"কামের উদ্রেক যে করে, সেই মেঘে সহসা দেখে তার সমুখে
যক্ষ কোনোমতে চোখের জল চেপে ভাবলে মনে-মনে বহুখনঃ
নবীন মেঘ দেখে মিলিত সুখীজন তারাও হয়ে যায় অন্যমনা,
কী আর কথা তবে, যদি সে দূরে থাকে যে চায় কন্ঠের আলিঙ্গন । "
অনেক বছর ধরে শহীদ মিনারের সামনে একটা পাগল কে বসে থাকতে দেখে সফিক । নোংরা-ছেড়া জামা পরা । চুলে দাঁড়িতে জট । সফিক সময় পেলেই পাগলটার কথা ভাবে ।
তার স্ত্রী রুমু'কেও এই পাগলটার কথা বলেছে । রুমু কোনো আগ্রহ দেখায়নি । রুমু'র পৃথিবীতে শুধু দুইজন তার স্বামী আর তিন বছরে বাচ্চা অর্ক । সব কিছুতেই সফিকের এক আকাশ কৌতুহল । একদিন সফিক দুপুরে লাঞ্চ করেই অফিস থেকে বের হয়ে যায় ।
অফিসে তার খুব অস্থির অস্থির লাগছিল । সফিক হাঁটতে হাঁটতে শহীদ মিনারের সামনে আসে । পাগলটা পাশে গিয়ে বসে । পাগলটা একবার মুখ তুলে সফিক কে দেখে একটুখানি হাসে । সফিক ভাবে পাগলের হাসিটা সুন্দর ।
পাগলটা ঠান্ডা গলায় সফিককে অবাক করে দিয়ে বলল- অফিস শেষ হওয়ার আগেই যে বের হয়ে এলে ! এত অস্থির কেন তুমি ।
সন্ধ্যা পর্যন্ত সফিকের সাথে পাগলটার অনেক কথা হলো । পাগলটার নাম সূর্য । সফিকের ধারণা সূর্য'র অলৌকিক ক্ষমতা আছে । সে সূর্যকে একটা সেলুন নিয়ে গিয়ে চুল- দাড়ি কাটালো ।
সূর্যকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার পর সফিকের স্ত্রী রুমু খুব চেচামেচি শুরু করলো । রুমু বলল- এই পাগল ঘরে থাকলে আমি আমার বাচ্চাকে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যাবো । সূর্য সফিককে আগেই বলেছিল তোমার স্ত্রী আমাকে ঘরে ঢুকতে দিবে না । সফিক কোনো উপায় না দেখে- সূর্যকে তার বন্ধুর মেসে রেখে বাসায় ফিরলো । রাতে সফিক টেবিলে খেতে বসলে রুমু একটা কথাও বলে নি ।
সফিক বারান্ডা থেকে সিগারেট খেয়ে এসে দেখে রুমু শুয়ে পড়েছে । সফিক রুমুকে টেনে নিজের কাছে নেয় । রুমু ঘেমে যায় । রুমুর দিকে পাগলের মতো তাকিয়ে থাকে । চুমু খায় ।
সবশেষে অনেক ক্লান্তি নামে ।
পরদিন, সফিক অফিসে না গিয়ে সূর্য'র সাথে সারাটা দিন অনেক গল্প করে কাটায় । সূর্য সফিককে জানায়- তোমার স্ত্রী তোমাকে বিয়ের করার আগে একজনের সাথে তার প্রেম ছিল দীর্ঘদিন । এই কথা শুনে সফিক খুব মুষড়ে পড়ে । সে ভাবত তার স্ত্রী শুধু তাকেই ভালোবাসে ।
সন্ধ্যায় মেস থেকে বের হয়ে সফিক এলোমেলো হাঁটতে থাকে রাস্তায় । বারবার রুমু'র কথা মনে পড়ে । রুমু আর একজনকে ভালোবাসতো ! এই কথা কেন গোপন করেছে রুমু । রুমুকে তো সফিক কম ভালোবাসে নি । একটা সিগারেট ধরিয়ে সফিক দোতলায় উঠে যায় ।
অনেক বছর আগে সফিক এ বাড়িতে প্রায়ই আসত । লিলি কি এখন থাকে এ বাড়িতে ? বন্ধ দরজায় টোকা দিতেই - লিলি দরজা খুলল । লিলি দেখতে আগের মতোই আছে । লিলি সফিকের দিকে তাকিয়ে বলল তুমি ! এত বছর পর ! চার বছরে তুমি একটুও বদলাও নি ।
সফিক বলল- লিলি তুমি বিয়ে করোনি ? লিলি বলল- স্বামী, বাচ্চা থাকলে তোমাকে ঘরে ঢুকতেই দিতাম না ।
