কতদিন পরে আজ লিখতে বসলাম! তুমি প্রায় বলতে লিখছিনা কেন ইদানিং। তোমার কথায়, তোমার অনবরত অনুরোধে লিখতে বসতাম। কিন্তু লিখা হতো না কিছুই। তোমাকে সে কথা বললেই তুমি মন খারাপ করতে। তোমার সাথে পরিচয়ের আগে কতো গল্প কবিতা লিখতাম।
অথচ এখন পারছিনা। তুমি কারণ জানতে চাইতে। আমার কাছে কোন সদুত্তর না পেয়ে মনে করতে, তুমি আমাকে আমার কাজে যথেষ্ট উৎসাহ দিতে পারছনা। আমি নিজেই আসলে বুঝতাম না, আমি কি কারণে লিখতে পারছিনা। সত্যিই তো! আগে, অর্থাৎ, আমার দীর্ঘ দিনের স্বপ্নটা পূরণ হবার আগে, অর্থাৎ, তোমাকে কাছে পাওয়ার আগে যখন তখন লিখতে পারতাম।
কাগজে কলম রাখলেই তা তরতর করে এগিয়ে চলত। লিখার জন্য মুহুর্ত পরিমান ভাবতে হতো না। কি অসহ্য রকমের ভয়ানক ছিল সময়টা! তুমি আমাকে লিখতে বলছ অথচ আমি লিখছি না। লিখতে পারছি না। এই আমিই কিনা তোমাকে বলেছিলাম, তোমার জন্য সব করতে পারি, স-ব।
শুধু একবার বল কি করতে হবে। আমি মানুষটা সবসময় এক কথার লোক। কাউকে কথা দিলে বুঝে শুনে দিই। বিশ্বাস কর, আমার ঐ কথাটা মন থেকেই বলতাম তোমাকে। কোন হিপোক্রেসি করিনি তোমার সাথে।
কথাটা আমি বিশ্বাস করতাম বলেই তোমাকে বলতাম। তোমার নিশ্চয়ই মনে আছে, আমাদের দুজনের নতুন জীবনের প্রথম দিনে তোমার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, তোমার কোন চাওয়া আমি অপূর্ণ রাখবনা। অথচ তোমার প্রথম চাওয়াটাই আমি রাখতে ব্যর্থ হলাম। জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ লেখা তো দূরের কথা, একটা লেখাও লিখতে পারলাম না!
(আমার লেখালেখির অভ্যাসটার প্রতি আমি খুব কৃতজ্ঞ। এই অভ্যাসটা না থাকলে তোমার মতো কাউকে সঙগী হিসেবে পাওয়াটা এই অধমের জন্য যে কতোটা দুরূহ- এ আমি ভাল করে জানতাম।
আমার এই গুনটার জন্যই যে তুমি আমাকে পছন্দ করেছ, এ তো তুমিও বলেছ অনেকবার। তাইতো লেখালেখির প্রতি আমার চিরকতৃজ্ঞতা। এ না হলে যে তোমার সান্নিধ্য পাওয়া হতো না আমার! )
তুমি আমাকে বলছ, অথচ আমি পারছি না। আমি আমার লেখার টেবিলে বসে আছি, তুমি পাশে দাড়িয়ে, আমার হাতে কলম ধরিয়ে দিচ্ছ, কলমটা কাগজ স্পর্শ করে আছে, কেবল স্পর্শ করেই আছে, কালি ঝরাচ্ছে না। এই দৃশ্যটা যে কি ভয়ানক ছিল আমার কাছে! আমার বুকের ভেতর উথাল পাথাল বয়ে যেত।
তুমি টের পেতে না। তুমি ভাবতে আমি ইচ্ছে করেই লিখছি না। কি যে কষ্ট হতো আমার! তোমাকে কিছুতেই বুঝাতে পারতাম না যে আমি চেষ্টা করছি। তুমি বলতে লেখকরা তো তার ভালবাসার মানুষটার অনৃপ্রেরনাতেই লিখতে পারে। লেখকদের জীবনী পড়ে এ তথ্যটা তুমি জেনেছ।
আমিওতো তাই জানতাম। এতদিন আমিওতো তোমার অনুপ্রেরণাতে, তোমাকে পড়ানোর জন্যই লিখেছি। তবে আজ তুমি যখন আমার স্পর্শ দূরত্বে সারাণ, তখন কেন লিখতে পারছি না। কষ্টটা যে কেবল তোমার না, আমারও! আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে তুমি ব্রাউনিং আওড়াতে,
If you would sit thus by me every night
I should work better, do you comprehend
আন্দ্রে তার প্রেয়সী লুক্রেজিয়াকে বলছে তার পশে বসতে। যদি সে তার পাশে বসে, তবে পৃথিবীকে সে তার শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্মটি উপহার দিতে পারবে।
ইচেছ্ করেই আমাকে কবিতাটা শৃনাতে ,যাতে আমি অন্দ্রের সাথে আমার পার্থক্য বুঝতে পারি। কছম তোমার, আমি নিজেও বুঝতাম না, কেন যে আমি লিখতে পারছি না। শুনেছি প্রত্যেক লেখকের নাকি হঠাৎ করে একটা সময় আসে যখন সে আর লিখতে পারে না। একটা নির্দিষ্ট সময় পর নাকি আবার সে লেখালেখি শুরু করতে পারে। বড় বড় সব লেখকের জীবনে নাকি এরকম সময় আসে।
আমিও কি ওরকম কোন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম। আমার জীবনে এরকম একট বন্ধা সময় কেন কেবল তোমার উপস্থিতির সময়টাতেই আসল? এতই খারাপ ভাগ্য আমার! তোমাকে আমি বুঝাতে পারলামনা আমি তোমাকে কতটা ভালবাসি। কিছুতেই পারলাম না বুঝাতে! দেখ,আমার ভাগ্যটা কতটা খারাপ, তুমি চলে গেলে আর আমিও লিখতে বসলাম! দেখ, এখন লিখতে আমার কোন সমস্যাই হচ্ছে না! তরতরিয়ে লেখা এগুচ্ছে!
