জীবনের প্রথম ব্লগ লিখতে বসলাম। লিখালিখিতে আমার হাত পাকা না, সিদ্ধহস্ত তো নই বটেই। বলতে গেলে বড় ধরণের কোনও মাধ্যমে এই আমার প্রথম লিখা। আমি মানুষটা অসম্ভব রকমের অগোছালো আর তাই আমার লিখাগুলোও কেন যেন মনে হয় অগোছালো-ই হবে। লিখাটা পোস্ট করার আগে সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, লিখার মধ্যে ভুলগুলো ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন বলে আশা করি।
এই গল্পটা কোনও একটা কাহিনীর মধ্যভাগ। যদি লিখাটা পরে আপনাদের ভালো লেগে থাকে আর মনে হয় যে আমি কিছুটা হলেও লিখতে পারি তাহলে আমি গল্পটার শুরু আর শেষ দিককার ভাগগুলো নিয়ে লিখার চেষ্টা করবো।
যদিও গল্পটা একটা কাহিনীর মধ্যভাগ তবুও এ এটিকে একটা স্বতন্ত্র গল্প হিসেবে ধরেই আমার লিখার শুরু।
গল্পের শুরুটা এরকমভাবে-
অপারেশান থিয়েটার থেকে বের হয়ে এল নীল। এখনো জ্ঞান ফেরেনি ওর।
বেশ কিছুটা সময় পার হল, জ্ঞান ফিরল নীলের। চোখ মেলে তাকাল চারপাশে। ওর মধ্যে অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করছে আজ। এই অনুভূতিটা অন্য সব থেকে আলাদা যা কিনা ও আর কোন দিন ও অনুভব করেনি। কেন-ঈ যেন ওর কাছে আজ পৃথিবীর সব আবেগগুলো তুচ্ছ হয়ে যাচ্ছে।
ও যে আজ নিজেকে সব আবেগের ঊর্ধ্বে নিয়ে গেছে। পৃথিবীর সব আবেগগুলো এসে ওর কাছে মাথা নোয়াচ্ছে।
ও এখন অপারেশান থিয়েটার এর করিডোরটার একপাশে রাখা বেডে শুয়ে নিশির জন্য অপেক্ষা করছে। নিশি ও যে এই পথে-ই থিয়েটার রুমটায় ঢুকবে। ও নিশিকে দেখবে বলে ডাক্তার এর কাছে অনুরোধ করেছিলো অপারেশান হয়ে যাবার পর যাতে করিডোরটার পাশে কিছুক্ষণ থাকতে পারে।
দুনিয়ার কোন ডাক্তার এর পক্ষেও বোধহয় ওর আর্তিতে কান না দেওয়া অসম্ভব ছিল। নীল করিডোরটার দিকে তাকিয়ে আছে আর নিশির আসার জন্য অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষণ পরেই কোন এক নিশিকাব্যের নায়িকার মতো নীলের জীবনের নায়িকা নিশির দেখা মিলল সেই করিডোরটার শুরুতে। নিশিকে অপারেশান থিয়েটার এ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নীল করিডোরটার শেষ প্রান্তে শুয়ে শুয়ে দেখছে নিশির আসা, যেন পৃথিবীটার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে নিয়ে আসা হচ্ছে নিশিকে।
নীল নিশির দিকে অপলক তাকিয়ে রয়, একটা সময় নীলের স্বপ্নের রাজ্যের ঘুমন্ত রাণী নিশি নীলের পাশে চলে আশে। নীল নিশির নিষ্পাপ মুখটার দিকে তাকিয়ে রয়। নীলের খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো নিশির মুখ আর হাতটা ছুয়ে দেবার। কিন্তু নীল তা করলো না। ইচ্ছেকে নিজের মধ্যে কবর দিয়ে দিলো।
নীলের কানে বার বার ভেসে আসছে একটা কথা-ই। নিজে থেকে নেওয়া শপথের কথা। নিশি সুস্থ হয়ে গেলে নীল নিজেকে আর কোনও দিনও নিশির সামনে দাড় করাবে না। তাই করিডোরের এই দেখাটাই নীলের কাছে নিশির সাথে শেষ দেখা।
