আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিখিল ভদ্রের খন্ডিত পা এবং কোটি টাকা দামের প্রশ্ন?

আমি একজন পাঠক দেশে প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। মারা যাচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার অসংখ্য মানুষ, চিরতরে পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে আরো অনেকে। যারা প্রাণ হারান বা পঙ্গু হন তাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার রাষ্ট্রের অত্যন্ত গুরুত্ত¡পূর্ণ ব্যক্তি,জাতির কৃতি সন্তান, অমূল্য সম্পদ। সাম্প্রতিক সময়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলে যাদের নাম উলেøখ করার মত তাদের মধ্যে আছেন চলচিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ, বিখ্যাত ফটো সাংবাদিক মিশুক মুনির, সাংবাদিক বেলাল আহমদ, সরকারের সচিব রাজিয়া সুলতানাসহ আরো অনেকে। প্রাণ হারানোর তালিকায় আছে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের সেই অবুঝ স্কুল ছাত্ররাও।

যাদের কাছে জাতির অনেক কিছু পাওয়ার ছিল, সেই তারা জীবনের সাধ পাওয়ার আগেই চলে গেছে না ফেরার দেশে। আছে আরো হাজার হাজার মানুষ। আর পঙ্গুত্বের তালিকায় আছেন নাম না জানা অনেক চেনা-অচেনা মুখ। যাদের তালিকা আরেকটু দীর্ঘ হয়েছে প্রিয় সহকর্মী নিখিল ভদ্রের অনাকাংখিত ও অস্বাভাবিক দুর্ঘটনার কারণে। এই তালিকা প্রতিদিনই দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে... হবে... হতেই থাকবে...।

তারেক মাসুদ, মিশুক মুনির’রা মারা যাওয়ার পর বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ রা¯Íায় নেমে এসেছিলেন প্রতিবাদ জানাতে। আর গত বুধবার প্রিয় সহকর্মী নিখিল ভদ্র প্রেসকাবের সামনে সরকারের নিয়ন্ত্রিত বিআরটিসি বাসের নিচে চাপা পড়ে ডান পা হারিয়ে পঙ্গুত্বকে সঙ্গি করেছেন চিরজীবনের জন্য। তার এই দুর্ঘটনার পর সাংবাদিক বন্ধুরা রা¯Íায় নেমেছিলেন, দিনভর আন্দোলন করেছেন, মিছিল করেছেন। রা¯Íা অবরোধ করে রেখেছেন। সন্ধ্যায় সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও তথ্য মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ প্রেসকাবে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দিলে এবং নিখিলের চিকিৎসার সকল ব্যয় ভার রাষ্ট্র বহন করবে জানালে সাংবাদিক বন্ধুরা রা¯Íা থেকে অবরোধ তুলে নেন।

নিখিল পা হারিয়েছেন। এটি আর কোন দিন ফেরত পাবেন না। ইন্দুলেখা আর কখনও তার প্রিয় বাবাকে স্বাভাবিক ভাবে হাঁটতে দেখবে না। শাকিলা পারভীন সারা জীবন প্রিয় স্বামীর পঙ্গুত্বকে সঙ্গী করে এগিয়ে যাবেন সামনের দিকে। আর নিখিল যে গাড়ির চাপায় আহত হয়ে পা হারালেন সেই গাড়ি চালকের হয়তো বা শা¯িÍ হবে।

নিখিলের চিকিৎসার খরচ হয়তো বা রাষ্ট্র বহন করবে। কিন্তু হাজার কোটি টাকা দামের প্রশ্ন হচ্ছে যে কারণে আমাদের প্রিয় সহকর্মী পা হারলেন সেই মৃত্যুদূত সড়ক দুর্ঘটনা কি একটু হলেও কমবে বা সহনীয় মাত্রায় আসবে? এ প্রশ্নের জবাব দেওয়া যে কারো পÿে খুবই সহজ। না, সড়ক দুর্ঘটনা কমবে না। এটিকে সহনীয় মাত্রায়ও আনা যাবে না। এর পেছনে কারণ শুধু একটাই।

সেটি হচ্ছে- সড়ক দুর্ঘটনা রোধে রাষ্ট্রের কোন দায়বদ্ধতা নেই। রাষ্ট্র এখানে একেবারেই নির্বিকার। বরং রাষ্ট্রযন্ত্রের কেউ কেউ এই সড়ক দুর্ঘটনাকে আরো বেশি করে উৎসাহিত করছেন। কেউ সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবাদ করে রা¯Íায় নামলেই রাষ্ট্রের গুরুত্ত¡পূর্ণ দায়িত্বে থাকা মন্ত্রীদের কেউ কেউ পরিবহন শ্রমিকদের নিয়ে সমাবেশ করে পাল্টা হুঙ্কার দিচ্ছেন, অযোগ্য, অদÿ লোকজনকে চালকের আসনে বসিয়ে দিতে চাপ প্রয়োগ করছেন। এতে করে পরিবহণ চালক ও শ্রমিকরা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠছে দিনে দিনে।

এতে করেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে রাষ্ট্রযন্ত্রের কোন দায়বদ্ধতা নেই। তারা কোন দায়-দায়িত্ব নিচ্ছেও না। তাই আর সময় নষ্ট নয়, এবার সময় এসেছে ঘুরে দাঁড়ানোর। রাষ্ট্র যন্ত্রকেই এর দায়দায়িত্ব নিতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনাকে সহনীয় মাত্রায় নামিয়ে আনার বিষয়ে রাষ্ট্রকে আরো কঠোর হতে হবে।

রাষ্ট্র কঠোর অবস্থানে গেলেই এটি সম্ভব, অন্যথায় নয়। মনে রাখতে হবে, প্রতিদিন যারা মারা যাচ্ছে বা পঙ্গু হচ্ছে তাদের সবাই তারেক মাসুদ কিংবা মিশুক মুনির অথবা নিখিল ভদ্র নয় যে, সঙ্গে সঙ্গেই আন্দোলন শুরু হবে। সহকর্মীরা রাজপথে নেমে আসবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.