আমার এই লেখাটি যারা পড়ছেন, তারা নিশ্চয়ই মনে করছেন শুধুমাত্র এই তুচ্ছ কারনটাতেই সে চলে গেছে। না পাঠক, এটা ছিল আমার প্রতি তার অজস্র অভিযোগের মধ্যে একটি। বাকি অভিযোগগুলার কথা না হয় অন্য একদিন শুনবেন।
তবে নিশ্চিতভাবে আমি বলতে পারি, তার সাথে আমার আচরণগুলোর যে দিকটা সে পছন্দ করতো না, মেনে নিতে পারত না, সে আচরণগুলোর পেছনে যে কারণ তা হলো তার প্রতি আমার তীব্র ভালবাসা। আমি জানি সে কথাগুলা শুনলে আপনাদের অধিকাংশই আমার পক্ষে থাকবেন না, তার মতো আপনারাও আমাকে ভুল বুঝবেন। তাতে অবশ্য আমার কিছু যায় আসে না। আমার ভালবাসার প্রতি আমি যে শতভাগ সত্য ছিলাম, আমার নিজের কাছে এটাই আমার সান্ত্বনা।
যাই হোক, আমার মনের মধ্যে এতদিন যে প্রশ্ন ছিল তার উত্তর আমি আজই পেলাম।
ঠিক আজকেই আমি বুঝতে পারলাম কেন এতদিন তোমার শত অনুরোধের পরেও আমি কোনকিছু লিখতে পারিনি। আজ এতদিন পরে আমি বুঝতে পারলাম, আমি আসলে তোমার জন্যই লিখতে পারতাম না। হ্যা, তোমার জন্যই। তোমাকে নিয়ে, কেবল তোমাকে নিয়ে আমি নিশিদিন এতটাই ব্যস্ত থাকতাম যে আর কিছু মনেই আসত না। সারাণ তোমার চিন্তায় এতোটাই বিভোর থাকতাম যে একটা গল্পের প্লট, কাহিনী, পাত্রপাত্রি এসব নির্মান করা রিতীমতো অসম্ভব মনে হতো আমার কাছে।
কোনকিছু নিয়ে কিছুণ ভাবলেই তুমি এসে কড়া নাড়তে আমার মনের দরজায়। তখনই সব এলোমেলো হয়ে যেত। তোমাকে নিয়ে না ভেবে আর কিছু নিয়ে ভাবা আমার কাছে রিতীমতো অসম্ভব মনে হতো। তুমি ছাড়া আর কিছুই আমার মাথায় আসতো না, চাইলেও আনতে পারতাম না। আমার কোনকিছু লেখাও হতোনা।
আমার এই লেখাটা যদি তোমার চোখে পড়ে, আর যদি তুমি বিশ্বাস করতে পারো, তোমার প্রতি আমার ভালবাসায় কোন খাদ ছিল না, যদি বিশ্বাস হয়, তোমার সাথে যেসব পাগলামি করতাম, অসম্ভব অসম্ভব সব আবদার করতাম তোমার কাছে, তোমাকে বন্দী করে রেখে দিতে চাইতাম আমার কাছে, তার সবটাই তোমাকে তীব্র ভালবাসতাম বলেই, তবে তুমি আবার ফিরে এসো। আমি অপেক্ষায় আছি...
যদিও জানি তুমি আসলে আবারো আমার লেখালেখি,আমার অত্যন্ত প্রিয় একটা কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। আমার অগনিত প্রিয় পাঠকেরা বঞ্চিত হবে আমার লেখা থেকে। আফসোস নেই তবু। কারণ আমি জেনেছি, একজন মানুষ তার প্রিয় একটা কিছু নিয়েই পৃথিবীতে থাকতে পারে, একাধিক কিছু নিয়ে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।