এ আইন ভাঙলে সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদণ্ড এবং ৩ লাখ টাকার জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত খসড়ায়।
সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে ‘ডি-অক্সি-রাইবোনিউক্লিক এসিড (ডিএনএ) আইন, ২০১৩’ এর খসড়ায় এই চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়।
অবশ্য আপাতত নির্বাচনের আগে আর সংসদ বসার সম্ভাবনা না থাকায় এ্ আইন পাসের জন্য নির্বাচনের পর নতুন সংসদে তুলতে হবে।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা সাংবাদিকদের বলেন, ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের জন্য ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি পরীক্ষাগার থাকলেও এ বিষয়ে কোনো আইন ছিল না।
কীভাবে ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে, এ পরীক্ষার ডেটাবেইজ কীভাবে সংরক্ষণ করা হবে, পরীক্ষার পদ্ধতি, পরীক্ষার গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ, ল্যাবরেটরির মান, প্রশাসনিক ব্যবস্থা- সব বিষয় একটি কাঠামোয় নিয়ে আসতে এ আইন করা হচ্ছে বলে সচিব জানান।
আইনটি পাস হলে কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা সরকারের অনুমোদন ছাড়া ডিএনএ পরীক্ষা বা সংরক্ষণ করতে পারবে না।
এ আইন ভাঙলে সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৩ লাখ টাকা জরিমানা হতে পারে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান।
এর মধ্যে অনুমোদন ছাড়া ডিএনএ প্রোফাইলিং করলে দুই থেকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা জরিমানা, অনুমোদন ছাড়া ডিএনএর তথ্য প্রকাশ করলে তিন বছরের জেল ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং ডিএনএ নমুনা ধ্বংস, দূষিত বা নষ্ট করলে তিন থেকে ৭ বছরের কারাদণ্ড এবং ৩ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
এ আইনের আওতায় একটি জাতীয় (ন্যাশনাল) তথ্যভাণ্ডার তৈরি করা হবে এবং পযায়ক্রমে সবার ডিএনএ নমুনা ও তথ্য এই তথ্যভাণ্ডারে রাখা হবে। এই ডেটাবেইজের গোপনীয়তা রক্ষার কথাও আইনে প্রস্তাবিত আইনে উল্লেখ করা হয়েছে।
অনুমতি ছাড়া এই তথ্যভাণ্ডারে প্রবেশ করলে দুই বছর কারাদণ্ডে এবং ৩০ হাজার টাকা জরিমানারও বিধান রাখা হয়েছে।
এ আইনের আওতায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি অধিদপ্তর করা হবে। অধিদপ্তরের আওতায় বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি উপদেষ্টা কমিটি হবে, যাতে সদস্য হিসাবে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরাও থাকবেন।
অধিদপ্তর না হওয়া পযন্ত মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি সেল গঠন করে কাযক্রম চালানো হবে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান।
প্রতিটি জীবকোষের নিউক্লিয়াসে থাকে ক্রোমোজোম, যা গঠিত হয় ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড, প্রোটিন ও রাইবোনিউক্লিক এসিড দিয়ে।
এর মধ্যে ডিএনএকে বলা হয় বংশগতির বাহক। অর্থাৎ জীবদেহের গঠন ও ক্রিয়াকলাপ কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে তা এই ডিএনএর জিন বিন্যাসের ওপরই নির্ভর করে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং পরীক্ষাগারে ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের সময় সাধারণত ১৬টি নির্দেশক (এসটিআর মার্কার) ব্যবহার করা হয়।
একজন ব্যক্তির ডিএনএর রাসায়নিক বিশ্লেষণ করলে প্রতিটি নির্দেশকের বিপরীতে দুটি করে পৃথক সংখ্যা
পাওয়া যায়, যার প্রতিটি ওই ব্যক্তির এক একটি বৈশিষ্টের পরিচয় বহন করে। ১৬টি নির্দেশকের ৩২টি সংখ্যা মিলেই তৈরি হয় ওই ব্যক্তির ডিএনএ রূপরেখা।
প্রতিটি মানুষের ক্ষেত্রে এই রূপরেখা হয় আলাদা। ফলে কোনো অপরাধ সংঘটনের স্থানে নমুন হিসাবে পাওয়া রক্ত, ত্বক, দেহের অংশ এমনকি চুল থেকে ডিএনএ পরীক্ষা করেও অপরাধীকে সনাক্ত করা সম্ভব হয়।
আবার দুই ব্যক্তির ডিএনএ রূপরেখা, অর্থাৎ একজনের ডিএনএ পরীক্ষায় পাওয়া ৩২টি সংখার সঙ্গে অন্যজনের সংখ্যা মিলিয়ে দেখলেই বাবা-মা বা আত্মীয়তার সম্পর্ক বলে দিতে পারেন বিজ্ঞানীরা।
ধর্ষণের অভিযোগ বা পিতৃত্ব প্রমাণের ক্ষেত্রে ডিএনএ পরীক্ষার বিষয়টি বাংলাদেশে আগে থেকেই পরিচিত। সম্প্রতি সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির হত্যাকারীদের সনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষার সাহায্য নিয়েছে র্যর্যাব, যদিও কোনো ইতিবাচক ফল তারা এখনো দেখাতে পারেনি।
এছাড়া তাজরীণ ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড ও রানা প্লাজা ধসে নিহতদের পরিচয় সনাক্ত করে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তরের জন্যও ডিএনএ পরীক্ষা ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং পরীক্ষাগারে।
রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, খুলনা ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজেও ডিএনএ ল্যাবরেটরি রয়েছে, যেখানে ডিএনএ স্ক্রিনিং করা যায়। এসব ল্যাবরেটরির কার্যক্রমও ডিএনএ আইনের আওতায় আসবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।