলে...
অনেকগুলো দিন পার করে দিলাম। একটা মাত্র গল্প লেখার জন্য এতোগুলো দিন একটু বেশিই। আমি অবশ্য তেমন বড় কোনো গল্পকারও না, যে একবার টেবিলে বসে একটা মাত্র ঘন্টা কাটিয়ে দিয়েই বেশ ভালো একটা গল্প লেখে ফেলবে।
তবুও একটা গল্প লেখার আশায় কলম-খাতা নিয়ে প্রতিদিনই বসছি এখন। প্রতিদিনই কী-বোর্ডে একটু আধটু খট খট আওয়াজ তুলে একটা গল্প দাঁড় করানোর চেষ্টা করছি।
কিন্তু হয়ে আর উঠছে না!
মাথায় একটা ভাবনা যেই না ডালপালা মেলতে থাকে, অমনিই দেখা যায় আরো দশটা ভাবনার ঝাক এসে আমাকে এলোমেলো করে দেয়। নতুন করে ভাবনার ঝাককে যেই সাজাতে বসি, অমনি পেকে উঠে নতুন আরো একটা ভাবনার কুন্ডুলী। কী করি... কী করি...!
নিতান্তই সামান্য বেতনে চাকরি করা এক সাধারণ কম্পিউটার অপারেটরকে একটা নিয়ে একটা গল্পের প্লট সাজালাম কদিন আগে। গল্পটাতে অপারেটরই নায়ক। তার নায়িকা নার্সিং কলেজের স্টুডেন্ট।
নায়কের ইচ্ছা তার নায়িকা নার্সিং পড়ছে পড়ুক। কিন্তু পড়া শেষে সে সংসারীই হবে। চাকরি বাকরি করার দরকার নেই। কিন্তু নায়িকার মাথায় একটা পুরো রাজ্য। যে রাজ্যটা শুধুমাত্র তারই সাজানোর কথা ছিলো; কিন্তু নায়কের আগমনে সে ভাবে রাজ্যটা দুজন মিলেই সাজাবে।
নায়িকা বাবা মায়ের বড় মেয়ে। আরো দুইটা ছোটবোন তার আছে। ভাই নাই কোনো। নায়িকার বাবার তাই সব ভরসা বড় মেয়েটার উপর। নায়িকার মাও তাই।
ছোটবেলা থেকেই নায়িকা বাবা আর মায়ের কথা মতোই নিজের জীবনটা ভেবে ভেবে বড় হয়েছে। তার জীবনটা যে কোনো কারণে অন্য রকমও হতে পারে, নায়িকা তা ভাবেই নি। ভাবার কোনো সুযোগই তার আসেনি। নায়িকার ইচ্ছা সে চাকরি করবে, নায়কের ইচ্ছা বিপরীত।
গল্পের এ পর্যায়ে নিজেকে আবারো নেহাত গাধা একটা গল্পকার মনে হয়।
নিজে লেখছি গল্প; নায়ক আর নায়িকা বিপরীত মেরুতে ফেলে কষ্টের একটা গল্পের দরকারটা কী! ধুর...
এই গল্পটা মাঠেই মারা যায়।
নতুন একটা গল্পের প্লট আগেই তৈরি ছিলো।
ধার-ঋণে জর্জরিত একটা পরিবার। তুমুল সংগ্রামে দিন যায় তাদের। ভালো খাবার খেলে তাদের লোনের টাকার ব্যবস্থা করা কষ্ট হয়ে যায়।
আবার লোনের টাকা ঠিকঠাক পরিশোধ করতে গেলে তাদের ভালো ইচ্ছারা মরে যায়।
এই গল্পটাতেও বাবা মা বড় ছেলের নির্ভশীল হয়ে পড়ে। বড় ছেলেটা আবার ঠিক ভালো মানুষ না। আমাদের সমাজে কারা ভালো মানুষ, তা আমি ভালোভাবে জানিনা বলে গল্পের এই ছেলেটার চারিত্রিক কোনো বর্ণণা আমি দিতে পারিনা। গল্পের এই চরিত্রটা তাই একটু বিকলাঙ্গ হয়েই থাকে।
বিকলাঙ্গ চরিত্রটা গল্পের একটা কিভাবে কিভাবে যেনো বাবার মুখোমুখি একটা অবস্থানে চলে আসে। আবারও নিজের গাধামীতে বোকা হয়ে যাই।
সন্তানকে বাবার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়ে আমার কি শান্তি!
তবুও এই গল্পটা আমি এগিয়ে নিতে চাই। পৃথিবীর কিছু বাবাদের আমার বলতে মন চায় কিছু কথা। যা তারা নিজেদের অজান্তেই ভুলে ফেলে রাখে।
তাদের এই ফেলে রাখায় কী যে হয়ে যায় কোথায় তা তারা জানতেই পারেনা।
হঠাৎ মনে হয়, আমি নিজে তো এখনো বাবা হইনি। বাবাদের মনোজগতের ভাবনারাও আমার ভিতরে নেই; তো আমি কী করে বুঝবো আসলে কী তারা ভাবেন?
ব্যাস, আমার ভাবনার ঝাক উড়ে দূরে চলে যাওয়া পাখির ঝাকের মতো অদৃশ্য হতে থাকে। গল্পগুলোও আর শিড়দাড়া সোজা করে দাঁড়াতে পারেনা। আমার গল্পের সারা গায়ে কোত্থেকে যেনো এসে পড়ে যন্ত্রণার কালচে কীটের দল.... ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।