আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বার্থপর মানব সমাজকে নববর্ষের শুভেচ্ছা …

ঢাকা ডিসেম্বের ৩১, ২০১১ আমিও তোমাদেরই একজন; স্বার্থপর, যেমন তুমি এবং তোমরা সবাই । তোমাদের মত আমিও সারাদিন ব্যস্ত সময় কাটাই। অনেক কাজ, অনেক দায়িত্ব; নিজের জন্য সময় বের করার যেন এতটুকু সময় নেই। দিন শেষে নিজেকে প্রশ্ন করি, কার জন্য? এক ধরনের স্বার্থপর আনন্দে মনটা ভরে উঠে, কারন আমার সকল শ্রম কেবল আমারই স্বার্থে, তোমাদের কারও স্বার্থে নয়। সার্থক এই মানব সমাজ, সার্থক এই আমি।

আমাদের এই মানব সমাজ, যাকে আমরা সভ্যতা বলি তা আসলে স্বার্থপরতারই প্রতিশব্দ। আমরা মানুষেরা সমাজ তৈরি করেছি কেবলই নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য। সমাজ তৈরির প্রাক্কালে মানুষ চিন্তা করেছিল সঙ্গবদ্ধ গোষ্ঠীতে থাকলে প্রকৃতির প্রতিকুলতা সহজে তাকে কাবু করতে পারবেনা, কিন্তু একবারও হয়তো চিন্তা করেনি সে নিজে সমাজকে কি দিতে পারবে। কালের আবর্তে সমাজের ধ্যানধারণার অনেক পরিবর্তন-পরিমার্জন হয়েছে কিন্তু আমাদের ব্যক্তি স্বার্থ কেন্দ্রিক চিন্তাধারার পরিবর্তন আজও হয়নি। আমি কাওকে দোষ দিচ্ছিনা, কারন আমাদের জীবনের সূচনাই হয় চরম এক প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে।

লক্ষ-কোটি শুক্রাণুর জীবন মরন প্রতিযোগিতার দৌড়ে বিজয়ের পুরস্কার একটি নতুন জীবন আর নির্মম এই প্রতিযোগিতায় পরাজয়ের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। এত কঠিন আর নির্মম প্রতিযোগিতায় যে জীবনের সূত্রপাত সে তো স্বার্থপর হতে বাধ্য। প্রকৃতির এই নির্মম প্রতিযোগিতার নিয়ন্ত্রণ আমাদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে, কিন্তু আমদের মন ও মগজ এই দুইয়ের নিয়ন্ত্রণ তো আমাদেরি হাতে, তবুও আমাদের কর্ম আর আচরণে কেন এত স্বার্থপরতা? আমরা কখনো কি চিন্তা করেছি সমাজে আমার গুরুত্ব কতটুকু, আর আমিই বা আমার পারিপার্শ্বিক মানুষগুলোকে কতটুকু গুরুত্ব দেই? কখনো কি চিন্তা করেছি সমাজের সকল মানুষ কেন সমান গুরুত্ব পায় না? আমাদের পরিবার ব্যবস্থা দিয়েই চিন্তা করে দেখুন, একজন কর্মজীবী মা আর একজন গৃহিণী মা, কে সন্তানের কাছে বেশি গুরুত্ব পায়? একবার চিন্তা করে দেখুনতো আপনার পরিবারে বাবা কেন সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ! সুনতে খারাপ লাগলেও বলতে হয়- “যে গরু দুধ দেয় সে লাথি দিলেও ভাল” কারন, “পেটে খেলে পিঠে সয়”। কষ্ট না হলে আর একটু ভেবে দেখুন, আপনার নিকট বন্ধুদের ভেতর কার মতামতের গুরুত্ব সবচাইতে বেশি? আর কোন বন্ধুটির অনেক কথাই আমরা ভেবে দেখার আগে হেঁসে উড়িয়ে দেই? আমরা এতটা বোকা নই যে এই পার্থক্যটুকু ধরতে পারবোনা। তাই, আমি নাহয় কিছু নাই বললাম।

আমি অর্থকে যোগ্যতা কিংবা গুরুত্বের মাপকাঠি হিসেবে দাড় করাচ্ছি না, কিন্তু যদি সত্য স্বীকার করার সাহস থাকে তবে এটুকু আমরা নির্দ্বিধায় স্বীকার করতে পারি যে, সমাজে তাঁর গুরুত্ব তত বেশি যার দেবার ক্ষমতা যত বেশি। অথবা যদি বলি আমরা সেই মানুষটিকেই গুরুত্ব দেই যার কাছ থেকে আমরা কিছু পাবার আসা রাখি! আমি কি ভুল কিছু বললাম? যদি আপনার মনে হয় আমি ভুল বলেছি তবে বাকি লেখাটুকু কষ্ট করে পড়ার দরকার নেই; আর যদি মনে হয় আমি ভুল বলিনি তবে আপনিই বলুন, আপনি কি স্বার্থপর নন? সমাজের সাপেক্ষে আমরা প্রতিটি মানুষ স্বার্থপর, দেশের সাপেক্ষে আমাদের সমাজ, আর পৃথিবীর সাপেক্ষে প্রতিটি দেশ, কারন এর সব কিছুই আমাদের এই স্বার্থপর হাতে তৈরি। স্বার্থপরতার উদাহরণ টেনে এই তিক্ত সত্যের অধ্যায়টিকে আর দীর্ঘ করার প্রয়োজন মনে করছি না, তবে যারা কষ্ট করে আমার লেখাটি এতদূর পড়েছেন তাদের প্রতি অনুরধ থাকলো, সময় থাকলে কখনো আপনার মনের জানালা গুলো বন্ধ করে নিজের মত করে ভেবে দেখবেন, আপনি প্রতিদিন যা করছেন তাঁর কতটুকু আপনার নিজের স্বার্থে, আর কতটুকু সমাজের ক্ষুদ্র অথবা বৃহত্তর স্বার্থে? উত্তর যাই হোক না কেন, আমি কাওকে সন্ন্যাস ধর্ম পালন করতে বলছি না, কিংবা বলছি না সকল ভোগ বিলাসের জীবন ত্যাগ করে দাতা হাতেমতাই হতে, কারন এতটা কঠিন জীবন হয়তো আমরা জাপন করতে পারব না। তবে আমরা কি পারি না, আমাদের প্রতিটি কাজের পেছনে অন্তত একটি ভাল উদ্দেশ্য খুজে বের করতে? খুব কি কঠিন কিছু? হয়তো হ্যাঁ, হয়তো না। তবে যাই হোক, এই নতুন বছরে আমরা অন্তত একটিবার চেষ্টা করে দেখি! যদি সফল হই তবে অন্তত একজন নিঃস্বার্থ মানুষের নবজন্ম হবে, হয়তো একটি নিঃস্বার্থ সমাজের।

প্রত্যাশা করতে দোষ কি? আপাতত…………………………… এই স্বার্থপর মানব সমাজকেই নববর্ষের শুভেচ্ছা আরও লেখা পড়তে লগ-ইন করুনঃ http://mrhrumman.wordpress.com/ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.