আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ট্রানজিটের নামে দ্বিখন্ডিত তিতাস নদী

বাস্তবতা ফেরী করে বেড়াচ্ছে আমার সহজ শর্তের সময়গুলোকে অদ্বৈত মল্লবর্মণের একটি উপন্যাসের নাম ‘তিতাস একটি নদীর নাম’। জানি না তিনি বেঁচে থাকলে এমন সংবাদে কী মন্তব্য করতেন। অদ্বৈত মল্লবর্মণের সেই তিতাস নদী এখন ট্রানজিটের নামে দ্বিখণ্ডিত। মাঝখান দিয়ে বাঁধ দিয়ে আলাদা করে ফেলা হয়েছে তিতাসকে। অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার মুলা ঝুলিয়ে ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দেওয়ার নামে গলা টিপে হত্যা করা হচ্ছে একটি জলজ্যান্ত নদী! নদীমাতৃক বাংলাদেশের সরকারের নেওয়া পদক্ষেপে ক্ষতিগ্রস্থ নদীবর্তী মানুষেরা।

বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেল ইটিভির করা ‘ট্রানজিট’ নিয়ে তিন পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রথম পর্বে উঠে এসেছে তিতাস নদীর দ্বিখন্ডিত হওয়ার মর্মান্তিক কাহিনী। ভিডিওটি দেখুন। প্রতিবেদনের ভাষ্য এখানে তুলে ধরা হলো- “নিজ চোখে দেখলেও অনেকে হয়তো বিশ্বাস করতে পারবেন না এই চিত্র। ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দিতে প্রায় সাড়ে তিনশ টন ওজনবাহী ভারতীয় ট্রেলার চলাচলের সুবিধা করতে একটি নদীর বুক চিড়ে তৈরি করা হয়েছে এই বিশেষ পথ। আখাউড়া ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংযোগস্থলে তিতাস নদীতে বছর খানেক আগে সিমেন্ট আর বালুর বস্তা ফেলে তৈরি করা হয়েছে এটি।

কারণ নদীর ওপর বিশাল ব্রিজ থাকলেও এতো ভার বহন করার মতো ক্ষমতা তার নেই। ভারতের ট্রানজিট সুবিধা নির্বিঘ্ন হলেও তিতাসের বুকে বাঁধ দেওয়ায় বিরূপ প্রভাব পড়ছে এলাকার লাখ লাখ হেক্টর জমিতে ফলস উৎপাদনে। এরইমধ্যে মাছের অভাবে পেশা বদলাচ্ছেন জেলেরা। তিতাসকে আগলে বেঁচে থাকা নৌকার মাঝিসহ অন্যান্য কর্মজীবী মানুষের জীবনে নেমে এসেছে জীবিকার অনিশ্চয়তা। বাঁধ দিয়ে তিতাস নদীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার কারণ জানতে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডে যাওয়া হলে কথা বলার মতো পাওয়া যায়নি কাউকেই।

জীবিত একটি নদীকে এভাবে দুইভাগ করে ফেলায় হতবাক, বিস্মিত এখানকার মানুষেরা। ” স্থানীয় একজন জানিয়েছেন, রোড হওয়াতে সেই অঞ্চলের কয়েক হাজার হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল । তখন অনেকেই ধান ঘরে তুলতে পারেনি। এছাড়া স্থানীয় কয়েকজনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকেই বাঁধের বিরূপ প্রভাবে কথা জানিয়েছেন।

অদ্বৈত মল্লবর্মণ তার উপন্যাসে গ্রামের দরিদ্র জেলেদের দুঃখ-দুর্দশার কাহিনী ফুটিয়ে তুলেছিলেন। গ্রামের দরিদ্র মানুষের দুঃখ-দুর্দশা সহসাই শেষ হয় না। কেবল ফিরে ফিরে আসে। এতোবছর পরেও জেলেদের দুর্দশার শেষ হলো না। তাদের জীবকার জায়গাটিকে বাঁধ দিয়ে দুইভাগ করে ফেলা হলো।

তাইতো জেলেদের মনে পেশা বদলের শঙ্কা। আর আমাদের মনে? তিতাস মরে গেলে আমাদের মনে কোন শঙ্কা জাগাবে? নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদীগুলো একের পর এক মেরে ফেলা হচ্ছে। অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বড় বড় কথা বলা হচ্ছে। তিতাস নদী মরে গেলে আমাদের কি একটুও ভোগাবে না? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.