আমি একা । ভালোই আছি । লিলির ঘরে সব সময় বেলী ফুলের গন্ধ পাওয়া যায় । যা মনকে শান্ত করে দেয় । সফিককে দেখে লিলি অনেক খুশি হয়েছে ।
লিলির মুখ অপ্রত্যাশিত খুশি ঝকমক করছে । লিলি একটা দামী মদের বোতল বের করলো । যা বিশেষ অতিথিদের জন্য সব সময় লিলির ঘরে মজুদ থাকে । সফিক বিয়ের পর মদ খাওয়া ছেড়েই দিয়েছিল । কিন্তু সে আজ খাবে ।
তার স্ত্রী তার সাথে প্রতারনা করেছে । লিলি বলল- মদ খেয়ে আগের মতো চিৎকার চেচামেচি করবে না । আমি ভদ্র মেয়ে । এখানে আমাকে অনেক নিয়ম মেনে থাকতে হয় । সফিক আজ অনেক মদ খাবে ।
রুমু তার কাছে কথা গোপন করেছে । লিলি একটা রবীন্দ্র সংগীত গেয়ে শোনালো সফিককে । ''আমি রুপে তোমায় ভোলাব না । '' গান শেষ হওয়ার পর লিলি বলল- আমাকে একটা কবিতা শোনাও সফিক । সফিক আবৃত্তি করলো- "ব্যাপক ঝড়ের মতো তোমাকে ভালোবাসতে ইচ্ছা করে ।
/ তীব্র ক্ষুধার মতো তোমাকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকতে ইচ্ছা করে । / দুপুরের কড়া রোদের মতন তোমার কাছ থেকে উষ্ণতা পেতে ইচ্ছা করে । / বৃষ্টির অজস্র ফোটার মতন তোমার গায়ে আদরের দাগ করে দিতে ইচ্ছা করে । "
কবিতা শেষ হতেই লিলি সফিকের বুকে ঝাপ দেয় । সফিক মনে মনে ভাবে এখন আমার মুক্তি মিলবে ।
ভীষন অন্ধকার থেকে মুক্তি মিলবে । লিলি সফিকের একটা হাত নিয়ে তার বুকে রাখে, বলে কি বুঝতে পারছো ? সফিক বলল- কি ? লিলি বলল- অনেক ব্যাথা । এক আকাশ ব্যাথা । লিলির ঘর্মাক্ত কপালে চুমু খায় সফিক ।
লিলির বাসা থেকে বের হয়ে সফিক টলতে টলতে নিজের বাসায় যায় ।
দরজা খুলেই সফিককে এক পলক দেখে রুমু বলল- তুমি মদ খেয়েছো ? সফিকের ছোট উত্তর- হুম খেয়েছি । রুমু কাঁদতে কাঁদতে বলল- কোনো মেয়ে-মানুষের কাছে যাওনি ? সফিক বলল, না । রুমু রেগে গিয়ে বলল- তোমার ঠোঁটে গালে শার্টে লিপস্টিকের দাগ কেন ? তোমার গায়ে পারফিউমের গন্ধ কেন, যা তুমি মাখো না । সফিক কোনো উত্তর খুঁজে পেলো না । বারান্দায় গিয়ে চুপ করে বসে রইল ।
তখন আকাশের সব মেঘ কেটে
গিয়েছে ।
পাগল সূর্য চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে ভাবছে - যা করেছি ভালোই করেছি । আমার কেন সফিকের মতন সুন্দর স্ত্রী নেই । সুন্দর ফুটফুটে বাচ্চা নেই । কি ক্ষতি হতো আমার যদি সফিকের মত্ সুন্দর একটা সাজানো সংসার থাকত ।
সফিক আমাকে বিশ্বাস করেছে, আমি তার বিশ্বাসের সুযোগ নিয়েছি । তার সংসারে অবিশ্বাস ঢুকিয়ে দিয়েছি । সূর্য একটা সিগারেট ধরাতে ধরাতে শয়তানের মতো একটা হাসি দিলো ।
" দিলাম পরিচয় চিহ্ন, অতএব জানবে আমি আছিু কুশলে,
তোমার কালো চোখে লোকের কথা শুনে না যেন দেখা দেয় অবিশ্বাস ;
বিরহে প্রণয়ের ধ্বংস হয় নাকি, কিন্তু অভাবের প্রভাবে
আমার মনে হয় স্নেহের উপচয় মহৎ প্রেমে পায় পরিণাম । " ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।