ভারতের পালাটানা বিদ্যুেকন্দ্রের ভারী যন্ত্রাংশ ট্রান্সশিপমেন্টে বাংলাদেশের প্রায় চারশ’ কিলোমিটার নৌ ও সড়কপথ কোনো ধরনের শুল্ক ছাড়াই ব্যবহার করা হচ্ছে। ভারতের এই দীর্ঘ ট্রানজিট পথে আশুগঞ্জ বন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত কিছু রাস্তা সংস্কার ও তাদের এসব ভারী যন্ত্রপাতি বহনের সুবিধার্থে কিছু বাইপাস তৈরি ছাড়া এক ইঞ্চি পরিমাণ মৌলিক রাস্তাও তৈরি করেনি ভারত। মূলত অতিরিক্ত ওজনের ১৩০ চাকার বিরাট ট্রেইলার যাতায়াতের জন্য বাংলাদেশ সড়কপথের ব্রিজগুলো ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থাকায় ব্রিজের নিচ দিয়ে ১৯টি ক্ষুদ্র বাইপাস তৈরি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ টন ওজনের গাড়ি নিয়মিত ৬-৭ মাস চলাচল করলে সড়কপথের ব্যাপক ক্ষতি হবে, যা সংস্কারে বাংলাদেশ সরকারকে কয়েকশ’ কোটি টাকা খরচ করতে হবে। এদিকে মালামাল ট্রান্সশিপমেন্টে ভারতীয় ক্রেনসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হলেও বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহারের জন্য কোনো ধরনের শুল্ক দেয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, এই গোটা কার্যক্রমের মধ্যে রাস্তা সংস্কারসহ অন্যান্য কাজে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কিছু বাংলাদেশী শ্রমিকের কাজের সুযোগ সৃষ্টি ছাড়া দেশের আর কোনো প্রাপ্তি নেই। ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুেকন্দ্রের মালামাল পরিবহনে মধ্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চারটি থানার শতাধিক পুলিশকে রাত থেকে ভোর পর্যন্ত পাহারা দিতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ভারত সরকার ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুেকন্দ্রের ভারী যন্ত্রাংশ বিনাশুল্কে পরিবহনের অনুমতি পেয়ে সেদেশের একটি বিশেষজ্ঞ দল বাংলাদেশ সড়কপথ পরিদর্শন করে। বিদ্যুেকন্দ্রের ভারী মালামাল নিয়ে ৮০ থেকে সাড়ে ৩শ’ টন ওজনের ট্রেইলারগুলোর যাতায়াতে আশুগঞ্জ-আখাউড়া সড়কপথের ব্রিজগুলো নিরাপদ নয় বলে ভারত সরকারকে জানিয়ে দেয় বিশেষজ্ঞ দলটি। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের অনুমতিক্রমে আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া পর্যন্ত মোট ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজগুলোর নিচ দিয়ে বাইপাস সড়ক তৈরি করা হয়।
পাশাপাশি সুলতানপুর থেকে আখাউড়া পর্যন্ত কিছু সংস্কার কাজ করা হয়। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে স্থানীয় মোনেম অ্যান্ড কোং এবং ওয়েস্টার্ন ব্রডগ্রিল জয়েন্ট ভেনচার কোম্পানি লিমিটেডের মাধ্যমে এই কাজ করানো হয়। এতে দৈনিক মজুরি বাবদ বাংলাদেশের কিছু শ্রমিক কাজ করে মাত্র। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম জানান, রাস্তা সংস্কার ও বাইপাস নির্মাণে আমাদের কোনো দায়িত্ব ছিল না এবং আমরা এর কোনো তদারকিও করিনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কাস্টমস কর্মকর্তা আমার দেশকে বলেন, কোনো ধরনের শুল্ক ছাড়াই পালাটানা বিদ্যুেকন্দ্রের মালামাল বাংলাদেশে প্রবেশ এবং বাহির সিলমোহর দিতে হচ্ছে।
এরই মধ্যে দু’দফায় ৭টি ট্রেইলারে প্রায় সাড়ে ৫শ’ টন ভারী যন্ত্রাংশ ভারতে প্রবেশ করেছে।
এদিকে ভারতীয় মালামালের নিরাপত্তায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনকে সার্বক্ষণিক উদ্বিগ্ন থাকতে দেখা গেছে। মালামাল পরিবহনের সময় এসএসএফের একটি নিরাপত্তা দলসহ আশুগঞ্জ, সরাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও আখাউড়া থানার পুলিশ বাহিনীকে সারারাত জেগে ট্রেইলারগুলো পারাপারে নিরাপত্তা দিতে হচ্ছে। গাড়িবহরের অতিরিক্ত নিরাপত্তায় স্থানীয় লোকজনকে আতঙ্কিত হতে দেখা গেছে। এসব ট্রেইলার মাত্র ৫ কিলোমিটার গতিতে চলায় রাস্তায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
এদিকে ভারতীয় গাড়িবহর ও আশুগঞ্জ বন্দর জেটিতে জাহাজের অবস্থানের কারণে আশুগঞ্জ বন্দর ব্যবহারকারীরা বিপাকে পড়েছেন। স্থবিরতা নেমে এসেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে।
আশুগঞ্জ বন্দর ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতি, আশুগঞ্জ পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন, আশুগঞ্জ সার ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা জানান, বিশাল বিশাল ভারতীয় ট্রেইলার ও জাহাজগুলোর অনিয়মতান্ত্রিক পার্কিংয়ের কারণে অভ্যন্তরীণ ট্রান্সপোর্ট সার্ভিসে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। বিশেষ করে, পিক মৌসুমে দেশের ৬টি জেলাসহ হাওর অঞ্চলের কৃষকরা সার নিতে এসে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এদিকে আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার রাস্তায় ভারতীয় বিদ্যুেকন্দ্রের ভারী যন্ত্রাংশ নিয়ে মালামাল পরিবহনের কারণে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও সিলেট-কুমিল্লা মহাসড়কের ট্রানজিটে ব্যবহার করা রাস্তাটির অবকাঠামোগত ব্যাপক ক্ষতি হবে বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রকৌশলী আমার দেশকে জানান, ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ টন ওজনের গাড়ি নিয়মিত ৬-৭ মাস চলাচল করলে সড়কপথের যে ক্ষতি হবে তা নির্মাণ করতে বাংলাদেশ সরকারের কয়েকশ’ কোটি টাকা ব্যয় হবে। একইসঙ্গে আমাদের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাপক সমস্যার সম্মুখীন হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।