এক্সট্রা এনার্জি এক্সচেঞ্জার
সিলিকননির্ভর ট্রানজিস্টর বদলে দিয়েছিল ইলেকট্রনিকস ও কম্পিউটারের গতিপথ। এবার ডিএনএভিত্তিক ট্রানজিস্টর দিয়ে কম্পিউটারে সত্যিকার প্রাণ সঞ্চারের দাবি করছে একদল গবেষক।
বর্তমানের প্রচলিত ট্রানজিস্টরগুলোর কাজ হচ্ছে, ইলেকট্রিক্যাল সার্কিটের মধ্যে ইলেকট্রনের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা; যা অনেকটা অন-অফ সুইচের মতোই কাজ করে। গবেষকদের দাবি, ট্রান্সক্রিপ্টরগুলো তাদের আশপাশের পরিবেশের ওপর নজর রাখা, কোনো কোষের জৈবিক প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণসহ সব ধরনের কাজই করতে পারে। শুক্রবার এ সম্পর্কীত গবেষণাপত্রটি সায়েন্স সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈব প্রকৌশলী জেরমি বনেটের তত্ত্বাবধানেই এ গবেষণাটি করা হয়। তিনি বলেন, “জিনভিত্তিক কম্পিউটার লজিক তৈরিতে ট্রান্সক্রিপ্টরই মূল ভূমিকা রাখবে। এককভাবে অবশ্য এ ট্রান্সক্রিপ্টরগুলো কোনো ধরনের গণনা কাজ করতে সক্ষম নয়। তবে সম্মিলিতভাবে এগুলো যৌক্তিক যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম; যা কম্পিউটারের অন্যতম মূলনীতি হিসেবে কাজ করতে পারবে”।
গবেষকদের ভাষ্য মতে, ট্রান্সক্রিপ্টর নামের জৈব ট্রানজিস্টরটি ডিএনএর মধ্যকার এনজাইমের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
আর এ বৈশিষ্ট্যকে কাজে লাগিয়ে গড়ে তোলা সম্ভব নতুন ধরনের কম্পিউটার। তারা আরও বলেন, ট্রানজিস্টরের মতোই ট্রান্সক্রিপ্টরগুলো কাজ হবে বিভিন্ন সংকেতকে বর্ধিত করা। ট্রানজিস্টর রেডিওগুলো যেভাবে দুর্বল বেতার তরঙ্গকে বর্ধিত করে শ্রবণযোগ্য শব্দে রূপান্তর করে; তেমনি ট্রান্সক্রিপ্টরগুলো এনজাইম উত্পাদনে সামান্য পরিবর্তন চিহ্নিত করে অন্যান্য প্রোটিনের উত্পাদন ত্বরান্বিত করতে পারবে। আর এভাবে বর্ধনের মাধ্যমে একাধিক কোষে সংকেত পাঠাতে সক্ষম হবে ট্রান্সক্রিপ্টরগুলো।
গবেষকরা জানান, নতুন প্রযুক্তিটি ইলেকট্রনিক খাতে ব্যবহার করা সম্ভব হবে।
কারণ ট্রান্সক্রিপ্টরগুলো কোষের বাইরে থেকে প্রবেশ করানো যেকোনো কিছুর (চিনি, ক্যাফেইন কিংবা অন্যান্য খাদ্যবস্তু) অস্তিত্ব চিহ্নিত করতে সক্ষম। সেই সঙ্গে কম্পিউটারের মতোই এ তথ্যটি সংরক্ষণ করতে পারে ট্রান্সক্রিপ্টর। কিংবা যেকোনো কোষকে উত্পাদন শুরু করা কিংবা বন্ধ করে দিতেও ব্যবহার করা যাবে এগুলোকে।
গবেষকরা আশা করছেন, তাদের এ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে অচিরেই জৈব কম্পিউটার তৈরি করবেন উত্সাহীরা।
সাধারণ কম্পিউটারে অন্য দুটি মূলনীতি হচ্ছে তথ্য মজুদ ও বিনিময়।
ট্রান্সক্রিপ্টর বানানোর জন্য প্রাকৃতিক প্রোটিনের একটি অংশকে বেছে নেন গবেষকরা। কোষের মূল কাজ করে থাকে প্রোটিন (আমিষ)। এ প্রোটিনগুচ্ছকে ব্যবহার করে ডিএনএ অণুর আরএনএ পলিমিরাস অংশে এনজাইমের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হন তারা। গবেষকরা জানান, কম্পিউটার লজিকের অন্যতম অংশ বুলিয়ান লজিক ধরনের গাণিতিক হিসাব-নিকাশ করতে সক্ষম হয়েছেন এ ট্রান্সক্রিপ্টর দিয়ে।
বুলিয়ান লজিকে মাত্র দুটি অঙ্ক দিয়ে সবকিছুকে দেখানো হয়।
এ দুটি অঙ্ক হলো ১ ও ০। ১৯ শতকে গণিতবিদ জর্জ বুল এ গাণিতিক পদ্ধতিটি আবিষ্কার করেন। এখানে যেকোনো চলকের দুটি মাত্র মান থাকে, সত্য অথবা মিথ্যা (১ কিংবা ০)। বুলিয়ান সার্কিটে লজিক গেটগুলো অনেকটা ট্রাফিক পুলিশের মতোই; তারাই সিদ্ধান্ত নেয় তথ্য যাবে কি যাবে না।
উদাহরণ হিসেবে প্রচলিত কম্পিউটারে ব্যবহূত এএনডি (অ্যান্ড) গেটের কথা বলা যায়।
এ লজিক গেটটি একসঙ্গে দুটি ইনপুট নিতে পারে। তবে আউটপুট দেয় মাত্র একটি এবং তা সবসময়ই ১ বা প্রকৃত মান যদি দুটি ইনপুটের মানই ১ হয়। আবার অর গেটের ক্ষেত্রে যদি দুটি ইনপুটের কোনো একটির মানও ১ হয়, তবে আউটপুটও ১ পাওয়া যায়। এ ধরনের লজিক গেটগুলোর সংমিশ্রণে অতি জটিল কম্পিউটিং পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হয়েছে।
খবরঃ সায়েন্সটেক24.কম ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।