আমাদের প্রত্যেকটা দুরবস্থার জন্য পরোক্ষভাবে আমরা নিজেরাই দায়ী।
নিচের কথাগুলো ডাঃ জামান নামক একজন চিকিতসকের লেখা-
_________________________________________________
"বাংলাদেশের ডাক্তারদের আত্মসম্মান দিন দিন কমতে কমতে নাই এর পর্যায়ে চলে গেছে।
এখানকার ডাক্তারেরা ১৫ হাজার টাকায় চাকুরী করে আর ক্লিনিকে ডিউটি করে ৮ থেকে ১০ ঘন্টা ৬০০ টাকায়। আর যেসব জায়গায় ২৫-৩০ হাজার টাকা বেতন, সেই জায়গাগুলোতে গলায় পাড়া দিয়ে জান বের করে আনা হয়। ডিউটি ডিউরেশন ১২ ঘন্টা দিয়ে ৩০ হাজার টাকা দিলেও সেই টাকার প্রতি মন উঠে যায়।
আরে একটা ভালো কম্পানীর রিসিপসনিস্টের বেতন আছে ২০ হাজারের উপরে, এরোপ্লেনে উঠে বয়গিরি করলে বেতন আছে ৫০ হাজার থেকে শুরু লক্ষাধিক, হ্যালো ম্যাডাম ইউর জুস, হ্যালো স্যার ইউর কফি, ইউর ন্যাপকিন ম্যাডাম, ইউর টিস্যু পেপার স্যার, সো সুইট অব ইউ ম্যাডাম, ইটস আ প্ল্যাজার টু মি স্যার... থ্যাংক ইউ ম্যাডাম, টেক কেয়ার স্যার...
ব্যাস... এতেই লাখ টাকা।
আর ক্লিনিক ডিউটি সম্পর্কে আমার একটা থিওরী আছে। ঢাকা শহরে ৫ ঘন্টা রিকশা চালালে কামাই হয় ৬০০ টাকার উপরে, আর ক্লিনিকে ১০ ঘন্টা ডিউটি করলে হয় ৬০০ টাকা।
রিকশাওয়ালার ৫ ঘন্টার কামাই = ডাক্তারের ১০ ঘন্টার কামাই।
আর এখানে বলে রাখি, রিকশাওয়ালা যথেষ্ট স্বাধীনতা নিয়ে রিকশা চালান, তার নিজস্ব লিবার্টি এন্ড অথরীটি আছে।
কিন্তু ক্লিনিকে ডিউটি করলে লিবার্টি এন্ড অথরীটি তো দূরের কথা, নিজের আত্মসম্মান নিয়ে টানাটানি লেগে যায়।
এত কিছুর পরেও, আজ ১৫ হাজার টাকায় চাকুরী করেন ডাঃ যদু। এখন অথরীটি যদি বেতন কমিয়ে ১৪ হাজার করে দেয়, তবে যদু হয়তো কষ্ট পেয়ে চাকুরীটা ছেড়ে দিবেন, কিন্তু ১৪ হাজার টাকায় চাকুরীটা লুফে নিবেন ডাঃ মদু। কিছুদিন পরে অথরীটি যদি বেতন কমিয়ে ১২ হাজার করে দেয়, তবে মদুও হয়তো কষ্ট পেয়ে চাকুরীটা ছেড়ে দিবেন, কিন্তু এই ১২ হাজার টাকার চাকুরীটাও লুফে নিতে ঝাপিয়ে পড়বে ডাঃ কদু।
কারন যদু, মদু, কদু সবাই আজ ডাক্তার।
আমার জানামতে, এই জামানায়ও এমন ক্লিনিক আছে, যেগুলো পার ডিউটি ৪০০ টাকা করে দেয়। এবং বিশ্বাস করেন, তাদের ডাক্তারের অভাব হয়না।
টাকাটা আসলে সব কিছু না, তবুও একটা ভাল জীবন বজায় রাখার জন্য একটা নুন্যতম টাকা দরকার। আর টাকার কথা বাদই দিলাম, যদি সম্মান না থাকে তাহলে আর কিছুই বাকী থাকেনা। "
________________________________________________
উপরের কথাগুলোর আলোকে বলি, যখন দেশে সীমিত সংখ্যক মেধাবী (বা পরিশ্রমী) ডাক্তার/ইঞ্জিনিয়ার ছিল, তারা নিজেরা বা তাদের অভিভাবকেরা কতই না ফুটাঙ্গি দেখাতেন- আমার ছেলে অমুক, আমার মেয়ে তমুক।
বাংলাদেশে প্রচলিত সামাজিক ব্যবস্থা বা সভ্যতার চেয়ে আমাজনের জংলি সমাজেও অনেক পারস্পরিক শ্রদ্ধা-সহমর্মিতার পরিচয় পাওয়া যায়। তা' নাহলে যে দেশের ৮০ ভাগ (পাঠ্যপুস্তক অনুসারে!!) মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল, সে দেশে কৃষক-খেতখামারীদের কেন এত ছোট করে দেখা হয়? কেন রিয়েল এস্টেট কোম্পানির মূল চালিকাশক্তি নির্মাণশ্রমিকেরা নির্মাণকালীন সময়েও ন্যুনতম সুরক্ষা পায় না? কেন দেশের সর্ববৃহত শিল্পের শ্রমিকেরা সুযোগ-সুবিধার দাবীতে রাস্তায় নেমে পরোক্ষভাবে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়?
ব্যাপারটা শুধু এই এক ক্ষেত্রেই নয়, সব ক্ষেত্রেই আমাদের দূরদর্শিতার অভাব রয়েছে। প্রকৃতির নিয়ম-শৃঙ্খলা, স্বাভাবিক সামাজিক স্তরবিন্যাসকে মানতে আমরা নারাজ। ভুলে যাই, "কালো আছে বলেই সাদা আছে, সাদা আছে বলেই আছে কালো। "
অনেকে এই দেশ নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখে।
বলে, এ দেশের সম্ভাবনা ফুরিয়ে যায়নি! তারা হয়তো শিশু, না হলে পাগল! কেন এরকম বলছি? কারণ, যে দেশের আপামর জনগণেরই স্বভাব খারাপ, তাদের নিয়ে আর কিছু হোক স্বপ্ন দেখা যায় না। শুধু সরকার বা রাষ্ট্রব্যবস্থার দোষ দিয়ে লাভ নেই, দোষ আমাদের ডিএনএ-তে!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।