নিশি আসার আগ পর্যন্ত একটু আগেও সময় যেখানে চলতে চাচ্ছিল না, একটা জায়গায় থমকে ছিল সেই সময়ই এখন দৌড়ে পালাচ্ছে।
জীবনের সুখের আর আবেগময় মুহূর্তগুলো যেন সময়ের লুকোচুরির কাছে হার মানে। দেখতে দেখতে নার্সরা নিশিকে নিয়ে অপারেশান থিয়েটার এ ঢুকে পরে। নীলকেও একটা কেবিনে নিয়ে যাওয়া হয়।
অপারেশান শুরু হয়। সময় গড়াতে থাকে সেকেন্ডের পর সেকেন্ড করে।
নীলের কাছে এক একটা সেকেন্ড এক একটা আলোকবর্ষের মতো মনে হয়। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অপারেশান শেষ হয়। একটা সফল অপারেশান এর সমাপ্তি ঘটে। নিশিকে ওর কেবিনে নিয়ে যাওয়া হয়। নীলের কাছে খবরটা যাবার পর নীলের চোখ বেয়ে পানি চলে আসে।
এই কান্না সুখের কান্না। নীল তার ভালবাসার মানুষটার জীবনের ক্রান্তিকালে পাশে দাড়াতে পেরেছে নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে হলেও। নীলের মনে হচ্ছে আজ ওর জীবনটা সার্থক। ওর চোখে বিজয়ের কান্না, পৃথিবীর সব আনন্দ যেন আজ ওর হাতের মুঠোয়। জীবনটা বোধহয় এমনই।
জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া সুখ আর আনন্দগুলো আজ নীলের কাছে ফিরে এসেছে।
নিশির বড় ভাই এসে নীলকে দেখে যায়। নিশির বড় ভাই এর কাছে নীলকে ধন্যবাদ দেবার মতো কোনও ভাষা ছিল না। নীল নিশির বড় ভাইকে অনুরোধ করে যাতে তিনি যেন এক্ষণই কোন কিছু নিশিকে না বলেন আর এ ও বলে যে নিশির স্বামী যাতে কিছু জানতে না পারে। নিশির বড় ভাই নীলের হাত ধরে কেঁদে দেয়।
এই কান্না হয়ত নীলের ভালবাসার কাছে তার হেরে যাওয়ার কান্না। তিনি নীলের মুখের দিকেও তাকাতে পারছিলেননা।
সন্ধ্যা হয়ে আসছে। এই গোধূলি লগ্নে নীলের মনে পরে যায় ৮-১০ বছর আগের কথাগুলো। প্রায় প্রতিদিনকার মতো নীল ফিরে যায় সেই সব দিনগুলোতে আর নীল কষ্টগুলো নীলকে ঘিরে ধরে।
এই না হলে নীল নামের সার্থকতা। রাত হয়ে যায়। নীল নিশির বড় ভাই এর সাথে মোবাইল এ কথা বলে নিশির খোঁজ খবর নেয়।
রাত গভীর হয়ে যায়। নীল নিশির কথা ভাবতে ভাবতে এক সময় ঘুমিয়ে পরে।
সকালবেলা নার্স এর ডাকে নীলের ঘুম ভাঙ্গে। ঐ ঘুম ঘুম ভাব নিয়েও নীল নার্সকে প্রথমেই জিজ্ঞেস করে নিশি কেমন আছে, নার্স নীলের কথা না বুঝলে নীল নিশির কেবিন নম্বর বলে জিজ্ঞেস করে। নীল নিশির ভাই এর সাথে কথা বলে সকাল সকাল ই হাসপাতাল ছেড়ে চলে যায়। চলে যাবার আগে বলে যায় পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠার আগে যেন নিশি এই কথা না জানে। হাসপাতাল ছেড়ে যাওয়ার আগে নিশির কেবিনের কাছে যেয়ে কিছুক্ষন দাঁড়ায় নীল।
নিশির সাথে হয়ত ওর কোনও দিন ও দেখা হবেনা। হয়তোবা দূরে থেকে শেষ বারের মতো একটু ভালবাসা খোজার চেষ্টা। নীল চলে যায়, নিজেকে নিজের জীবনরুপি নিশির কাছ থেকে দূরে অনেক দূরে সরিয়ে নেয়।
ভালবেসে যায়, নীল তবু ভালবেসে যায়। নিশি যায় নিশি আসে প্রত্যহ কিন্তু নীলের জীবনের নিশি নীলের নয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।